৯ তলা ভবন, ৬ ফ্ল্যাট ও সম্পত্তি জব্দের আদেশ
দুদকের জালে সিলেটের কাস্টমস কমিশনার এনামুল
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৫ জুলাই ২০২৪, ৪:৫০:৪০ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : সিলেটের কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনার মোহাম্মদ এনামুল হকের ঢাকার ৯ তলা ভবন, ছয়টি ফ্ল্যাট ও ৭১ শতাংশ স্থাবর সম্পদ জব্দের (ক্রোক) আদেশ দিয়েছেন আদালত।
গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। জব্দ হওয়া সম্পত্তির মধ্যে রয়েছে-ঢাকা ও গাজীপুরে ৭১ শতাংশ জমি এবং ঢাকার গুলশানে তিন কাঠা জমির ওপর ৯ তলা ভবন, ঢাকার মোহাম্মদপুরে চারটি, গুলশানে একটি এবং বাড্ডায় একটি ফ্ল্যাট।
এদিকে, সিলেট বিভাগের ৯টি শুল্ক স্টেশন থেকে কাস্টমস কমিশনারের নামে প্রতিদিন কয়েক লক্ষ টাকা উঠানোর অভিযোগ রয়েছে। বিশিষ্টজনেরা বলছেন, রাজস্ব খাতের দুর্নীতি এখন প্রমাণিত। এ খাতের নি¤œ পর্যায়ের দুর্নীতি তদন্তের তাগিদ তাদের।
‘এনামুল তার মালিকানাধীন ও স্বার্থ সংশ্লিষ্ট স্থাবর সম্পতি হস্তান্তরের চেষ্টা করছেন’
দুদকের পক্ষে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপ-পরিচালক ফারজানা ইয়াসমিন গতকাল আদালতে তার সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের আবেদন করেন। দুদকের আইনজীবী প্রসিকিউটর মোশারফ হোসেন কাজল তা আদালতে উপস্থাপন করে শুনানি করেন।
জব্দের আবেদনে বলা হয়, ৯ কোটি ৭৬ লাখ ৯৭ হাজার ১০৭ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অপরাধে আসামি মোহাম্মদ এনামুল হকের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪-এর ২৭/১১ ধারায় মামলা দায়ের করা হয়। তদন্তকালে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায় যে, আসামি তার মালিকানাধীন ও স্বার্থ সংশ্লিষ্ট স্থাবর সম্পতি হস্তান্তরের চেষ্টা করছেন, যা করতে পারলে মামলার ধারাবাহিকতায় আদালতে চার্জশিট দাখিল, আদালতের বিচার শেষে সাজার অংশ হিসেবে অপরাধলব্ধ আয় থেকে অর্জিত সম্পত্তি সরকারের অনুকূলে বাজেয়াপ্তকরণসহ সব উদ্দেশ্যই ব্যর্থ হবে। তাই মামলার তদন্ত সম্পন্ন করে আদালতে চার্জশিট দাখিলের পর আদালতের বিচার শেষে সরকারের অনুকূলে সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের সুবিধার্থে তথা সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার স্বার্থে নিম্নে বর্ণিত স্থাবর সম্পত্তিসমূহ ক্রোক করা একান্ত প্রয়োজন।
২০২২ সালের নভেম্বর থেকে এনামুল হকের বিরুদ্ধে অবৈধ উপায়ে সম্পদ অর্জনের অভিযোগে অনুসন্ধানে নামে দুদক। একই বছরের নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ২০২৩ সালের ৩১ জুলাই দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে সংস্থাটির সহকারী পরিচালক মাহবুবুল আলম বাদী হয়ে এনামুল হকের বিরুদ্ধে মামলাটি করেন।
কাস্টমস কমিশনারের নামে সিলেটের বিভিন্ন স্টেশন থেকে আদায় হয় কয়েক লাখ টাকা
২০২৩ সালের ৫ সেপ্টেম্বর সিলেটের কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনার হিসেবে যোগ দেন মোহাম্মদ এনামুল হক। ২০২২ সাল থেকে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলেও ২০২৩ সালের ৫ সেপ্টেম্বর সিলেটের কাস্টমস কমিশনার হিসেবে যোগ দেন এই কর্মকর্তা। দুর্নীতির অভিযোগ উঠার পরও সিলেট বিভাগের ৯টি শুল্ক স্টেশন থেকে কমিশনারের নামে প্রতিদিন টাকা উঠানো হতো বলে কয়েকজন আমদানিকারক নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিলেটের ডাককে জানিয়েছেন। বিশেষ করে ভারত থেকে বিভিন্ন শুল্ক স্টেশন দিয়ে যেসব ট্রাক ঢুকতো, সব ট্রাক প্রতি কমিশনারের নামে টাকা আদায় করা হতো আমদানিকারকদের কাছ থেকে। তামাবিল, জকিগঞ্জ, শেওলা, চাতলাপুর, জুড়ি, ভোলাগঞ্জ, বাল্লা, চেলা ও ইছামতি এবং বড়ছড়া, বাগলি ও চারাগাঁও-স্টেশনে কর্মরত কাস্টমস কর্মকর্তাদের মাধ্যমে এ অর্থ আদায় হয়। টাকার অংকে প্রতিদিন œ বিভিন্ন শুল্ক স্টেশন থেকে অর্থ আদায়ের পরিমাণ ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে জনৈক আমদানিকারক জানান।
সিলেটের একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিলেটের ডাককে বলেন, ইনকাম ট্যাক্স অফিস থেকে আয়করদাতাদের ফাইল সংগ্রহ করে কাস্টমস বিভাগ বড় ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে ছোট ব্যবসায়ীদের কাছে চিঠি ইস্যু করতো। ক্ষেত্র বিশেষে এসব ফাইল অডিটে ফেলে দিত। মূলত অডিটের পেছনে ছিল ‘উৎকোচ আদায়ের কুমতলব’। অনেক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে জরিমানা হিসেবে যে অর্থ আদায় করা হতো, সে অর্থের খুব কমই জমা হতো সরকারি কোষাগারে। বেশিরভাগ অর্থ ঢুকে কাস্টমস কমিশনারসহ অন্য কর্মকর্তাদের পকেটে। বড় বড় ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে পান দোকানদাররাও পর্যন্ত তাদের হয়রানির শিকার বলে ওই ব্যবসায়ী অভিযোগ করেন।
সিলেটের ডাক-এর পক্ষ থেকে এ বিষয়ে সিলেটের কাস্টমস কমিশনার এনামুল হকের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
রাজস্ব খাতের নি¤œ পর্যায়ের দুর্নীতি খুঁজে বের করার তাগিদ
সিলেট জেলা বারের সাবেক সভাপতি, বিশিষ্ট আইনজীবী এমাদ উল্যাহ শহিদুল ইসলাম শাহীন গতরাতে সিলেটের ডাককে জানান, রাজস্ব খাতে বর্তমানে একের পর এক দুর্নীতি বের হচ্ছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, দুর্নীতির জাল উপর থেকে নিচ পর্যন্ত বিস্তৃত। কাজেই, এ খাতের নি¤œ পর্যায়ের দুর্নীতি তদন্ত করে বের করা দরকার। এ খাতের প্রত্যেকটি দুর্নীতি সুষ্ঠু তদন্ত করে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের তাগিদ এ আইনজীবীর।