সিলেট চেম্বারে মতবিনিময় সভায় ব্যবস্থাপনা পরিচালক
সিলেট হাই-টেক পার্কে বিনিয়োগে প্রবাসীদের এগিয়ে আসার আহ্বান
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১১ অক্টোবর ২০২৪, ৬:২৮:২৮ অপরাহ্ন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সিলেট হাইটেক পার্কে বিনিয়োগে প্রবাসীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক অথরিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ. কে. এম. আমিরুল ইসলাম এনডিসি। গতকাল বৃহস্পতিবার “সিলেট হাই-টেক পার্কে বিনিয়োগ সম্ভাবনা ও প্রদত্ত প্রণোদনা সুবিধা” বিষয়ক এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ আহ্বান জানান। চেম্বার কনফারেন্স হলে আয়োজিত এ মতবিনিময়ে সভাপতিত্ব করেন সিলেট চেম্বারের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মুজিবুর রহমান মিন্টু। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন-সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এ এস এম কাসেম।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে হাই-টেক পার্ক অথরিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন,বিনিয়োগের জন্য সম্ভাবনায় অঞ্চল হচ্ছে সিলেট। এ অঞ্চলে রয়েছে প্রবাসী আধিক্য এবং প্রযুক্তি খাতের বিপুল সম্ভাবনা। এখানকার বিনিয়োগকারীদের সমস্যাবলী জানতে ও তা নিরসনে সিলেট হাই-টেক পার্কে বর্তমানে একজন উপ-পরিচালক নিয়োগ করা হয়েছে। আগামীতে এখানে একজন পরিচালক পদবীর কর্মকর্তা নিয়োগের পরিকল্পনা তাদের রয়েছে-যাতে বিনিয়োগকারীরা এখান থেকে ওয়ানস্টপ সুবিধা পেতে পারেন। হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের হেড অফিসে ওয়ানস্টপ সার্ভিস চালু আছে-এ তথ্য জানিয়ে তিনি বলেন, সারা দেশব্যাপী এখনও তা চালু করা সম্ভব হয়নি। মাত্র ৭৬ জন জনবল দিয়ে তারা সারাদেশে কার্যক্রম চালাচ্ছেন এ তথ্য জানিয়ে তিনি বলেন, নতুন ১০৩ জন কর্মকর্তা নিয়োগের বিষয়টি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
নতুন জনবল নিয়োগ হলে বিনিয়োগকারীদের সমস্যাবলী সমাধানে প্রতিষ্ঠানটির কাজে আরো গতিশীলতা আনা যাবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। অনুষ্ঠানে সিলেট হাই-টেক পার্কসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠা হাই-টেক পার্ক সমূহের অগ্রগতি ও প্রদত্ত সুবিধাবলি নিয়ে প্রতিবেদন উপস্থাপনকালে হাই-টেক পার্ক অথরিটির কনসালটেন্ট জুবায়ের মাহবুব বলেন, হাই-টেক পার্কের বিনিয়োগকারীরা কর্পোরেট ট্যাক্সের ক্ষেত্রে ১০ বছর এবং ইনকাম ট্যাক্সের ক্ষেত্রে ৩ বছরের রেয়াত সুবিধা পাবেন। এছাড়াও ইউটিলিটি বিলের ভ্যাট মওকুফ এবং কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবেন। সভায় হাই-টেক পার্কে বিনিয়োগ সম্ভাবনা, প্রশিক্ষণ ও স্টার্টআপদেরকে প্রদত্ত সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে বক্তব্য রাখেন হাই-টেক পার্কের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ আতিকুল ইসলাম ও প্রকল্প পরিচালক মোঃ হুমায়ুন কবির। তারা জানান, হাই-টেক পার্কের ট্রেনিং সেন্টারের আওতায় ইতোমধ্যে ১৬ হাজার স্টার্টআপ উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে, যারা হাই-টেক পার্কে কাজের ক্ষেত্রে প্লাগ এন্ড প্লে সুবিধা অর্থাৎ সম্পূর্ণ রেডি ওয়ার্কপ্লেস পাবেন। তারা এ সুযোগ কাজে লাগানোর জন্য স্টার্টআপ ও বিনিয়োগকারীদের আহবান জানান।
সভায় বক্তাগণ হাই-টেক পার্কের হাওর এলাকায় সোলার এনার্জি প্ল্যান্ট স্থাপন, ডাটা সেন্টার নির্মাণের লক্ষ্যে সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ নিশ্চিত করার জন্য ১০ মেগাওয়াট পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপন, সৌন্দর্যবর্ধনের চিন্তা না করে অবকাঠামোগত উন্নয়ন কাজ সম্পন্নকরণ, বিনিয়োগকারীদের জন্য ওয়ানস্টপ সার্ভিস চালু, নিরাপত্তা বৃদ্ধিকরণ এবং যেকোন নতুন প্রজেক্ট হাতে নেওয়ার পূর্বে ফিজিবিলিটি স্টাডি করার অনুরোধ জানান।
সভাপতির বক্তব্যে সিলেট চেম্বারের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মুজিবুর রহমান মিন্টু বলেন, সিলেট হাই-টেক পার্ক প্রকল্পের শুরু থেকেই সিলেট চেম্বার অব কমার্স এর সাথে জড়িত আছে। তিনি হাইটেক পার্কে বিনিয়োগে কঠিন শর্ত ও নীতিমালা, প্লটের অধিক মূল্য, গ্যাস ও বিদ্যুতের সমস্যা, ব্যাংক ঋণ প্রাপ্তিতে জটিলতা, অবকাঠামোগত কাজ আটকে থাকা এবং বড় ধরণের আর্থিক ক্ষতির আশংকায় আগ্রহীরা এখানে বিনিয়োগ থেকে সরে এসেছেন। তিনি বলেন, হাই-টেক পার্কে জমি বরাদ্দ নিলে কর্তৃপক্ষ ভাড়ার ডকুমেন্ট ব্যতিত কোন রেজিস্টার্ড দলিল বা লীজের ডুকমেন্ট প্রদান করে না। অপরদিকে জমির দলিল অথবা লীজ ডকুমেন্ট ছাড়া ব্যাংক ঋণ প্রদান করে না। যার দরুণ উদ্যোক্তারা জমি বরাদ্দ নিয়েও কাগজপত্রের অভাবে ব্যাংক লোন নিতে পারবেন না। এছাড়াও এখানে প্রবাসীদের বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সকল ধরণের অর্থ ডলারে পেমেন্ট করতে হয়। এই নিয়মটিও বিনিয়োগকারীদের জন্য সুবিধাজনক নয়। তিনি হাই-টেক পার্কে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ, গ্যাস, নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ টহল বৃদ্ধি এবং ব্যাংক ঋণ প্রাপ্তির লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট প্রদানের অনুরোধ জানান।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সিলেট চেম্বারের পরিচালক ফখর উস সালেহীন নাহিয়ান, ফাহিম আহমদ চৌধুরী, সিলেট প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম। এসময় উপস্থিত ছিলেন সিলেট চেম্বারের পরিচালক মোঃ আব্দুস সামাদ, সায়েম আহমদ, মোঃ মাহবুবুল হাফিজ চৌধুরী মুশফিক, সদস্য এনায়েত আহমেদ, সচিব মোঃ গোলাম আক্তার ফারুক, উপ-সচিব সানু উদ্দিন রুবেল, মোঃ আজিজুর রহিম খান প্রমুখ। সভাটি সঞ্চালনা করেন সিলেট চেম্বারের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ অফিসার মিনতি দেবী।