বালাগঞ্জ ওসমানীনগর মুক্ত দিবস আজ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ৫:১৭:৪৬ অপরাহ্ন
বালাগঞ্জ (সিলেট) থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা : আজ বালাগঞ্জ মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের ৭ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক বঙ্গবীর জেনারেল এমএজি ওসমানীর পৈতৃক ভূমি বৃহত্তর বালাগঞ্জ উপজেলা (বর্তমান ওসমানীনগর উপজেলাসহ) পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী মুক্ত হয়। আজ বালাগঞ্জবাসীর কাক্সিক্ষত বিজয়ের সেই গৌরবময় স্মরণীয় দিন, বালাগঞ্জ মুক্ত দিবস।
সংশ্লিষ্ট মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের ২ ডিসেম্বর সকাল ৬টার সময় ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাতাছড়া থেকে ৪০জন মুক্তিযোদ্ধা বালাগঞ্জের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। বীর মুক্তিযোদ্ধা আজিজুল কামালের নেতৃত্বে এ বাহিনীর অন্যান্য সহযোদ্ধা হিসেবে ছিলেন মুছব্বির বেগ, শফিকুর রহমান, মনির উদ্দিন, ধীরেন্দ্র কুমার দে, নীহারেন্দু ধর, আব্দুল খালিক, জবেদ আলী, সিকন্দর আলী, আমান উদ্দিন, লাল মিয়া, মনির উদ্দিন আহমদ, মজির উদ্দিন আহমদ, মো. সমুজ আলী, আব্দুল বারী প্রমুখ।
এদের মধ্যে ২৬জন পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী পথে মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলা সদরে থেকে যান। বাকি ১৪জনের দলটি ৪ডিসেম্বর সন্ধ্যার পর অধিনায়ক আজিজুল কামালসহ ফেঞ্চুগঞ্জ থানার মাইজগাঁও এলাকার আব্দুল গণি মাস্টার ও বদরুল হক নিলুর বাড়িতে উঠেন। সেখান থেকে একই রাত ১২টার সময় রওয়ানা হয়ে রাত ২টার সময় ইলাশপুর রেল সেতুর নিকট অবস্থান গ্রহণ করেন। পরদিন ভোরে একদল পাক সেনা সিলেট থেকে ফেঞ্চুগঞ্জের দিকে অগ্রসর হলে মুক্তিবাহিনীর সাথে মুখোমুখি হয়।
সেখানে প্রায় আধা ঘণ্টা যুদ্ধ চলে। পাকিস্তানি সৈন্যরা শেষ পর্যন্ত ২টি এসকেএস রাইফেল ও বেশ কিছু গোলাবারুদ ফেলে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। এরপর মুক্তিযোদ্ধারা ইলাশপুর সেতু অতিক্রম করেন। এ সময় বড়লেখা থেকে ২৬ জনের দলটিও সেখানে এসে পৌঁছে যায়। এতে উভয় দলের মনোবল আরো বেড়ে যায়। মুক্তিযোদ্ধারা ইলাশপুর সেতুর অবস্থান থেকে ৬ডিসেম্বর ভোর রাতে রওয়ানা হয়ে সন্ধ্যা ৭টার সময় প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে বর্তমান বালাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কাছে পৌঁছতে সক্ষম হন।
এরপর সেখানে অবস্থান করে শুরু হয় তথ্য সংগ্রহের পালা। সংবাদ পাওয়া যায়, বালাগঞ্জ থানায় পাক হানাদার বাহিনী নেই, তবে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল জব্বারের নেতৃত্বে একদল বাঙালি পুলিশ রয়েছে।
সেদিন রাজশাহীর বদিউজ্জামান, বিয়ানীবাজার নিবাসী ডা. জাকারিয়া ও কাজীপুর নিবাসী আব্দুছ সুলতান বার্তা বাহকের কাজ করেন। ইতোমধ্যে রাত নেমে আসে। রাতেই মুক্তিযোদ্ধারা থানা ভবনে অবস্থানকারী পুলিশ বাহিনীকে ঘেরাও করে ফেলেন।
সকাল ৯টায় পুলিশ বাহিনী থানা ভবনের মালখানায় অস্ত্র জমা দেয় এবং ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সকাল পৌনে ১০টায় মুক্তি বাহিনীর অধিনায়কের নিকট চাবি হস্তান্তর করে।বালাগঞ্জ মুক্ত দিবস নিয়ে দৈনিক সিলেটের ডাক-এর এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে বিজয়ী দলের অন্যতম সদস্য দেওয়ান বাজারের জামালপুর নিবাসী বীর মুক্তিযোদ্ধা মজির উদ্দিন আহমদ ও উজিয়ালপুর নিবাসী মো. সমুজ আলী বলেন, একাত্তরের সেই দিনের কথা জীবনে ভুলার নয়। দেশকে শত্রæমুক্ত করতে আমরা জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছি। আমরা চাই, আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি শান্তি, সমৃদ্ধিতে ভরে উঠুক।