সংখ্যালঘু ইস্যুতে তিন ব্রিটিশ এমপির অপপ্রচার: বাংলাদেশের প্রতিবাদ নজরুল ইসলাম বাসন
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ৫:২৬:১৪ অপরাহ্ন
তিনজন বৃটিশ এমপি প্রীতি প্যাটেল, বব বøাক ম্যান ও ব্যারি গার্ডেনার বাংলাদেশে হিন্দু কমিউনিটির উপর নির্বিচারে আক্রমণ হচ্ছে বলে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ।
ভারতীয় মাল্টি মিডিয়া নিউজ এজেন্সি এএনআই তিন এমপির বক্তব্য তুলে ধরতে গিয়ে তাদের বরাত দিয়ে লিখেছে চট্টগ্রামসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় সহিংস ঘটনা বেড়েই চলেছে।
কনজারভেটিভ পার্টির এমপি বব বøাকম্যান বলেছেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর নির্যাতন চালানোর মাত্রা বেড়েছে।
তিনি এ ব্যাপারে তার গভীর উদ্বেগের কথা জানান। লেবার পার্টির এমপি ব্যারি গার্ডেনার গত সোমবার পার্লামেন্টে দেয়া এক বক্তব্যে বলেছেন-বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর যে নির্যাতন চলছে -এ ব্যাপারে পার্লামেন্টে আলোচনার আয়োজনের জন্য তিনি অনুরোধ করেছেন।
বৃটিশ পার্লামেন্টে বক্তব্য রাখাকালে ব্রেন্টওয়েস্ট এর এমপি ব্যারি গার্ডিনার আরো বলেছেন, গত আগস্ট এর পট-পরিবর্তনের পরে বাংলাদেশে ২০০ এর মতো সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। তিনি সরাসরি হিন্দু বিরোধী সহিংসতার জন্য একটি রাজনৈতিক দলের নামও উল্লেখ করেছেন।
কনজারভেটিভ পার্টির এমপি প্রীতি প্যাটেল বলেছেন, বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর অনিয়ন্ত্রিত অত্যাচার চলছে। তিনি আরো বলেন, দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের সুসম্পর্ক রয়েছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশে একজন মন্ত্রী সফর করে এসেছেন। এর পরেও ব্রেন্টওয়েস্ট এর এমপি ব্যারি গার্ডেনার তার গভীর উদ্বেগের কথাও প্রকাশ করেছেন।
লেবার পার্টির এমপি রূপা হক বলেছেন, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান নির্বিশেষে সকল ধর্মের সংখ্যালঘু লোকদের জীবনের নিরাপত্তা বিধান করতে হবে।
তিনি স্মরণ করেন, এই ধরনের সহিংসতা ১৯৭১ সালের পর থেকেই চলে আসছে।
তিনি আরো বলেন, ১৯৭৪ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত ১.৩৫% থেকে ৮.৫ পার্সেন্ট হিন্দু বাংলাদেশ থেকে চলে গেছেন। গত গ্রীষ্মকালে ৮ শত ছাত্র হত্যার পর বিগত সরকারের পতনের পর থেকে বাংলাদেশে অস্থির পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হচ্ছে।
জানা গেছে, পার্লামেন্টারি আন্ডার-সেক্রেটারি অব স্টেট ফর ফরেন কমনওয়েলথ এন্ড ডেভেলপমেন্ট এফেয়ার্স ক্যাথরিন ওয়েন্ট সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর করে গেছেন। তিনি বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে সাক্ষাৎ করে দ্বিপাক্ষিক বিষয়ে আলোচনা করে গেছেন। সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার ব্যাপারেও তারা আলোচনা করেন।
এ সময় পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন এর দ্বিপাক্ষিক বিষয়ে আলোচনা করেন। তাদের আলোচনায় সংখ্যালঘুদের পূর্ণ নিরাপত্তার ব্যাপারটি অগ্রাধিকার পেয়েছিল।
বাংলাদেশের অন্তবর্তীকালীন সরকার সংখ্যালঘুদের পরিপূর্ণ নিরাপত্তা প্রদানের ব্যাপারটি নিশ্চিত করেছেন। ক্যাথরিন ওয়েস্ট বহিষ্কৃত ইসকন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতারের বিষয়েও তার দফতর নজর রাখছে বলে জানান। বৃটিশ পার্লামেন্টে এই দুজন এমপির বক্তব্য নিয়ে ইতোমধ্যে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে।
বাংলাদেশের সংখ্যালঘু ইস্যুতে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের উপরোক্ত কয়েকজন সদস্য এবং অল পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রæপের বিবৃতির প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ।
বুধবার (৪ ডিসেম্বর) ঢাকায় ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুককে ডেকে এ ধরনের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সহযোগিতা চেয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ব্রিটিশ হাইকমিশনারকে আমি ডেকেছিলাম দুটো কারণে। ছোট ছোট দুটো ঘটনা ঘটেছে। ব্রিটিশ পার্লামেন্টের কয়েকজন সদস্য বক্তব্য দিয়েছেন বাংলাদেশের সংখ্যালঘু পরিস্থিতি নিয়ে।
সেখানে কিছু ভুল তথ্য আছে, সেটা আমি হাইকমিশনারকে জানিয়েছি। বলেছি যে, চারদিকে যে তথ্যের একটা প্রবাহ চলছে, তারা সেটা থেকে মনে হয় যেন তথ্য নিয়েছেন।
তৌহিদ হোসেন বলেন, আর দু-একটা সংগঠন আছে। যারা কথা বলেছেন, সেগুলোও মোটামুটি ব্রিটেনকেন্দ্রিক। তারা যেটা বলেছেন, প্রকৃত পরিস্থিতি প্রতিফলিত হয়নি।
পার্লামেন্টের সদস্যরা যা-ইচ্ছা তাই বলবে, এটা নিয়ে কারও কিছু করার নাই আমাদেরও কিছু করার নাই।
আমি হাইকমিশনারকে অনুরোধ করেছি, আমাদের যে অবস্থানটা সেটা যেন তারা তাদের চ্যানেলে জানান। উনি পরামর্শ দিয়েছেন, আপনারা আপনাদের মিশনের মাধ্যমে জানান, আমরাও জানাবো।
ব্রিটেনভিত্তিক অল পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপের বিবৃতির প্রসঙ্গেও ব্রিটিশ হাইকমিশনারকে অবহিত করেছেন উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ নিয়ে অল পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রæপের একটি বিবৃতি এসেছে। সেখানে খুব দুঃখজনকভাবে যেটা আসছে, তাতে আমরা খুবই কষ্ট পেয়েছি।
সেখানে দেখানো হয়েছে ৫ আগস্টের পরে বেশি মৃত্যু হয়েছে, যেটা সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং ৫ আগস্টের আগের কথা বলা হয়েছে, মোট ২৮০ জন আর মোট সংখ্যা এক হাজারের বেশি। আমি বলেছি, বিষয়টা মোটেই তা না।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ৫ আগস্টের আগে অন্তত দেড় হাজার ছেলেমেয়ে মারা গেছে। তারমধ্যে আমরা ৭৮০ জনের নাম-পরিচিতি নিশ্চিত করেছি।
বিবৃতিতে যেভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, এটা ঠিক নয়, একেবারে সঠিক নয়। বরং দুঃখজনক যে এখানে তো বড় একটা ঘটনা যে ঘটেছে তার কোনো উল্লেখ নেই প্রতিবেদনে।
তৌহিদ হোসেন বলেন, তারা (অল পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রæপ) বলেছেন তাদের কথা। এখন আমরা আমাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছি। আপনিও (হাইকমিশনারকে) একটু ব্যাখ্যা করুন আপনার সরকারের কাছে এবং আপনার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে।