'ক্ষমতার জন্য হাসিনা নিজের জনগণকে ক্রীতদাসের মতো রাখতে চেয়েছিলেন'
সাংবাদিক তুরাবের পরিবারের সাথে বিএনপি নেতা রিজভির সাক্ষাৎ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩:০৩:০০ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিপ্লব সংহত করতে হলে পরাজিত ঘাতকদের কোন কীটপতঙ্গ যাতে মাথাচাড়া দিতে না পারে-সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। এজন্য অন্তর্বর্তী সরকারের আরো বেশী দায়িত্বশীল হবার পরামর্শ তার।
‘আমরা বিএনপি পরিবারে’র পক্ষ থেকে গতকাল বুধবার সিলেট নগরীর যতরপুর এলাকায় ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত সাংবাদিক এ টি এম তুরাবের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাতের পর সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপি নেতা তুরাবের মায়ের সাথে কথা বলেন এবং তাকে সমবেদনা জানান।
ব্রিফিংকালে রিজভী ছাত্র জনতার আন্দোলন, শেখ হাসিনার ভারতে পলায়ন, সমসাময়িক রাজনৈতিক পরিস্থিতি, বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলী গুম এবং সাংবাদিক তুরাব হত্যা নিয়ে কথা বলেন।
ক্ষমতার জন্য শেখ হাসিনা নিজের জনগণকে ক্রীতদাসের মতো রাখতে চেয়েছিলেন এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, তিনি (হাসিনা) ক্ষমতায় থাকার গ্যারান্টি পেয়েছিলেন দিল্লির কাছ থেকে। তাদের কাছ থেকে গ্যারান্টি নিয়েই শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছিলেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে ভারত কব্জার মধ্যে রাখতে চায়, মুঠোর মধ্যে রাখতে চায়। আমরা যাকে যেভাবে স্বীকৃতি দেব, বাংলাদেশ তা-ই করবে-শেখ হাসিনা সেটাই মেনে নিয়েছিলেন। বাংলাদেশের মানুষের নির্বাচন, ভোটের অধিকার, তার বেঁচে থাকার অধিকার সমস্ত কিছু পদদলিত করে ‘তোরা যে যা বলিস ভাই, আমার সোনার ক্ষমতা চাই, আমার সোনার হরিণ চাই’-এটাই ছিল শেখ হাসিনার নীতি। আর এ নীতি তিনি বাস্তবায়ন করেছেন রক্তাক্ত পন্থায়, বর্বরোচিত পন্থায়। জুলাইয়ের গণহত্যা, ৫ই আগস্ট পর্যন্ত যেটা চলেছে, অনেক বড় আত্মত্যাগ, যে আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে আমরা দ্বিতীয় স্বাধীনতা লাভ করেছি।
বিএনপি নেতা রিজভী আরো বলেন, আওয়ামী লীগের কোন নেতার নাম যদি ধনঞ্জয় হয়, কিংবা সুকুমার হয়,তাকে ভারতের পলিসি মেকাররা তাকে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার খেতাব দেন। সম্প্রতি বাংলাদেশ সীমান্তে জয়ন্ত এবং স্বর্ণা দাসকে বিএসএফ গুলি করে হত্যার বিষয়টি আলোকপাত করে এ বিএনপি নেতা বলেন, বাংলাদেশী মানুষকে পাখির মতো মেরে ফেলার অধিকার ভারত রাখে। শেখ হাসিনাকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে শিশু-কিশোরের ঘাতক-অপরাধী এবং হাজার লক্ষ কোটি লুটেরাকে দিল্লী পুনর্বাসন করে। আর সীমান্তে বাংলাদেশীদের দেখামাত্রই সে হিন্দু হোক, মুসলমান হোক, বৌদ্ধ হোক-তাকে গুলির নির্দেশ দেয় তারা।
অবৈধভাবে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে শেখ হাসিনা সারাদেশে গুম-খুনের রাজনীতি শুরু করেছিলেন-এমন অভিযোগ করে রিজভী বলেন, অমানবিক পন্থা দিয়ে তিনি ক্ষমতাকে স্থায়ী করতে চেয়েছিলেন। ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের মাধ্যমে তিনি ভেবেছিলেন তিনি ‘অদ্বিতীয়’।
বাংলাদেশকে লাশের দেশে পরিণত করে, শিশু-কিশোর-তরুণদের রক্ত পান করে শেখ হাসিনা আবার টিকে থাকার স্বপ্ন দেখেছিলেন। কিন্তু একের পর এক নিজেদের আত্মদান আত্মাহুতি দিয়ে ছাত্র-জনতা শেখ হাসিনাকে ঘিরে ধরছিল, তিনি এটা টেরই পাননি। শেষ দিন পর্যন্ত হাসিনা চেষ্টা করেছেন, দরকার হলে এক দুই লক্ষ লোককে হত্যা করে হলেও তাকে টিকে থাকতে হবে। কিন্তু, সেটা তার পক্ষে সম্ভব হয়নি। ছাত্র জনতার আত্মত্যাগ দেশের উজ্জ্বল অধ্যায় অভিহিত করে তিনি বলেন, তাদের আন্দোলনে শেখ হাসিনাকে পালাতে হয়েছে। তার মধ্যে একটি জীবন নয়াদিগন্ত ও দৈনিক জালালাবাদের সাংবাদিক এটিএম তুরাব। ঊনিশে জুলাই তুরাবের মৃত্যুর দিন আমি গ্রেফতার হই, ঢাকা প্রেসক্লাব থেকে। এরপর শুনলাম তুরাব নিহত হয়েছেন। তার নববধূকে বিধবা হতে হয়েছে শুধুমাত্র দেশের স্বাধীনতা গণতন্ত্রের জন্য নিজের জীবন অকাতরে বিলিয়ে দিয়েছেন তুরাব। গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারলে এটিএম তুরাবের আত্মদান সফল হবে বলে তার মন্তব্য। ইলিয়াস আলী গুমের অবতারণা করে তিনি বলেন, সারাদেশে গুম-খুনের সংস্কৃতি শেখ হাসিনাই চালু করেছিলেন।
এখনো প্রশাসনে বিভিন্ন জায়গায় পরাজিত শক্তির অনুচররা আছে উল্লেখ করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, তাঁদের (পরাজিত শক্তির অনুচর) অনেক কালোটাকা আছে। সেই কালোটাকা তাঁরা পাচার করেছেন। তাঁরা দেশের মধ্যে অস্থিরতা সৃষ্টির জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। কয়েক দিন ধরে গার্মেন্টস খাতে অস্থিরতা চলছে। এ ঘটনায় এর মধ্যে যাঁরা ধরা পড়েছেন, তাঁদের অনেকেই যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের। তার মানে, চক্রান্ত হচ্ছে। এটা কথার কথা নয়, সত্যিকার ঘটনা। প্রকৃত ঘটনা। এই টাকা দিয়ে নানা প্রকার অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছে।
অন্তর্বরর্তীকালীন সরকারকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে রুহুল কবির বলেন, ‘এত বড় আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে যে বিজয় আমরা অর্জন করেছি, সেই আত্মত্যাগকে ব্যর্থ করার জন্য নানা চেষ্টা চলছে। জনগণের ক্ষমতা জনগণের হাতে দ্রুত ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য যে সংস্কারগুলো দ্রুত করার দরকার, সেগুলো করতে হবে।’ তিনি ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন এবং বিদ্যুতের জন্য গৃহিত ইনডেমনিটি আইন দ্রুত বাতিলের দাবি জানান।
সাংবাদিক এ টি এম তুরাবের বাড়িতে রুহুল কবির রিজভীর সঙ্গে যান-আমরা বিএনপি পরিবারের আহ্বায়ক আতিকুল ইসলাম রুম্মন, সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী, মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সিলেট বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী, জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরী, মহানগরের সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী প্রমুখ।