সিলেটে চোখে গুলিবিদ্ধ মাদরাসা ছাত্রের পাশে নাগরিক আলেমসমাজ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬:৫৮:০২ অপরাহ্ন
ডাক ডেস্ক : দৃষ্টিশক্তি হারানোর শঙ্কায় দিন কাটছে গুলিবিদ্ধ মাদরাসা ছাত্র মিজানুর রহমানের (১৭)। বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলন চলাকালে সিলেটের পুলিশ লাইন্সে তিনি গুলিদ্ধি হন।
রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) নাগরিক আলেমসমাজের সমন্বয়করা তাকে দেখতে গেলে দৃষ্টিশক্তি হারানোর শঙ্কার কথা ব্যক্ত করেন মিজান। তিনি নগরীর পশ্চিম পীর মহল্লার মাদরাসাতুল আবরারের হিফজ বিভাগের ছাত্র ও টুকেরবাজারের শাহপুর গ্রামের মো. রইছ আলীর ছেলে।
জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে আহত-নিহতদের মানবিক সহায়তা প্রদান কর্মসূচির অংশ হিসেবে মিজানকে দেখতে তার বাড়িতে গিয়েছিলেন নাগরিক আলেমসমাজের প্রধান সমন্বয়ক লেখক ও সাংবাদিক নোমান বিন আরমান, মিশন ওয়ান মিলিয়নের প্রধান নির্বাহী ফায়যুর রাহমান ও লেখক নাওয়াজ মারজান। এ সময় তারা মিজানের হাতে সংগঠনের পক্ষ থেকে নগদ সহায়তার খাম তুলে দেন।
মিজান জানান, ৫ আগস্ট বেলা ২টার দিকে সিলেট নগরীর মদীনা মার্কেট থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলনের মিছিলে তিনি যোগ দেন। মিছিলটি সুবিদবাজার হয়ে মিরের ময়দান পয়েন্টে পৌঁছলে পুলিশ লাইন্সের ভেতর থেকে অতর্কিত গুলি আসতে থাকে। এ সময় বেশ কিছু ছররা গুলি মিজানের শরীরে বিদ্ধ হয়। একটি গুলি সরাসরি তার ডান চোখ ভেদ করে। প্রথমে তাকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে ঢাকার ইবনে সিনা হাসপাতাল হয়ে বর্তমানে ভিশন আই হসপিটালের অধীনে চিকিৎসা চলছে।
নিজের অনুভূতির কথা বলতে গিয়ে ১৫ পারা হাফেজ মিজান বলেন, গুলিবিদ্ধ চোখ নিয়ে যন্ত্রণায় ভোগছি। কিন্তু যখন মনে হয় দেশের জন্য মিছিলে গিয়ে গুলি খেয়েছি, তখন সাহস ও সান্ত¡না পাই।
তার পিতা রইছ আলী জানান, ‘অভাবের সংসারে চার সন্তান নিয়ে তিনি কোনোমতে দিন কাটাচ্ছেন। ছেলেকে কুরআনের হাফিজ বানানোর আশায় শ্রমিকের কাজ করে পড়ালেখার খরচ জোগাচ্ছিলেন। এমন অবসস্থায় ছেলের ওপর নেমে আসা এই দুর্যোগ তাদের জীবনে বিপর্যয় নিয়ে এসেছে।’
চোখের অশ্রু মুছতে মুছতে তিনি বলেন, চিকিৎসার জন্য ছেলেকে ঢাকায় পাঠিয়েছিলেন ১৫ হাজার টাকা ধারদেনা করে। হাসপাতাল থেকে অপারেশনের জন্য ৫৫ হাজার টাকা চাওয়া হলে তার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। কোথাও ব্যবস্থা করতে না পেরে বোনের বাড়ি বানানোর জন্য জমানো টাকা থেকে ৫০ হাজার ধার করে ছেলের চিকিৎসায় খরচ করেন। ইতোমধ্যে প্রায় ১ লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে জানিয়ে তিনি বলেন- ছেলের দীর্ঘমেয়াদে চিকিৎসা দরকার, নয়তো সে দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলতে পারে। কিন্তু কীভাবে ব্যায়বহুল চিকিৎসা করাবেন, কীভাবে দেনা শোধ করবেন- সেই দুশ্চিন্তায় তিনি চোখে অন্ধকার দেখছেন।