ওসমানীনগরে শ্বশুর বাড়ি থেকে জামাইর লাশ উদ্ধার
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ জুন ২০২৪, ১২:৫৮:১১ অপরাহ্ন
ওসমানীনগর (সিলেট) থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা : ওসমানীনগরে শ্বশুর বাড়ি থেকে গলা ও পেট কাটা অবস্থায় তিন সন্তানের জনক ছায়েদ মিয়ার (৪৫) লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার ভোরে উপজেলার বুরুঙ্গা ইউনিয়নের কামারগাঁও গ্রামের মৃত মতিন মিয়ার বাড়ি থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। এসময় ধারালো অস্ত্রের আঘাতে গুরুতর আহত ছায়েদের স্ত্রী শাহানা আক্তার পলিকে উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নিহত ছায়েদ গোয়ালাবাজার ইউনিয়নের জহিরপুর গ্রামের মৃত আব্দুল ছত্তারের ছেলে।
নিহত ছায়েদের সন্তান ও শাশুড়ির দাবি গভীর রাতে ছায়েদ ধারালো দা দিয়ে কুপিয়ে স্ত্রীকে আহত করার পর নিজের গলা ও পেট কেটে আত্মহত্যা করেছে।
জানা গেছে, প্রায় ১০ বছর পূর্বে কামারগাঁও গ্রামের মৃত মতিন মিয়ার মেয়ে শাহানা আক্তার পলিকে বিয়ে করেন ছায়েদ। তাদের সংসারে তিনটি কন্যা সন্তান রয়েছে। প্রায় ৭ বছর যাবৎ স্ত্রী সন্তান নিয়ে শ্বশুর বাড়িতে বসবাস করে আসছেন তিনি। বিয়ের পর থেকেই স্বামী স্ত্রীর মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া হতো। বিভিন্ন সময় স্থানীয়রা আপোস মীমাংসায় ঝগড়া নিষ্পত্তি করে দিতেন। গত সোমবার রাতে ছোট মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে শ্বশুর বাড়ির এক কক্ষে স্বামী-স্ত্রী ও ছোট মেয়ে ঘুমাচ্ছিল এবং পাশের কক্ষে তার শাশুড়ি ও দুই সন্তান ঘুমাচ্ছিল। ভোর ৪টার দিকে চিৎকার শুনে শাশুড়ি এগিয়ে গিয়ে গলা ও পেট কাটা অবস্থায় জামাতার নিথর দেহ এবং পেট ও কান কাটা অবস্থায় মেয়ে পলিকে দেখতে পান শাশুড়ি সৈয়দা বেগম । এরপর খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে লাশ উদ্ধার করে সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে ময়না তদন্তের জন্য ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে। একই সাথে আহত স্ত্রী পলিকে চিকিৎসার জন্য সিলেট ওসমানী হাসপাতালে পাঠানো হয়।
এদিকে, নিজে নিজে পেট কেটে নাড়িভুরি বেড়িয়ে যাওয়ার পর গলা কাটা অথবা গলা কাটার পর পেট কেটে কীভাবে আত্মহত্যা করতে পারে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকে। যার কারণে ঘটনাটি রহস্য তৈরি করেছে। তবে, কীভাবে ঘটনাটি ঘটেছে তা ময়না তদন্তের রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত বলা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে পুলিশ।
নিহত ছায়েদের বড় মেয়ে সাইরা জান্নাত মাইশা (৮) জানায়, তার পিতা-মাতার মধ্যে ঝগড়া লেগেই থাকতো। গতকাল সোমবার ভোর ৪টার দিকে চিৎকার শুনে গিয়ে দেখি আমার বাবার পেট কাটা এবং দা দিয়ে নিজে নিজের গলা কেটে ফেলছেন। মাকে জড়িয়ে দেখি অনেক রক্ত।
শাশুড়ি সৈয়দা বেগম বলেন, চিৎকার শুনে ঘরে ঢুকে দেখি অন্ধকার। লাইট নিয়ে গিয়ে দেখি মেয়ের জামাইয়ের গলা ও পেট কাটা অবস্থায় নিথর দেহ পড়ে আছে এবং মেয়ের অবস্থাও খারাপ।
নিহতের ছোট ভাই জুয়েল মিয়া বলেন, প্রায় ৭ বছর ধরে আমার ভাই স্ত্রী সন্তান নিয়ে শ্বশুর বাড়িতে থাকেন। স্বামী স্ত্রীর মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া হতো। গতকাল ভোরে স্থানীয় এক ব্যক্তির মাধ্যমে খবর পেয়ে আমরা সেখানে ছুটে যাই। এমন মর্মান্তিক ঘটনা কীভাবে ঘটেছে তা আন্দাজ করতে পারছি না।
লাশ উদ্ধারকারী তদন্ত কর্মকর্তা ওসমানীনগর থানার এসআই সুবিনয় বৈদ্য বলেন, লাশের গলা অন্তত ৮ ইঞ্চি কাটা রয়েছে। পেটের কাটা অংশ দিয়ে নাড়িভুরি বেড়িয়ে গেছে। ময়না তদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা সম্ভব হবে। পুলিশ এব্যাপারে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি।