আজমিরীগঞ্জে হাওর রক্ষা বাঁধ কেটে বাঁধের সংস্কার
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৯ জানুয়ারি ২০২৪, ১:৫২:৫৬ অপরাহ্ন
মো. আবু হেনা, আজমিরীগঞ্জ (হবিগঞ্জ) : হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জে ফসল রক্ষা বাঁধের সংস্কার কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলার বদলপুর ইউনিয়নের উদয়পুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)র ফসল রক্ষা বাঁধের সংস্কার কাজে এ অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
বাঁধ সংস্কারে পিআইসি কমিটি গঠন করা হলেও কমিটির সভাপতি এবং সদস্য সচিব কত মিটার বাঁধ কত টাকায় সংস্কার হবে তা জানেন না।
কমিটির সদস্য সচিব বলছেন, কমিটিতে থাকলেও তারা স্থানীয় ইউপি সদস্যের মাধ্যমে কাজ করছেন। আর ইউপি সদস্যদের দাবী বাঁধ সংস্কার কমিটির সভাপতি ও সদস্য সচিবই করছেন।
পাউবো সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরে উপজেলার ৯টি পিআইসি গঠনের মাধ্যমে ১২.৫৫ কিলোমিটার বাঁধ সংস্কারের উদ্যোগ নেয় পাউবো। যার প্রস্তাবিত বরাদ্দ ধরা হয়েছে ৯০ লাখ ৮২ হাজার টাকা।
সরজমিনে বদলপুর ইউনিয়নের উদয়পুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন বাঁধে গিয়ে দেখা গেছে, ৭ লাখ ৭৩ হাজার টাকা ব্যয়ে ৩৮৫ মিটার বাঁধ সংস্কারের কাজ চলছে। টাঙ্গানো হয়নি কোন ধরনের সাইনবোর্ড। সেখানে পাওয়া যায়নি দায়িত্বপ্রাপ্ত কোন কর্মকর্তা কিংবা পিআইসি কমিটির সভাপতি কিংবা সদস্য সচিব।
এসময় আলাপকালে এক্সেভেটর চালক জানান, স্থানীয় ওয়ার্ড সদস্য অরুন তালুকদার তাদের বাঁধের কাজ করার জন্য নিয়ে এসেছেন।
এ সময় দেখা যায় বাঁধের সংস্কার কাজে বাঁধের গোড়ার মাটি কেটে বাঁধেই সেই মাটি ফেলা হচ্ছে। এতে করে বাঁধটি দুর্বল হচ্ছে। ফলে আগামী বর্ষা মৌসুমে এটি ভাঙ্গার সংশয়ে দিন পার করছেন স্থানীয় কৃষক সহ সাধারণ মানুষ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন এলাকাবাসী জানান, বাঁধের গোড়া কেটে যদি বাঁধ মেরামত করা হয়; তবে সেই বাঁধের কি হবে? কাজের পূর্ণ বিবরণী তালিকা সম্বলিত সাইনবোর্ড টানানোর কথা থাকলেও সেখানে কোন ধরনের সাইনবোর্ড টানানো হয়নি। তাই আমরা পরিপূর্ণ কাজ নিয়ে সংশয়ে আছি।
হাওরের ফসল রক্ষা নীতিমালা অনুযায়ী, ৫০ মিটার (১৬৭ ফুট) দূর থেকে মাটি তোলার কথা থাকলেও প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি এই নিয়ম মানছেন না। তারা বাঁধের মাত্র ৮-১০ মিটার দূর থেকেই মাটি তুলেছেন।
এছাড়াও হাওরে বাঁধের কাজের নীতিমালা অনুযায়ী, নভেম্বর মাসের মধ্যে প্রকল্প নির্ধারণ ও পিআইসি গঠনের কাজ শেষ করে ১৫ ডিসেম্বর থেকে প্রকল্পের কাজ শুরু করতে হবে। কাজ শেষ করার কথা আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু অধিকাংশ বাঁধে এখনো কাজের কোন অগ্রগতিই শুরু হয়নি।
উদয়পুর বাঁধের পিআইসি কমিটির সভাপতি নরেশ চন্দ্র দাস ও সদস্য সচিব গোপেশ চন্দ্র দাস জানান, আমরা স্থানীয় ইউপি সদস্য অরুণ কুমার তালুকদারকে দিয়ে কাজ করাচ্ছি। কত মিটার কাজ তা আমরা জানি না।
এদিকে, অরুন কুমার তালুকদার কাজের বিষয়টি অস্বীকার করে জানান, কাজ পিআইসি কমিটির লোকজন করছেন।
বাঁধ সংস্কারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপ-সহকারি প্রকৌশলী মো. একরামুল হক জানান, বিষয়টি আমি অবগত নই। তাই এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারছি না।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার জুয়েল ভৌমিক জানান, এমন হবার কথা নয়। বিষয়টি নিয়ে আমি পাউবোর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সাথে কথা বলবো এবং খোঁজ নিয়ে দেখবো।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) হবিগঞ্জ জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী শামীম হাসনাইন মাহমুদ জানান, বাঁধ সংস্কারে অনিয়মের কোন সুযোগ নেই। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে নির্দিষ্ট সময়ের ভিতরেই সব কাজ শেষ হবে বলে আশা করছি।
তিনি আরো জানান, বাঁধের মাটি কেটে বাঁধ সংস্কারের কোন সুযোগ নেই। পিআইসি গঠনে অনিয়ম হয়ে থাকলে আমরা সরজমিনে গিয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটিকে নিয়ে এই বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।