জমে ওঠার অপেক্ষায় সিলেটের কোরবানির পশুর হাট
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ জুন ২০২৪, ১২:৫২:৫৪ অপরাহ্ন

নূর আহমদ :
এখনো জমে উঠার অপেক্ষায় সিলেটের কোরবানির পশুর হাট। সাধারণত ঈদের দুই/তিন দিন আগে সিলেটের হাট-বাজারগুলো পুরোপুরি জমে উঠে। এবার এখন পর্যন্ত সেই চিত্র চোখে পড়েনি। অবশ্য আজ শনিবার থেকে পুরোপুরি হাট জমে উঠবে বলে প্রত্যাশা ক্রেতা-বিক্রেতাদের।
অন্যদিকে, গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত বাজারে পর্যাপ্ত গরু উঠেনি। তবে বিক্রেতারা দামও হাঁকছিলেন একটু বেশি। সার্বিক দৃষ্টিতে কেনা-বেচা কম বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, স্থায়ী-অস্থায়ী মিলে ২০টি হাটের অনুমোদন রয়েছে। অবৈধ হাট প্রতিরোধে কঠোর রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
বিভিন্ন হাট ঘুরে দেখা গেছে, হাটে বড় গরুর দাম আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা, মাঝারি গরুর দাম ১ থেকে দেড় লাখ টাকা, ছোট গরুর দাম ৬০ থেকে ৯০ হাজার টাকা। প্রধান হাট কাজিরবাজার ছাড়াও গ্রাম-গঞ্জের অন্যান্য হাটগুলোতেও একই দাম হাঁকা হচ্ছে। দেশের অন্যান্য জেলা থেকে গরু কম আসলেও এবার পর্যাপ্ত গরু বাজারে আসছে। ঈদের আগের দিন পর্যন্ত গরু আসতে থাকবে। সীমান্তের বাইরে থেকে বেশ গরু আসছে বাজারে।
কাজিরবাজার অফিস সূত্রে জানা গেছে, গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত দেশের নওগাঁ, রাজশাহী, মাগুরা, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, দিনাজপুর, যশোর, সুনামগঞ্জ থেকে ব্যবসায়ীরা গরু নিয়ে বাজারে এসেছেন। এবারো তাদের উপস্থিতি রয়েছে। অবশ্য এখন পর্যন্ত দেশের দূর-দূরান্ত থেকে আগত ব্যবসায়ীদের পথে পথে চাঁদা দেয়ার খবর পাওয়া যায়নি।
সরেজমিন বাজার ঘুরে দেখা যায়, যত সময় যাচ্ছে গরু উঠছে কাজিরবাজারে। সারিবদ্ধ গরু নিয়ে ক্রেতার অপেক্ষায় রয়েছেন বেপারীরা। যদিও সিলেটে অতিবৃষ্টির জন্য সৃষ্ট জলাবব্ধতার ভয় অস্বস্তিতে রেখেছে বেপারীদের। তাদের দাবি বাজার এখনো জমে উঠেনি। নিয়মিত ব্যবসায়ী ছাড়াও মৌসুমি গরু ব্যবসায়ীরাও ঈদকে সামনে রেখে গরু নিয়ে এসেছেন বাজারে।
সারিবদ্ধ গরু নিয়ে ব্যবসায়ীরা ক্রেতার অপেক্ষায় রয়েছেন। তেমন একজন ব্যবসায়ী সুনামগঞ্জ থেকে আসা সিরাজ উদ্দিন। দুই সপ্তাহ আগে ৭০টি গরু নিয়ে বাজারে আসেন। গতকাল সোমবার পর্যন্ত তার ২০টি গরু বিক্রি হয়েছে। তার আশা আজ-কালকের মধ্যে বাজার জমে উঠবে।
মাগুরা থেকে গরু নিয়ে আসা শহিদ মিয়া জানান, বৃহস্পতিবার রাতে ১৬টি গরু নিয়ে বাজারে আসেন। এখন পর্যন্ত একটি গরু বিক্রি করেছেন। তিনি বলেন, সিলেটীরা একটু দেরিতে গরু কিনে। তার আশা সব গরু বিক্রি করেই যাবেন।
লোকজন আসলেও দরদাম করে চলে যায় বলে মন্তব্য নাটোরের আইয়ুম আলীর। তিনি প্রতিবছর সিলেটে গরু নিয়ে আসেন। তিনি বলেন, গরু বিক্রি না হলেও তার হতাশা নেই। তিনি জানান, প্রথম দিকে লোকজন বাজারে আসে দরদাম জানার জন্য। এবারো তাই হচ্ছে।
নগরীর টিলাগড়ে অস্থায়ী পশুর হাটে কিছু গরু নিয়ে এসেছেন বেপারী রউফ। তিনি বলেন, ১০টি গরু নিয়ে সিলেট এসেছেন। মাঝে মাঝে দু একজন ক্রেতা আসেন। তবে দাম করেই চলে যান। তার আশা আজ শনিবার থেকে হাট জমবে।
সিলেটের বিশ্বনাথের অলংকারি এলাকার বাসিন্দা রাজিক মিয়া জানান, তার ভাই প্রতিবছর তিনটি গরু কোরবানি দিতেন। এবারো তিনটি গরু কোরবানি দিবেন। গরু কিনতে এসে দেখছেন গরু মালিকরা দাম একটু বেশি হাঁকছেন। তিনি বলেন, দাম ভালো হলে গরু যে কোনসময় কিনে নিবেন।
নগরীর কুমারগাঁও তেমুখি এলাকায় অস্থায়ী পশুর হাটে কথা হয় নগরীর নোয়া খুররমখলা এলাকার বাসিন্দা রফিক মিয়ার সাথে। তিনি বলেন, গতবারের তুলনায় একেকটি গরুর দাম ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা বেশি হাঁকছেন বিক্রেতারা। গত বছর যে গরু ৬০ হাজার টাকায় কেনা গিয়েছিল, সেসব গরু বিক্রির জন্য ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকার নিচে বলছেন না। ইজারাকৃত জায়গায় স্থান সংকুলান না হওয়ায় সড়কে গরু নিয়ে বসতে দেখা যায় বিক্রেতাদের।
সিলেট শহরতলীর শিবেরবাজার একটি স্থায়ী পশুর হাট। যেখানে বিভিন্ন গ্রামগঞ্জের গরু পাওয়া যায়। সেখানকার ব্যবসায়ী কৃষক আব্দুল বারী বলেন, তিনটি গরু রয়েছে। গরুগুলো তার লালন পালন করা। গত দুই দিন ধরে বাজারে নিয়ে আসছেন, কিন্তু কাক্সিক্ষত দাম না পাওয়ায় বিক্রি করেননি।
বিক্রেতারা দাবি করছেন, গরুর খাবার খৈল, ভুষি, খড়, ঘাসের দাম যে হারে বেড়েছে-এর জন্য বিক্রেতারা বাধ্য হয়েই দাম একটু বেশি বলছেন। তবে শেষ পর্যন্ত গরুর দাম চড়া থাকবে না নামবে তা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত সীমান্ত দিয়ে বিপুলসংখ্যক গরু বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।
সিলেটের বৃহৎ পশুরহাট কাজিরবাজারের ব্যবস্থাপক শাহাদাত হোসেন লালন বলেন, বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সমাগম ঘটেছে। যদি রাস্তাঘাটে গরু আসতে কোন বাধা না হয় তাহলে এবার বেচাকেনা ভালোই হবে। তিনি বলেন, কাজিরবাজারে আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে পুলিশ সদস্যরা কাজ করছেন। এছাড়া, পুরো কাজিরবাজার জুড়ে পুলিশের ১৪টি মোবাইল টিম সার্বক্ষণিক কাজ করছে।
অন্যদিকে, সিলেট বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সিলেটে এবার কোরবানির ঈদে ৩ লাখ ৯৪ হাজার ২৫১টি পশুর চাহিদা রয়েছে। তবে বিভাগজুড়ে জবাইয়ের জন্য ৪ লাখ ৩০ হাজার ৩৯৭টি গবাদি পশু প্রস্তুত রয়েছে। উদ্বৃত্ত আছে ৩৬ হাজার ১৪৬টি পশু। সিলেটের হাটগুলোতে গরুর পাশাপাশি ছাগল, ভেড়া, মহিষও রয়েছে।
সিলেট জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ মোবারক হোসেন জানান, সিলেট মহানগরসহ সিলেট মেট্রোপলিটন এলাকায় স্থায়ী ৮টিসহ ২০টি হাট রয়েছে। এর বাইরে কোথাও কোরবানির পশুরহাট বসার অনুমতি নেই। কোথাও অবৈধভাবে হাট বসালে আমরা ব্যবস্থা নেব।
এসএমপির পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) সাইফুল ইসলাম জানান, সিলেট মেট্রোপলিটন এলাকায় স্থায়ী ৮টি, অস্থায়ী ১২টিসহ ২০টি বৈধ পশুর হাট রয়েছে। তিনি বলেন, গতকাল শুক্রবার সুবিদবাজার, পাঠানটুলা, খোজারখলাসহ কিছু এলাকায় অবৈধ হাট বসানোর চেষ্টা চলছিলো, পুলিশ তা প্রতিহত করেছে। তিনি বলেন, ‘ঈদের এই সময়টাতে টাউট-বাটপাররা সাধারণ মানুষকে নানাভাবে হয়রানি করে থাকে।’ এ রকম সন্দেহ হলে পুলিশের সহযোগিতা নেয়ার আহবান জানান তিনি। সাইফুল ইসলাম আরো জানান, স্থায়ী হাটগুলোতে স্থায়ী পুলিশ ও অস্থায়ী হাটগুলোতে পুলিশ, মোবাইলটিমসহ সাদা পোশাকধারী পুলিশ কাজ করছে। তিনি বলেন, নগরীতে কোন অবৈধ হাট বসতে দেয়া হবে না।