এম সাইফুর রহমানের ১৫ তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ, বিভিন্ন কর্মসূচি
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২:২৫:৩০ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের ১৫তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ বৃহস্পতিবার। ২০০৯ সালের এই দিনে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়া এলাকায় এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান সিলেটের উন্নয়নের ওই রূপকার। সিলেটের উন্নয়নের ক্ষেত্রে আপসহীন সাইফুর রহমান ছিলেন প্রচলিত রাজনীতিবিদদের চেয়ে ব্যতিক্রমী চরিত্রের। মৃত্যুর একদিন আগেও তিনি বলেছিলেন, “আমি সিলেটের মাটি দেখে মরতে চাই”। জীবনের শেষ জুম্মার নামাজ বন্দরবাজার মসজিদে আদায় করেছিলেন ও মসজিদের উন্নয়নে সাহায্য করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘যত দিন বেঁচে থাকব, সিলেটকে নিয়েই বাঁচতে চাই-সিলেটই আমার শেষ ঠিকানা’। সিলেটের পথে প্রান্তরে রয়েছে এম সাইফুর রহমানের উন্নয়নের নানা স্মৃতিচিহ্ন। সেই ‘সিলেটপ্রেমী’ এম সাইফুর রহমানের ভক্ত অনুরাগীরা মৃত্যুবার্ষিকীতে নানা কর্মসূচি পালন করছে। মৌলভীবাজারেও পারিবারিকভাবে নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। এ উপলক্ষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একটি বাণী দিয়েছেন।
প্রয়াত অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের জন্ম ১৯৩২ সালের ৬ অক্টোবর মৌলভীবাজার সদর উপজেলার বাহারমর্দন গ্রামে। তিনি ১৯৪৯ সালে মৌলভীবাজার সরকারি হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন এবং ১৯৫১ সালে সিলেট এম সি (মুরারিচাঁদ) কলেজ থেকে আইএ পাস করেন। ১৯৫৩ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। পরে তিনি লন্ডনে পড়াশোনা করেন (১৯৫৩-১৯৫৮) এবং ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট (ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস) থেকে উচ্চতর ডিগ্রি লাভ করেন।
এম সাইফুর রহমান শিক্ষাজীবন শেষে ১৯৫৯ সালে ব্রিটিশ অক্সিজেন কোম্পানিতে যোগ দিয়েছিলেন। তাঁর কর্মস্থল ছিল পাকিস্তানের করাচিতে। তবে সে কাজ ছেড়ে তিনি ঢাকায় চলে এসেছিলেন। ১৯৬২ সালে দুই সহকর্মীকে নিয়ে রহমান রহমান হক অ্যান্ড কোম্পানি নামে একটি নিরীক্ষা ফার্ম প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এটি এখন সফল প্রতিষ্ঠান হিসেবে সুখ্যাতি অর্জন করে। যার দায়িত্ব পালন করছেন তারই জ্যেষ্ঠ পুত্র সাবেক এমপি এম নাসের রহমান। এম সাইফুর রহমান এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে ছাত্ররাজনীতিতে যোগ দেন এবং সলিমুল্লাহ মুসলিম হল ছাত্র ইউনিয়নের ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন।
বরেণ্য এই অর্থনীতিবিদ ১৯৬৯ সালে পাকিস্তান জাতীয় বেতন কমিশনে বেসরকারি খাত হতে একমাত্র সদস্য মনোনীত হন। তিনি ১৯৭৩ ও ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ জাতীয় বেতন কমিশনের সদস্য ছিলেন।
এম সাইফুর রহমান ১৯৭৬ সালে জিয়াউর রহমান সরকারের বাণিজ্য উপদেষ্টা নিযুক্ত হন। ১৯৭৭ সালে তিনি জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দলে যোগ দেন। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৭৮ সালে এই দলটি জাতীয়তাবাদী দলে (বিএনপি) রূপান্তরিত হয়। তিনি ১৯৭৯ সালে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হিসেবে মৌলভীবাজার সদর আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৯ থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মন্ত্রিসভায় বাণিজ্য ও অর্থ প্রতিমন্ত্রী এবং ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত বেগম খালেদা জিয়ার সরকারে টেকনোক্র্যাট কোটায় অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি ১৯৯৬ সালে এবং পুনরায় ২০০১ সালে জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বেগম খালেদা জিয়ার মন্ত্রিসভায় অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন।
সিলেটপ্রেমী এম সাইফুর রহমানকে আজও খুুঁজে বেড়ান বৃহত্তর সিলেটের মানুষ। বাংলাদেশের সফল অর্থমন্ত্রী, সিলেট বিভাগের উন্নয়নের রূপকার, দেশের ইতিহাসে ১২ বার জাতীয় বাজেট পেশ করার গৌরব অর্জন করেন তিনি। তিনি অর্থনৈতিক সংস্কারের মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে তলাবিহীন ঝুড়ি থেকে অর্থনীতির চাকাকে করেছিলেন সচল। তিনিই প্রথম বাংলাদেশে ভ্যাট প্রথা চালু করেন।
২০০৯ সালের ৫ সেপ্টেম্বর সিলেট থেকে ঢাকায় ফেরার পথে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়া এলাকায় এক সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় সাইফুর রহমানের।
বিএনপি মহাসচিবের বাণী:
সাবেক অর্থমন্ত্রী, বরেণ্য রাজনীতিবিদ এম সাইফুর রহমানের ১৫তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে দেয়া বাণীতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে এম সাইফুর রহমানের কৃতিত্ব সর্বজনবিদিত। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা এবং জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে তিনি সবসময় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। জনাব এম সাইফুর রহমান একজন প্রাজ্ঞ ও কীর্তিমান অর্থমন্ত্রী হিসেবে দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে যুগান্তকারী অবদান রেখেছেন। তাঁর দক্ষ রাষ্ট্রীয় অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে প্রভূত সুনাম অর্জন করে। তিনি স্বদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির অন্যতম পথিকৃৎ। স্বাধীনচেতা, স্পষ্টভাষী, অটুট মনোবল এবং ঈর্ষণীয় ব্যক্তিত্বের কারণে তিনি ছিলেন সবার নিকট অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি। শহীদ জিয়ার সহকর্মী হিসেবে দেশের দুর্যোগকালে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকালে জনাব এম সাইফুর রহমান দেশকে কেবলমাত্র অর্থনৈতিকভাবেই স্বাবলম্বী করেননি বরং স্বদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার অঙ্গীকারে বিএনপিকে সুসংগঠিত ও শক্তিশালী করার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। স্বাধীনতার ঘোষক সাবেক রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমান বীর উত্তম এর ঘনিষ্ঠ সহচর হিসেবে জাতীয়তাবাদী দর্শনকে বুকে ধারণ করে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে স্বৈরাচারের কবল থেকে গণতন্ত্রের পথে উত্তরণে এম সাইফুর রহমানের অবদান দেশবাসী ও দল চিরদিন শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে। বাণীতে তিনি এম সাইফুর রহমানের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন।
মৃত্যুবার্ষিকীতে পারিবারিক কর্মসূচি:
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ও সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের ১৫তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার মৌলভীবাজার সদর উপজেলার মরহুমের গ্রামের বাড়ি বাহারমর্দনে এম সাইফুর রহমান ও দুররে সামাদ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে কোরআন খতম, দোয়া মাহফিল ও এতিমদের খাদ্য বিতরণসহ ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এতে জেলা বিএনপির নেতা-কর্মী, নানা শ্রেণির মানুষ উপস্থিত থাকবেন।
সিলেট জেলা বিএনপি: এম সাইফুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীতে সিলেট জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে বিস্তারিত কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আজ বৃহস্পতিবার বাদ জোহর শাহজালাল (রঃ) এর দরগাহ প্রাঙ্গণে দোয়া মাহফিল। । এতে সংশ্লিষ্ট সকলকে যথাসময়ে উপস্থিত থাকার জন্য সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী অনুরোধ জানিয়েছেন।