দেশবিদেশের শিক্ষার্থী দেখে গর্বে বুক ভরে যায় : দানবীর ড. রাগীব আলী
‘দানবীর রাগীব আলী ছিলেন বলেই রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ দেশের শীর্ষ কলেজ’
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৫ জুলাই ২০২৪, ৫:০০:২৪ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : চিকিৎসাবিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের কাছে জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়া যেন স্বপ্নের মতো। এই কলেজে ভর্তি হতে পেরে যেন আনন্দে ভাসছে তারা। অভিভাবকদের কাছেও সন্তানকে চিকিৎসক হিসেবে গড়ে তোলার এক অনন্য প্রতিষ্ঠান এই কলেজ। দেশ-বিদেশের শিক্ষার্থীদের পাশে আছেন একজন দানবীর ড. রাগীব আলী। যিনি চা বাগানের প্রাকৃতিক মনোরম পরিবেশ, কলেজের সঙ্গে ৮শ’ শয্যার হাসপাতাল, সুবিশাল খেলার মাঠসহ সুশিক্ষার সকল পরিবেশ ও সুযোগের সন্নিবেশ ঘটিয়েছেন। যার জন্য জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ দেশের দক্ষ চিকিৎসক গড়ার এক অনন্য প্রতিষ্ঠান।
গতকাল বৃহস্পতিবার জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজের ৩০তম ব্যাচের রিসিপশন এন্ড হুয়াইট কোট ছিরিমনি অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন।
মেডিকেল কলেজের লেকচার গ্যালারিতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর অধ্যাপক ডা. এ এইচ এম এনায়েত হোসেন। সম্মানিত অতিথি ছিলেন-জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান, অসংখ্য শিক্ষা ও সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা উপমহাদেশের প্রখ্যাত দানবীর ড. রাগীব আলী। সভাপতিত্ব করেন জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. আবেদ হোসেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. এ এইচ এম এনায়েত হোসেন বলেন, দেশের প্রাইভেট মেডিকেল কলেজের মধ্যে অন্যতম শীর্ষ কলেজ জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ। যার সুনাম এখন সর্বত্র । শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টা আজ এই কলেজকে অনন্য উচ্চতায় আসীন করেছে। তিনি বলেন, বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হলেও এখানে যা আছে, অনেক সরকারি মেডিকেল কলেজেও তা নেই। যেমন প্রাকৃতিক পরিবেশ শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় মনোযোগী করে তোলার অন্যতম উপাদান। নবীন শিক্ষার্থীদের এই পরিবেশ ও সুযোগকে কাজে লাগাতে হবে।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে অধ্যাপক ডা. এ এইচ এম এনায়েত হোসেন আরো বলেন, তোমাদের জন্য প্রতিটি মুহুর্ত গুরুত্বপূর্ণ। হেলায় হেলায় সময় নষ্ট করা যাবে না। নিজের স্বপ্নের বাস্তবায়ন, বাবা-মার স্বপ্নের প্রতিফলন এবং দেশ ও জাতির প্রত্যাশা পূরণে দক্ষ ও মানবিক চিকিৎসক হিসেবে তৈরি করতে হবে। তিনি বলেন, জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল দেশের প্রথম সারির শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এখানে ভর্তির সুযোগ পেয়ে নিশ্চয়ই নবীন শিক্ষার্থীরা নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছে। তিনি আরো বলেন, নবীন শিক্ষার্থীদের মনে রাখতে হবে শিক্ষকরা কেবল পথ দেখিয়ে দেবেন, এরপর নিজেই নিজের পথ তৈরি করে নিতে হবে।
জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল প্রসঙ্গে অধ্যাপক ডা. এ এইচ এম এনায়েত হোসেন আরো বলেন, একজন দানবীর রাগীব আলী ছিলেন বলেই এই মেডিকেল কলেজ দেশের প্রাইভেট মেডিকেল কলেজের মধ্যে অন্যতম শীর্ষ কলেজ হতে পেরেছে। তিনি বলেন, দানবীর ড. রাগীব আলী একজন নন মেডিকেল পার্সন, অথচ তাঁর চিন্তা ভাবনা সুদূরপ্রসারি। দেশ-বিদেশে দক্ষ চিকিৎসক সৃষ্টিতে দানবীর ড. রাগীব আলীর অবদান অনন্য। তাঁর দীর্ঘায়ু কামনা করছি।
সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা, উপমহাদেশের প্রখ্যাত দানবীর ড. রাগীব আলী বলেন, দেশ সেরা শিক্ষকরা এখন এই মেডিকেল কলেজে। যারা নিজেদের সঁপে দিয়ে দক্ষ চিকিৎসক তৈরি করছেন। নবীন শিক্ষার্থীদের সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের আগামীদিনের জন্য প্রস্তুত করতে হবে। তিনি বলেন, আমি জানি এই কলেজে ভর্তির সুযোগ পেতে গিয়ে তোমাদের ভর্তি যুদ্ধে নামতে হয়েছিলো। তোমরা সফল হয়েছো। এমবিবিএস পাশ করে এই সফলতার চূড়ান্ত রূপ দিতে হবে। তখনি আমি আনন্দিত হবো। আমার স্ত্রী এই কলেজের অন্যতম স্বপ্নদ্রষ্টা বেগম রাবেয়ার আত্মা শান্তি পাবে।
রাগীব-রাবেয়া ফাউন্ডেশনসহ অসংখ্য মানবতাবাদী প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা দানবীর ড. রাগীব আলী আরো বলেন, আজ যখন দেশ ছাড়িয়ে বিদেশ থেকে শিক্ষার্থীরা জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজে পড়তে আসে; তখন গর্বে বুক ভরে যায়। তখনই ভাবি আমার চেষ্টা সফল হয়েছে। বিশেষ করে নেপাল ও ভারত থেকে যেসব শিক্ষার্থী এসেছেন, তাদের এবং তাদের অভিভাবকদের জানাই অভিনন্দন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন,সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বেসিক সায়েন্স এন্ড প্যারাক্লিনিক্যাল সায়েন্স ফ্যাকাল্টির ডীন ও সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. শিশির রঞ্জন চক্রবর্তী। আরো বক্তব্য রাখেন, রাগীব-রাবেয়া ফাউন্ডেশনের ট্রেজারার আব্দুল হাই, জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. একে এম দাউদ, হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. তারেক আজাদ। অভিভাবকদের মধ্য থেকে বক্তব্য রাখেন সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক বিশিষ্ট শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. এ এইচ এম খায়রুল বাশার। স্বাগত বক্তব্য রাখেন,সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডাঃ নুরুল কাইয়ুম মুসাল্লিন। বক্তব্য রাখেন ডার্মাটোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. শামীমা আখতার।
অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন মেডিকেল কলেজের লেকচারার রাজিব আহসান সুমন, ২৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান ও ২৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী নীলিমা নওরীন নীলা । নবীন বিদেশি শিক্ষার্থীদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন, নেপালী শিক্ষার্থী দিওয়াশ নিওপানে ও ভারতীয় শিক্ষার্থী নাটালি জি ওয়ার্জারি এবং বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের পক্ষে আইনুন ফারহান যাহরা। শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন ২৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আরাফ আব্দুল্লাহ।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বেসিক সায়েন্স এন্ড প্যারাক্লিনিক্যাল সায়েন্স ফ্যাকাল্টির ডীন অধ্যাপক ডা. শিশির রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হলেও সরকারি মেডিকেল কলেজ থেকে কোন অংশে কম নয়। যারা এই কলেজে শিক্ষার সুযোগ পেয়েছেন; তারা ভাগ্যবান। নবীন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি তোমরা অনেক মেধাবী, নিয়মিত অধ্যবসায়ের মাধ্যমে নিজেকে চিকিৎসক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পারবে। বিশেষ করে দক্ষ শিক্ষকমন্ডলী এই কলেজের জন্য নিয়ামক। তোমাদের এই সুযোগকে কাজে লাগাতে হবে।
রাগীব-রাবেয়া ফাউন্ডেশনের ট্রেজারার আব্দুল হাই বলেন, জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল আমার মা-বাবার একটি স্বপ্নের প্রতিষ্ঠান। এই কলেজের ধুলিকনায় মিশে রয়েছে আমার মায়ের স্মৃতি। সকলে আমার মায়ের জন্য দোয়া করবেন। বাবার সুস্থ থাকার জন্য দোয়া করবেন।
উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. একে এম দাউদ নবীন শিক্ষার্থীদের কলেজের একাডেমিক নানা বিষয়ে ধারণা দেন। তিনি বলেন, এই কলেজে রয়েছে একাডেমিক শিক্ষার পাশাপাশি সহ-শিক্ষার এক মনোরম পরিবেশ। তোমাদের সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নিজেকে একজন মানবিক চিকিৎসক হিসেবে গড়ে উঠতে হবে। তিনি বলেন, এই কলেজের শৃঙ্খলা হচ্ছে প্রধানতম শক্তি। সেটা মেনে চলতে হবে। একদিন দেখবে চিকিৎসক হয়ে নিজের এবং মা-বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছো।
হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. তারেক আজাদ বলেন, তোমরা এই কলেজের একেকটি ফুলের কলি। তোমাদের ফুটতে হবে- এই সমাজকে সুশোভিত করার জন্য। মানুষতো অবশ্য হতে হবে, তবে ভালো মানুষ হতে হবে। সুদক্ষ শিক্ষকমন্ডলী তোমাদের পাশে রয়েছেন।
সভাপতির বক্তব্যে জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. আবেদ হোসেন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, নিয়মিত অধ্যবসায় ও শৃঙ্খলা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নবীন শিক্ষার্থীদের সেই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ, এ প্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলার প্রশ্নে কোন ছাড় নেই। তিনি আরো বলেন, দানবীর ড. রাগীব আলী ও মরহুমা বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরী প্রাকৃতিক পরিবেশে পাঠদানের পরিবেশ তৈরি করে দিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের তা গ্রহণ করতে হবে।
উল্লেখ্য, এবার এমবিবিএস কোর্সে জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজে ৪১ জন বিদেশি শিক্ষার্থীসহ মোট ১৩০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে নেপালের ২০ জন ও ভারতের ২১ জন রয়েছেন। বাকিরা সবাই বাংলাদেশি।