কোম্পানীগঞ্জে পাথরবোঝাই ট্রাকসহ তিন শ্রমিক আটকের প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ জুন ২০২৪, ১:১৪:২৯ অপরাহ্ন
কোম্পানীগঞ্জ (সিলেট) থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা : কোম্পানীগঞ্জে ট্রাকে করে পর্যটন স্পটের সাদা পাথর পরিবহনকালে তিন শ্রমিককে আটক করেছিল পুলিশ। এর প্রতিবাদে গতকাল মঙ্গলবার ছয় ঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধ করেছেন পরিবহন শ্রমিকরা। সকাল ৬টার দিকে সিলেট-ভোলাগঞ্জ মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি পয়েন্টে সড়কের মাঝে ট্রাক আড়াআড়িভাবে রেখে যান চলাচল বন্ধ করে দেন শ্রমিকরা। এসময় তারা আটক শ্রমিকদের মুক্তি ও থানার ওসি গোলাম দস্তগীর আহমদের প্রত্যাহার দাবি করে বিক্ষোভ করেন।
সড়ক অবরোধে মহাসড়কের দুই পাশে যানবাহন আটকে পড়ে ভোগান্তিতে পড়ে মানুষ। পরিবহন শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করার পর দুপুর ১২টার দিকে অবরোধ প্রত্যাহার করা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাদাপাথর পর্যটন স্পটের সাদাপাথর চুরি করে ট্রাক দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে এমন খবর পেয়ে গত সোমবার রাত সাড়ে ১১টায় সিলেট-ভোলাগঞ্জ সড়কের হাইটেকপার্ক এলাকায় অভিযান চালায় পুলিশ। এসময় পাথরবাহী একটি ট্রাকসহ তিনজনকে আটক করা হয়। পরে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে আদালতে পাঠানো হয়। আটককৃতরা হলেন, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার তেলিখাল গ্রামের সাইদুল হকের ছেলে মোঃ আব্দুল্লাহ, গৌরিনগর গ্রামের আক্রম আলীর ছেলে আবুল হোসেন ও খাগাইল গ্রামের জমির উদ্দিনের ছেলে এনামুল হক।
এ ঘটনার জেরে সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ-ভোলাগঞ্জ মহাসড়কের বউবাজার, টুকেরবাজার, লাছুখাল, থানাবাজার ও বর্নি এলাকায় ট্রাক আড়াআড়িভাবে রেখে যান চলাচল বন্ধ করা হয়। পরে উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও কোম্পানীগঞ্জ থানার পুলিশ কর্মকর্তারা পরিবহন শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে দুপুর ১২টায় অবরোধ প্রত্যাহার করে নেন শ্রমিকেরা।
কোম্পানীগঞ্জ শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি কবির আহমদ বলেন, ভোলাগঞ্জ থেকে যারা পাথর চুরি করে পুলিশ তাদের আটক করে না। উল্টো আমাদের ট্রাকচালক ও শ্রমিক যারা ভাড়ায় মালামাল পরিবহন করেন তাদের আটক করেছে। আটক শ্রমিকদের মুক্তি এবং মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে সড়ক অবরোধ করা হয়েছে।
আটককৃতরা পর্যটন স্পটের পাথর পরিবহন করছিল কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পাথরগুলো তিন মাস আগে কাটাখালে স্টক করা হয়। এগুলো পর্যটন স্পটের পাথর না’ বলে দাবি করেন তিনি।
এ বিষয়ে কোম্পানীগঞ্জ শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান বলেন, প্রশাসনকে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেওয়া হয়েছে। দাবি মেনে নেওয়া না হলে বৃহস্পতিবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য অবরোধ ডাকা হবে।
এদিকে, আটককৃতদের মধ্যে এনামুল হক একজন স্কুলছাত্র বলে দাবি করা হচ্ছে। এ বিষয়ে কোম্পানীগঞ্জ ছাত্রপরিষদের সভাপতি হেলাল আহমদ বলেন, ‘খোঁজ নিয়ে জেনেছি এনামুল দলইরগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির একজন নিয়মিত শিক্ষার্থী। দরিদ্র পরিবারের হওয়ায় পড়ালেখার ফাঁকে শ্রমের বিনিময়ে উপার্জন করত। পুলিশ তাঁকেও মামলায় জড়িয়েছে।
অপরদিকে পুলিশ বলছে, পর্যটন স্পটের সাদাপাথর চুরি রোধে পুলিশ কঠোর অবস্থানে আছে। পাথর পরিবহনকালে পুলিশ যাদের পেয়েছে তাদেরই আটক করেছে। গত রোববারও রাত ১২টায় ওসি গোলাম দস্তগীর আহমদের নেতৃত্বে পুলিশের একটি টিম ধলাই নদীর ৫ নম্বর পিলার এলাকায় অভিযান চালিয়ে পাথর চুরির অভিযোগে সুরুজ ও বাবুল নামে দুই ব্যক্তিকে আটক করেছে। এসময় পাথরবোঝাই একটি নৌকা জব্দ করা হয়। পরে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
এ বিষয়ে কোম্পানীগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মনিরুজ্জামান খান বলেন, সাদাপাথর থেকে চোরাই পাথর নিয়ে যাওয়ার অভিযোগে পাথরবোঝাই ট্রাকসহ ওই তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে পরিবহন শ্রমিকেরা অবরোধ করে গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিদের ছেড়ে দেওয়ার দাবি করেন। পরে শ্রমিক নেতাদের বিষয়টি বুঝিয়ে বলা হয়েছে। আইনি প্রক্রিয়ায় আদালতের মাধ্যমে গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিরা জামিন পাবেন, এমনটি বোঝানোর পর অবরোধ প্রত্যাহার করেছেন শ্রমিকেরা।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুনজিত কুমার চন্দ জানান, সড়ক অবরোধের খবর পেয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান এবং পুলিশসহ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হই।
কি কারণে অবরোধ হলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, পুলিশ কর্তৃক সাদাপাথর ও আটককৃতদের মুক্তির দাবিতে এই অবরোধ করে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা। তাদেরকে বুঝালে অবরোধ তুলে নেয় তারা।