পুলিশ ও সরকার সমর্থকদের সাথে ছাত্র-জনতার দিনভর সংঘর্ষ
সিলেট, হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জে ৭ জন নিহত
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৫ আগস্ট ২০২৪, ৬:৩৬:৪৩ অপরাহ্ন
এমপির কার্যালয়ে আগুন ॥ চার সাংবাদিক আহত
স্টাফ রিপোর্টার: কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অসহযোগ আন্দোলন কর্মসূচি পালনকে ঘিরে গতকাল রোববার সারাদেশের মত উত্তাল ছিলো সিলেট। আন্দোলনকারী ছাত্র জনতা, পুলিশ ও সরকার সমর্থকদের দফায় দফায় সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় সিলেট বিভাগের বিভিন্ন এলাকা। সাত জনের প্রাণহানীও ঘটেছে সিলেটের গোলাপগঞ্জসহ বিভাগের হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ জেলায়। গুলিবিদ্ধ ও ইটপাটকেলে আহত রয়েছেন অনেকে। সাংবাদিকরাও হয়েছেন আহত। ভাংচুর হয়েছে সিলেট ৩ আসনের সংসদ সদস্যের কার্যালয়ও। সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজারেও দিনভর সংঘর্ষ হয়েছে। উত্তাপ আতংক ছিল গ্রামগঞ্জেও। খুলেনি দোকানপাট বিপণী বিতান। সড়কে গাড়ি চলাচল ছিল সীমিত। অফিস আদালত খোলা থাকলেও মানুষের সমাগম ছিলো না। ছেড়ে যায়নি দূরপাল্লার কোন বাস। ট্রেন চলাচল ছিল আগ থেকেই বন্ধ। কার্যত অচল ছিল সিলেট। সরকার দলীয়দের অস্ত্রের মহড়ায় নগরজুড়ে আতংক ছড়িয়ে ছিল বহুগুণ। এদিকে, নগরীর অভ্যন্তরে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মোটরসাইকেল, রিকশা এবং মাঝে মাঝে প্রাইভেট কার চলাচল করতে দেখা গেছে, তবে তা তুলনামূলক কম। বেলা বাড়ার সাথে সাথে গণপরিবহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তবে দূর পাল্লার বাস সিলেট ছেড়ে যায়নি। নগরীর বিপণী বিতানগুলো বন্ধ ছিল।
সিলেট নগরীর প্রাণকেন্দ্র ঐতিহাসিক কোর্ট পয়েন্ট দখল পাল্টা দখল হয়েছে। হয়েছে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ। দিনভর নগরীতে ঘটে যাওয়া নানা ঘটনা ও জেলা ও উপজেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর নি¤œরূপ।
সিলেট নগরীর দিনভর দফায় দফায় সংঘর্ষ
গতকাল রোববার সকাল ১১টা থেকে আন্দোলনকারীরা জড়ো হতে থাকে নগরীর প্রাণকেন্দ্র কোর্ট পয়েন্টে। ধীরে ধীরে আন্দোলনকারীদের উপস্থিতি বাড়তে থাকে। পুলিশও শক্তি বৃদ্ধি করে। একপর্যায়ে কোর্ট পয়েন্টের নিয়ন্ত্রণ চলে যায় আন্দোলনকারীদের হাতে। যত সময় যাচ্ছিলো কানায় কানায় ভরে উঠছিলো কোর্ট পয়েন্ট।
দুপুর ১২টার দিকে পুলিশ আন্দোলনকারীদের কোর্ট পয়েন্ট ছাড়ার কথা জানালে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এই খবরে আন্দোলনকারীরাও বেপরোয়া হয়ে উঠেন। মধুবন সুপার মার্কেটের সামনে থাকা পুলিশের উপর চড়াও হন। পুলিশও আন্দোলনকারীদের টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড সহ গুলি ছুঁড়ে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এরপর কোর্ট পয়েন্ট চলে যায় পুলিশের নিয়ন্ত্রণে। কিছুক্ষণ পর সরকারদলীয় ছাত্র সংগঠনসহ অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ খন্ড খন্ড মোটরসাইকেল মিছিল নিয়ে আসতে থাকেন কোর্ট পয়েন্টে। আন্দোলনকারীরা ছড়িয়ে পড়েন ধোপাদীঘীরপাড়, বারুতখানা, নয়াসড়ক, হাওয়াপাড়াসহ আশপাশ এলাকায়। এরপর পুলিশ ও ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাকর্মীদের সাথে চলে ছাত্র জনতার সংঘর্ষ। এই সংঘর্ষ চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত। ছাত্র জনতার ব্যানারে আন্দোলনকারীরা নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে।
শক্তি প্রদর্শন সরকার সমর্থকদের: দিনভর চিপা গলি থেকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে নিজেদের শক্তি জানান দিলেও সরকার দলীয় সমর্থকরা মূল রাজপথ দখলে নিয়েছিলেন দুপুরের পর থেকে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের ঠেকাতে তারা আগ্নেয়াস্ত্র, রামদা, রড, হকিস্টিক ও লাঠি হাতে মহড়া দিয়েছেন। এসব মহড়ায় ছাত্রলীগের পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীরা অংশ নেন।
একাধিক প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পুলিশ আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়ার পরপরই মূলত ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা একাধিক ভাগে বিভক্ত হয়ে নগরীর বন্দরবাজার, জিন্দাবাজার, বারুতখানা, জেলরোড, চৌহাট্টা, কোর্ট পয়েন্ট, নয়া সড়কসহ বিভিন্ন এলাকায় মহড়া দেওয়া শুরু করে। এ সময় প্রায় সবার হাতেই রামদা, রড, হকিস্টিক, চাকু, লোহার পাইপ ও লাঠি দেখা গেছে। এর বাইরে অন্তত ১০ থেকে ১৫ জনের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র দেখা গেছে। এ কারণে আশপাশের এলাকায় আতঙ্ক দেখা দেয়। সন্ধ্যা পর্যন্ত নিজেদের শক্তি বৃদ্ধি করে পয়েন্টে পয়েন্টে আন্দোলনকারীদের হটিয়ে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ নেয় সরকার সমর্থকরা।
এমপি হাবিবের কার্যালয়ে আগুন, ভাঙচুর: দক্ষিণ সুরমা উপজেলার লাউয়াই এলাকায় সিলেট-৩ (দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ) আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমানের কার্যালয় ভাঙচুর করে গুঁড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বেলা সাড়ে তিনটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এসময় অগ্নিসংযোগেরও ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সমর্থনকারীদের একটি দল অতর্কিতভাবে মিছিল নিয়ে গিয়ে সেমি পাকা কার্যালয়টি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়। এ সময় কার্যালয়ের সামনে থাকা তিনটি মোটরসাইকেলে আগুন দেওয়ার পাশাপাশি আসবাবপত্রেও আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে যান। এর আগেই আন্দোলনকারীরা সরে যান।
দক্ষিণ সুরমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইয়ারদৌস হাসান বলেন, সংসদ সদস্যের কার্যালয়টি ভাঙচুরের খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এসেছি। কারা এটা করেছে, খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।
সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান বলেন, কার্যালয়টি বন্ধ ছিল। বন্ধ এ কার্যালয়ে জামায়াত-বিএনপি-
সদস্যরা গিয়ে ভাঙচুর চালিয়েছে, আগুন দিয়েছে। তিনি শক্ত হাতে এই নৈরাজ্য মোকাবেলা করা হবে বলে উল্লেখ করেন।
চার সাংবাদিক আহত:
নগরীর কোর্ট পয়েন্টে পুলিশ-আন্দোলনকারী ও ছাত্রলীগের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার পর সংঘর্ষ শুরু হয়। বেলা বাড়ার সাথে সাথে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে মহানগরের বিভিন্ন এলাকায়। পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে চার সাংবাদিক আহত হয়েছেন। ভাঙা হয়েছে ক্যামেরা। আহতরা হচ্ছেন চ্যানেল এস সিলেট অফিসের চিফ রিপোর্টার মঈন উদ্দিন মনজু, একাত্তর টেলিভিশনের রিপোর্টার হোসাইন আহমদ সুজাদ ও ক্যামেরাপার্সন তারেক আহমেদ ও যুগান্তরের ফটো জার্নালিস্ট মামুন হাসান । এর মধ্যে চ্যানেল এস সিলেট অফিসের চিফ রিপোর্টার মঈন উদ্দিন মনজুর পায়ে গুলি লাগে।
দুপুরে আন্দোলনকারীদের মারধরে আহত একাত্তর টেলিভিশনের রিপোর্টার হোসাইন আহমদ সুজাদ সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। এছাড়া দুপুরে পুলিশ-আন্দোলনকারী সংঘর্ষকালে গুলিবিদ্ধ হন যুগান্তরের ফটো জার্নালিস্ট মামুন হাসান। তিনিও চিকিৎসা নিয়েছেন।
কাস্টমস কার্যালয়ে ভাংচুর: সিলেট মহানগরীর মেন্দিবাগ কাস্টমস এক্সাইজ- ভ্যাট কমিশনারেট অফিস ও কর ভবনে হামলার ঘটনা ঘটেছে। বিকেল ৫টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। আন্দোলনকারীরা মেন্দিবাগ কাস্টমস এক্সাইজ-ভ্যাট কমিশনারেট অফিসে হামলা চালায়। এসময় অফিসের বাইরের গ্লাস ভাঙচুর করে। একই সময় কর ভবনেও হামলা হয়। এসময় ভেতরে থাকা কর্মকর্তা ও কর্মচারীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। প্রায় এক ঘণ্টা ভেতরে অবরুদ্ধ ছিলেন তারা। পরে পুলিশ এসে আন্দোলনকারীদের ধাওয়া করে ছত্রভঙ্গ করে। তবে কেউ হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
পুলিশের বক্তব্য: সিলেট মহানগর পুলিশের উপকমিশনার আজবাহার আলী শেখ বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ দিনভর তৎপর ছিল। তিনি নিজেসহ বেশকিছু পুলিশ আহত হয়েছেন বলে জানান। সিলেটের পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নান জানান, গোলাপগঞ্জে সংঘর্ষে নিহত হওয়ার খবর পেয়েছি। তবে এর সংখ্যা এখনো জানতে পারিনি। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে।
হবিগঞ্জে সংঘর্ষে একজন নিহত: এমপির বাসভবনে ভাংচুর
আমাদের হবিগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, হবিগঞ্জে আওয়ামী লীগ ও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ হয়েছে। সংঘর্ষের ঘটনায় রিপন শীল (২৭) নামে এক যুবক নিহত হয়েছে। নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেন সদর হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. নাইম আশরাফ চৌধুরী। এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছে অন্তত শতাধিক। নিহত রিপন শীল হবিগঞ্জ শহরের অনন্তপুর এলাকার রতন শীলের পুত্র। এছাড়াও অন্যান্য আহতদের উদ্ধার করে জেলা সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। ভাংচুর করা হয়েছে হবিগঞ্জ- ৩ আসনের এমপি আবু জাহিরের বাসভবন। আগুন দেয়া হয়েছে বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। গতকাল রোববার দুপুর দেড়টা থেকে বিকেল ৬টা পর্যন্ত শহরের থানার মোড় থেকে কালীবাড়ি ক্রসরোড এলাকায় দফায় দফায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে আহতদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী গতকাল রোববার সকাল থেকে বেলা একটা পর্যন্ত শহরের বৃন্দাবন কলেজ রোড প্রাঙ্গণে জড়ো হতে থাকেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এক পর্যায়ে সেখানো জড়ো হয় কয়েক হাজার শিক্ষার্থী। হবিগঞ্জ সদর থানা ও জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে আন্দোলনকারীরা। পরে শহরের টাউন হল সড়কে অবস্থান নেয়া আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে আন্দোলনকারীরা। সংঘর্ষ হয় টানা কয়েক ঘণ্টা। এতে গুলিবিদ্ধ ও টেটাবিদ্ধ হয় (বল্লম) শতাধিক লোকজন। সংঘর্ষের সময় পুরো শহরজুড়ে সৃষ্টি হয় আতঙ্ক। দিকবিদিক ছোটাছুটি করতে গিয়েও আহত হন অনেক পথচারি। বন্ধ থাকে পুরো শহরের দোকানপাট।
এদিকে, জেলার মাধবপুর উপজেলার জগদীশপুর এলাকায় পুলিশের একটি পিকআপ ভ্যান ভাংচুর করে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে আন্দোলনকারীরা। এছাড়াও মাধবপুর পৌরশহরে আন্দোলনকারীদের সাথে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে আওয়ামীলীগসহ অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের। এতে আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
এ বিষয়ে হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার (ওসি) নূরে আলম জানান, সংঘর্ষের ঘটনায় একজন নিহতের খবর শুনেছি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চলছে।
সুনামগঞ্জে ত্রিমুখী সংঘর্ষে একজন নিহত
আমাদের সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, সুনামগঞ্জে আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষার্থী ও তাদের সাথে সংহতি জানানো জনতার সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগের দফায় দফায় ত্রিমুখী সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধসহ উভয়পক্ষের অনন্ত ৫০ জন আহত হয়েছেন বলে জানা যায়। সকাল সাড়ে ১১ টায় শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে সংঘর্ষ শুরু হয়। পরে থেমে থেমে কোর্ট পয়েন্ট, জামতলা, পুরাতন বাসস্ট্যান্ডসহ কয়েকটি এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষের এক পর্যায়ে সাধারণ শিক্ষার্থীর সাথে ছাত্রদলের নেতাকর্মী যোগ দেন। দীর্ঘক্ষণ চলা সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় পুরাতন বাসস্ট্যান্ড ও কোর্ট পয়েন্ট এলাকা। সংঘর্ষ থামাতে সাধারণ শিক্ষার্থীকে লক্ষ্য করে পুলিশের পক্ষ থেকে টিয়ারগ্যাস, রাবার বুলেট ছোঁড়া হয়। এসময় পুলিশকে লক্ষ্য করে শিক্ষার্থী ও বিক্ষুব্ধ সাধারণ জনতা ইটপাটকেল ছুঁড়েন। দু’পক্ষের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ায় শিক্ষার্থী, পথচারি,পরিবহন শ্রমিক গুলিবিদ্ধ হন। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ইটপাটকেলের আঘাতে পুলিশ ও ছাত্রলীগের বেশ কর্মী আহত হয়েছেন বলে জানা যায়। উভয় পক্ষের অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। সংঘর্ষ চলাকালে টিয়ারসেলের আঘাতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলার পর অটোরিকশার আঘাতে আহত হয়ে এক সিনিয়র আইনজীবী চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।
গতকাল রোববার রাত ৯ টার দিকে সিলেটের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান তিনি। নিহত রানা মিয়া পুরকায়স্থ (৭০) সুনামগঞ্জ জজ আদালতের আইনজীবী। ধর্মপাশা উপজেলা সদরের পুরকায়স্থ বাড়ির বাসিন্দা তিনি।
আইনজীবীর নিকট আত্মীয় ও জেলা সুজনের সহ-সভাপতি শাহিনা চৌধুরী রুবি জানান, গতকাল রোববার বেলা ২ টার দিকে আদালত থেকে বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন রানা মিয়া। এ সময় কোর্ট পয়েন্ট এলাকায় কোটাসংস্কার আন্দোলনকারী ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ চলছিল। এ সময় তার সামনে পুলিশের ছুঁড়া একটি টিয়ারসেল এসে পড়লে সংগে সংগে রাস্তায় লুটিয়ে পড়েন তিনি। ঠিক সেই মুহূর্তে একটি অটোরিকশা এসে ধাক্কা দেয় তাকে। এতে তার মাথায় রক্তক্ষরণ হয়।
রুবি আরও জানান, এ সময় তার সংগে থাকা ভাগ্না মামুন (রুবির স্বামী) আহত আইনজীবীকে নিয়ে হাসপাতালে যান এবং প্রাথমিক চিকিৎসা করিয়ে বাসায় নিয়ে আসেন। পরবর্তীতে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে সিলেটে নিয়ে যান স্বজনরা। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সেখানে একটি বেসরকারি হাসপাতালে আইসিইউ বেডের ব্যবস্থা করেন তারা। আইসিইউতে নেওয়ার পথে রাত ৯ টায় মৃত্যু হয় তার।
সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার রফিকুল ইসলাম বলেন, সংঘর্ষ চলাকালে হাসপাতালে উপস্থিত হয়ে ৩৬ ব্যক্তি চিকিৎসা নিয়েছেন। যাদের বেশিরভাগ গুলিবিদ্ধ বলে জানিয়েছেন তিনি। সদর হাসপাতালে গুরুতর আহত ৫ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলে জানান তিনি। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংহতি জানাতে মিছিল বের করলে মিছিলে পুলিশের ছুঁড়া টিয়ারগ্যাস ও রাবার বুলেটে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি এডভোকেট মাসুক আলমসহ বেশ কজন আইনজীবী আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আব্দুল হক।
এদিকে অসহযোগ আন্দোলনের প্রথম দিনে সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর, জামালগঞ্জসহ বিভিন্ন উপজেলায় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনতা আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।