যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচনে এবারও ইমিগ্রেন্টদের নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ জুন ২০২৪, ৭:০৬:১৭ অপরাহ্ন
মোঃ রহমত আলী, লন্ডন থেকে : বরাবরের মত এবারও ব্রিটেনে নির্বাচনী তৎপরতায় ইমিগ্রেন্ট বা অভিবাসন নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে উঠেছে। অর্থাৎ তাদের মূল জনসংখ্যা বাদে কত সংখ্যক বহিরাগতকে এ দেশে স্থান দেবে এটাই হল এ আলোচনার মূল বিষয়। এ পর্যায়ে যে দল যত কম সংখ্যক ইমিগ্রেন্টদের স্থান দেবে বলে ঘোষণা দেবে সে দল তত বেশী তাদের নিজ দেশের জনগণের মন জয় করতে পারবে। তাই এ নিয়ে এখন রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যেন একটা ঝড় বয়ে যাচ্ছে। তবে, মাইগ্রেশনের ব্যাপারে কট্টর কনজারভেটিভ পার্টি এখন মাইগ্রেশন বান্ধব লেবার পার্টির উপর বেশী করে আক্রমণ করছে এ ইস্যুতে।
সম্প্রতি নির্বাচন উপলক্ষে কনজারভেটিভ পার্টির ইশতেহার প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। এতে তিনি যুক্তরাজ্যে নেট অভিবাসীদের সংখ্যা অর্ধেকে নামিয়ে আনার অঙ্গীকার করেছেন। ১১ জুন সিলভারস্টোনে তিনি এই অঙ্গীকারের কথা বলেন। সাথে সাথে আরও বলেছেন, এই প্রশ্নের কোনও সুস্পষ্ট জবাব নেই লেবার পার্টির কাছে।
সুনাক বলেছেন, তারা বেশ কয়েকটি পরিবর্তনের ঘোষণা দিয়েছেন। যার অর্থ হলো যুক্তরাজ্যে আসতে আগ্রহী এমন ৩ লাখ মানুষ এখন আর উপযুক্ত বিবেচিত হবেন না। সুনাক আরও বলেছেন, তাদের পরিকল্পনা হলো ব্রিটেনে অভিবাসীদের সংখ্যা অর্ধেকে নামিয়ে আনা। যা ২০১৯ সালের চেয়ে বেশি হবে। যুক্তরাজ্যের পরিসংখ্যান কার্যালয় এর তথ্য অনুসারে, ওই বছর আসা অভিবাসীর সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৮৪ হাজার। সুনাক আরও অঙ্গীকার করেছেন, রুয়ান্ডা স্কিমের মাধ্যমে অবৈধ অভিবাসন কমিয়ে আনা হবে, কারণ সীমান্ত সুরক্ষা প্রয়োজন। তার মতে তারা ইমিগ্রেন্ট বিরোধী মার্গারেট থ্যাচার ও নাইজেল লসনের পার্টি। তারা লেবার পার্টির মতো নয়, তারা অর্থের ঝঙ্কারে বিশ্বাসী।
এ ব্যাপারে লেবার পার্টির নেতা স্যার কেয়ার স্টারমার জানিয়েছেন, যদি তার দল সাধারণ নির্বাচনে জয়লাভ করে তবে যুক্তরাজ্যে নেট মাইগ্রেশনের মাত্রা তারাও কমিয়ে আনবেন। সাথে সাথে নাগরিকদের দক্ষতা বাড়ানোর জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবেন, যাতে স্থানীয় কর্মীরা প্রতিষ্ঠানের শূন্যস্থান পূরণ করতে সক্ষম হয়। তবে লেবার নেতা তার প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ না করলেও সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘তার কথার উপর জনগণ আস্থা রাখতে পারেন যে, লেবার পার্টি নিশ্চিত ভাবেই ভবিষ্যতে নেট মাইগ্রেশন কমিয়ে আনবে।’ এর উত্তরে রক্ষণশীল দলের একজন মুখপাত্র বলেন, ‘এ কথায় কেউ বিশ্বাস করেন না যে, কেয়ার স্টারমার অভিবাসন মোকাবেলাকে গুরুত্ব সহকারে নিচ্ছেন। তারা নির্বাচনকে সামনে রেখে শুধু মিষ্টিকথা বলে যাচ্ছেন। কিন্তু তাতে কাজের কাজ কিছুই হবে না।’ এর উত্তরে লেবার পার্টির শ্যাডো হোম সেক্রেটারি ইয়ভেট কুপার বলেন, কনজারভেটিভ সরকার যুক্তরাজ্যের পুরো ইমিগ্রেশন সিস্টেমকে নষ্ট করে ফেলেছে। নতুন করে পুনরুদ্ধারের জন্য এ পার্টি তাদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে যাতে দেশকে খাদের কিনারা হতে টেনে তোলা যায়।
এদিকে অন্য একটি আঞ্চলিক দল এসএনপির রাজনীতিবিদ অ্যালিসন থিউলিস লেবার ও কনজারভেটিভ উভয় দলের সমালোচনা করে বলেন, ‘স্কটল্যান্ডের প্রয়োজনে সঠিক নীতিমালা নিয়ে এগিয়ে আসার পরিবর্তে কেয়ার স্টারমার এবং ঋষি সুনাক উভয়ই একজন আরেকজনের উপর দোষারোপে ব্যস্ত। তারা সমস্ত সমস্যার জন্য অভিবাসীদের দোষী সাব্যস্ত করেছেন। কিন্তু এ অভিবাসীদের নয় বরং সমস্যা ওয়েস্টমিনস্টারে।’
এদিকে. অভিবাসন প্রত্যাশীদের নিয়ে আরও একটি বিষয় বেশ কয়েক বছর যাবৎ আলোচনা চলছে, আর তা হচ্ছে বেশ কিছু আশ্রয়প্রার্থীকে রুয়ান্ডায় পাঠাতে চায় বর্তমান কনজারভেটিভ সরকার। যদিও এ প্রক্রিয়া শুরু হয়েও হয় নাই শুরু। তবুও নির্বাচনী প্রচারের ডামাডোলেও পরিকল্পনাটি বাস্তবায়ন করা হতে পারে। তাই বলা হচ্ছে, ভোটের লড়াইয়ে এই পরিকল্পনা প্রতিবন্ধক হয়ে উঠতে পারে।
বর্তমানে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে স্টুডেন্ট ও কেয়ার ভিসায় যুক্তরাজ্যে এসেছেন অনেকেই। এ ভিসায় শুধু অ্যাপ্লিকেন্টরা আসেননি সঙ্গে নিয়ে এসেছেন ডিপেন্ডেন্টদেরও। তাই যুক্তরাজ্যের শহরগুলোতে বাসস্থান সংকট দেখা দিয়েছে মারাত্মকভাবে। সাথে সাথে এর প্রভাব পড়েছে ব্রিটেনের সবগুলো শহরেই। যারা ডিপেন্ডেন্ট নিয়ে এসেছেন তাদের অবস্থা খুবই বিব্রতকর। অনেককে নিজের স্ত্রী সমেত ব্যাচেলারদের সঙ্গে অনিচ্ছা সত্ত্বেও একত্রে থাকতে হচ্ছে। সাথে সাথে কাজের অভাবে তারা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। অনেকেই কোনো উপায় না পেয়ে এসাইলাম আবেদনের দিকে ঝুঁকছেন। যে কারণে অনেকেই কেয়ার ভিসায় এসে ফেঁসে গেছেন।
একজন ভুক্তভোগী জানান, শতকরা প্রায় ৮০ ভাগ নতুন আগতদের অবস্থা একই। স্টুডেন্ট ভিসায় ও কেয়ার ভিসায় যারা এসেছেন তাদের মধ্যে বেশিরভাগেই এসাইলাম ক্লেইম করাই একমাত্র ভরসা হলেও এ এসাইলাম গ্রান্ট হবে কি-না তারও কোনো গ্যারান্টি নেই।
উল্লেখ্য যে, করোনা পরবর্তীতে ব্রিটেন এখনও অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে উঠতে পারেনি। বহিরাগত জনসংখ্যা বাড়লেও বাড়েনি কর্মসংস্থান। এরই মধ্যে বাংলাদেশ, ইন্ডিয়া, পাকিস্তানসহ বেশ কয়েকটি দেশ থেকে আসা হাজার হাজার অভিবাসীরা চরম সংকটে দিনাতিপাত করে যাচ্ছেন।