ভারি বৃষ্টিপাত বন্ধ হলেও বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত
ডাইক ভেঙে জকিগঞ্জের পরিস্থিতি ভয়াবহ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ জুলাই ২০২৪, ১:০৬:৫২ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : ভারি বৃষ্টিপাত বন্ধ হলেও সিলেট ও সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। বন্যার পানি স্থিতিশীল অবস্থায় থাকায় জলাবদ্ধতার কবলে পড়েছেন মানুষজন। টিউবওয়েল ডুবে থাকায় অনেক এলাকায় বিশুদ্ধ পানির সংকট বিরাজ করছে।
এদিকে, তিনদিন পর সিলেট পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার নিচে নেমেছে। তবে এখনো বিপদসীমার উপরে সুরমার কানাইঘাট পয়েন্টের পানি। এছাড়া, এখনো বিপদসীমার উপরে রয়েছে কুশিয়ারার সবকটি পয়েন্টের পানি। সীমান্তবর্তী জকিগঞ্জ উপজেলার চারটি ডাইক দিয়ে পানি প্রবেশ করায় জকিগঞ্জ উপজেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। সেখানে গ্রামের পর গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। দুর্ভোগে রয়েছেন সেখানকার লক্ষাধিক মানুষ। কুশিয়ারা নদীর ডাইক ভেঙে বানের পানি লোকালয়ে ঢুকে ভেসে গেছে বিপুলসংখ্যক পুকুর ও ফিশারির মাছ। তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাটসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, জকিগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস স্টেশন, জকিগঞ্জ-সিলেট ও শেওলা-জকিগঞ্জ সড়কের একটি অংশ।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে, গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর ৫টি পয়েন্টের পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সকাল পর্যন্ত এই দুই নদীর ৬টি পয়েন্টের পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টের পানি বিপদসীমার ৬৪ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া, কুশিয়ারার পানি আমলশীদ পয়েন্টে ১৩০ সে.মি, শেওলা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও শেরপুর পয়েন্টে পানি ৩৮, ১০১ ও ৪ সে.মি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে, কমেছে লোভা, সারি ও ডাউকি নদীর পানি।
জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, জেলার ১৩ উপজেলায় ১০১টি ইউনিয়ন বন্যায় প্লাবিত। ১ হাজার ১৮০টি গ্রামের ৬ লাখ ২৬ হাজার ১৩৮ জন মানুষ বন্যায় আক্রান্ত। জেলার ৬৫০টি আশ্রয়কেন্দ্রে এখন পর্যন্ত ৯ হাজার ৩২৯ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন।
কোম্পানীগঞ্জ : কোম্পানীগঞ্জ থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, কোম্পানীগঞ্জের ধলাই নদীর পানি বিপদসীমার নিচে নেমেছে। ফলে নামতে শুরু করেছে বন্যার পানি। উপজেলা পরিষদ মাঠ, থানা কম্পাউন্ড, থানাবাজার, ইউনিয়ন ভূমি অফিস থেকে পানি নেমে গেছে। তবে, উপজেলার নিম্নাঞ্চলের রাস্তাঘাট এখনও পানিতে নিমজ্জিত আছে। নৌকায় চলাচল করছেন বানভাসিরা। শিমুলতলা গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দারা পানির মধ্যে বাস করছেন। মুজিবনগরের বাসিন্দারা আছে আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে।
এদিকে, হাঁস-মুরগি ও গবাদিপশু নিয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন বানভাসিরা। গো-খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। টিউবওয়েল ডুবে থাকায় অনেক এলাকায় বিশুদ্ধ পানির অভাবে ভুগছেন লোকজন।
উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, তৃতীয় দফা বন্যায় উপজেলার ৯১টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। তাদের জন্য ৩৫টি আশ্রয়কেন্দ্র প্র¯ুÍত করা হলেও দুইটি কেন্দ্রে ৩৯ জন আশ্রয় নিয়েছেন। বন্যা দুর্গতদের মাঝে এ পর্যন্ত ১৪০ মেট্রিক টন চাল এবং ৬০০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। জিআর নগদ অর্থ দেওয়া হয়েছে ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা। শিশু খাদ্যের জন্য বরাদ্দকৃত ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা এবং গো-খাদ্যের জন্য ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সুনজিত কুমার চন্দ বলেন, বানভাসিদের জন্য বরাদ্দকৃত ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। আরও ত্রাণের চাহিদা পাঠানো হয়েছে।
সুনামগঞ্জ : জেলা প্রতিনিধি জানান, সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। দুই দফায় মিলে টানা তিন সপ্তাহ বানের জলের সাথে যুদ্ধ করছেন জেলার সদর, বিশ্বম্ভরপুর, শান্তিগঞ্জ, জগন্নাথপুর, দোয়ারাবাজার, ছাতক, তাহিরপুরসহ ৭ উপজেলার হাওর ও নদীতীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের অন্তত ৫ লাখ মানুষ। বন্যার পানি স্থিতিশীল অবস্থায় থাকায় জলাবদ্ধতার কবলে পড়েছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষজন। বাড়িঘর, রাস্তাঘাটে পানি থাকায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন বন্যা কবলিত এলাকার নারী, শিশু ও বয়স্ক সদস্যরা। গবাদিপশু ও হাঁসমুরগি নিয়ে বিপাকে বানভাসিরা। এদিকে, বন্যার পঁচা গলা পানিতে বন্যার্ত এলাকায় দেখা দিয়েছে চর্মরোগ ও পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব। কর্মহীন অবস্থায় নিম্নআয়ের মানুষজন। আয় উপার্জন না থাকায় খেয়ে না খেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন পানিবন্দি পরিবারের লোকেরা। যাঁরা বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে বসবাস করছেন তারাও খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে কষ্ট করছেন। সরকারের পক্ষ থেকে বন্যা ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের সহায়তার কথা বলা হলেও বেশিরভাগ পরিবার সহায়তার বাইরে থাকছে বলে অভিযোগ বানভাসিদের। ক্ষয়ক্ষতির নিরূপণ করে পুনবার্সনে আওতায় আনতে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন ক্ষতিগ্রস্তরা।
এদিকে, পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, উজানে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় সুনামগঞ্জের নদী তীরবর্তী ও হাওর এলাকায় আরও কিছুদিন বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকবে। বৃষ্টিপাত না হলে ধীরে ধীরে সমতলের পানি হ্রাস পেয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত সুরমা নদীর পানি শহরের নবীনগর পয়েন্টে বিপদসীমার ১০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এদিকে, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ত্রাণ কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী। তিনি বলেন, ত্রাণের কোনো ঘাটতি নেই। প্রয়োজন অনুসারে ত্রাণ তৎপরতা চালানো হচ্ছে। পানি কমলে ক্ষয়ক্ষতি তালিকা করার কথা জানান তিনি।