গোলাপগঞ্জে সংঘর্ষ, গুলিতে নিহত ৬
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৫ আগস্ট ২০২৪, ৬:১২:৫৯ অপরাহ্ন
গোলাপগঞ্জ (সিলেট) থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা : গোলাপগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি পালনে পৃথক স্থানে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করলে বিজিবি, পুলিশ ও আন্দোলন কারীদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে ৩ জন ও সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আরো ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়াও আহত হয়েছেন প্রায় অর্ধ শতাধিক।
গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহতরা হলেন- ধারাবহর হাসপাতালের সামনের ব্যবসায়ী, বারকোট গ্রামের মৃত মকবুল আলীর ছেলে তাজ উদ্দিন (৪০), আমুড়া ইউনিয়নের শিলঘাট গ্রামের কয়ছর আহমদের ছেলে সানি আহমদ (১৮) ও ঢাকাদক্ষিণ বাজারের ব্যবসায়ী নিশ্চিন্ত গ্রামের তৈয়ব আলীর ছেলে নজমুল ইসলাম (২২), ঢাকাদক্ষিণ দত্তরাইল গ্রামের আলাউদ্দিনের পুত্র মিনহাজ উদ্দিন (২৪), পৌর এলাকার ঘোষগাও গ্রামের গৌছ উদ্দিন (৪০) ও রায়গড় গ্রামের দর্জি হাসান আহমেদ।
আহতদের সবার নাম পরিচয় তাৎক্ষণিক জানা যায়নি। তাদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত ৭ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা সবাই সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
আহতরা হলেন -ঢাকাদক্ষিণ ইউনিয়নের বারকোট গ্রামের মো: জাবেদ আহমদ (২৩), একই গ্রামের আকিল আহমদের পুত্র ফরহাদ হোসেন (২২), ঢাকাদক্ষিণ ইউনিয়নের কানিশাইল গ্রামের মৃত শুক্কুর আলীর পুত্র হৃদয় আহমদ (২৫), ঢাকাদক্ষিণ ইউনিয়নের ফজলু মিয়ার পুত্র হাসিব আহমদ (২৩), একই ইউনিয়নের শরিফ আহমদ (২০)। এদের মধ্যে হাসিব আহমদ ও শরিফ আহমদের অবস্থা আশংকাজনক বলে জানা গেছে। তাদের কোমরে গুলি লেগেছে।
গোলাপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডা সুদর্শন সেন তাজ উদ্দিন ও সানি আহমদের নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এছাড়াও অপর নিহত নাজমুল ইসলামের নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেন তার পিতা তৈয়ব আলী। এছাড়াও গোলাপগঞ্জের সংঘর্ষে মিনহাজ আহমদ ও গৌছ উদ্দিন গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন।
জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি পালনে গতকাল রোববার সকাল ১১টার দিকে ঢাকাদক্ষিণ বাজারে শিক্ষার্থীরা মিছিল বের করে। এসময় পুলিশ বিজিবির সাথে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ বাধলে উভয় পক্ষে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সংঘর্ষ প্রায় ৩ ঘণ্টা চলে। এ সংঘর্ষের এক পর্যায়ে পুলিশকে ধাওয়া দিয়ে শিক্ষার্থীরা ঢাকাদক্ষিণ গোলাপগঞ্জ রোডের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে নিয়ে আসলে সেখানে পুলিশ ও বিজিবির গুলিতে তাজ উদ্দিন, সানি আহমদ ও নজমুল ইসলাম গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। বিকেল আড়াইটার দিকে গোলাপগঞ্জ পৌর শহরেও শিক্ষার্থীরা মিছিল করে। এসময় ঢাকাদক্ষিণে নিহত তাজ উদ্দিনের লাশ নিয়ে ঢাকাদক্ষিণ বাজারে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরাও তাদের সাথে যোগ দিলে মিছিলকারীরা উত্তপ্ত হয়ে উঠে। এসময় আবারো পুলিশ-বিজিবি ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। ক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীরা গোলাপগঞ্জ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পুরাতন টিনের ঘর ও নতুন ভবনের সামনে ভাংচুর করে। এছাড়াও ট্রাস্ট ব্যাংক গোলাপগঞ্জ শাখার কয়েকটি গ্লাসে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে ভাংচুর করে। এক পর্যায়ে আন্দোলনকারীরা গোলাপগঞ্জ মডেল থানায় হামলার চেষ্টা করে।
এসময় শিক্ষার্থীদের পুলিশ ও বিজিবি রাবার বুলেট, সাউন্ড গ্রেনেড ও গুলি ছুঁড়লে অনেক শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হয়। সন্ধ্যা ৭টার দিকে গুরুতর আহত গৌছ উদ্দিন ও মিনহাজ আহমদকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানের দায়িত্বরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত থেমে থেমে গোলাপগঞ্জ চৌমুহনীতে সংঘর্ষ চলছে।
সিলেটের পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নান জানান, সংঘর্ষে গোলাপগঞ্জ থানার ওসিসহ বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। রাত নয়টায় তিনি একজনের মৃত্যুর বিষয় নিশ্চিত করেন।