আলোচনা সভায় বক্তারা
বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরী ছিলেন দানবীর ড. রাগীব আলীর অনুপ্রেরণা
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৫৮:৫৭ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় গতকাল বৃহস্পতিবার পালিত হয়েছে সিলেটের প্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় লিডিং ইউনিভার্সিটির সহ-প্রতিষ্ঠাতা, মহীয়সী নারী বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরীর ১৮ তম মৃত্যুবার্ষিকী। গতকাল সকাল থেকেই শহরতলীর রাগীবনগরে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার অসংখ্য মানুষ জমায়েত হন তাঁর মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে। মানব দরদী এ মহীয়সী নারীর কবরের পাশে দাঁড়িয়ে মোনাজাত করেন অনেকে। রাবেয়া খাতুন চৌধুরীকে স্মরণ করতে গিয়ে অনেকে নীরবে ফেলেছেন চোখের জল।
এ উপলক্ষে তার স্মরণে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তারা বলেছেন, মহীয়সী নারী বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরী একজন নিরহংকারী সাদা মনের মানুষ। অর্থ-বিত্ত, প্রভাব প্রতিপত্তির মাঝে থেকেও যার মাঝে বাসা বেঁধেছিল মানব কল্যাণের মহান ব্রত। এই কীর্তিমান নারী ছিলেন মানবকল্যাণে অসংখ্য প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা দানবীর ড. রাগীব আলীর অনুপ্রেরণা। তাঁর কর্মের কারণে তিনি আজীবন স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
সিলেটের প্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় লিডিং ইউনিভার্সিটির উদ্যোগে গতকাল বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রাগীব আলী ভবনের গ্যালারি-১ এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। জালালাবাদ রাগীব রাবেয়া মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. মো. আবেদ হোসেনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষা ও সমাজসেবামূলক অসংখ্য প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা, উপমহাদেশের প্রখ্যাত দানবীর ড. রাগীব আলী বলেন, সমাজসেবা ও আর্তমানবতার কল্যাণে নিবেদিত ছিলেন বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরী। জীবনসঙ্গী হিসেবে সমাজসেবামূলক কাজে রাবেয়া ছিলেন আমার সকল কাজের অনুপ্রেরণা। বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরী তার কর্মের জন্য চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন মানুষের হৃদয়ে। তিনি মরহুমের রুহের মাগফেরাতের জন্য সকলের দোয়া কামনা করেন।
মহীয়সী বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরীর জীবন ও কর্মের উপর স্মৃতিচারণ এবং মানুষের প্রতি তাঁর স্নেহ মমতা এবং এলাকার উন্নয়নে তাঁর অবদান এবং অনুপ্রেরণার কথা উল্লেখ করে বক্তব্য রাখেন লিডিং ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান ও দৈনিক সিলেটের ডাক এর সম্পাদক আব্দুল হাই, রাগীব-রাবেয়া ফাউন্ডেশনের সদস্য মিসেস সাদিকা জান্নাত চৌধুরী, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ড. তাজ উদ্দিন, গণিত বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ড. সাইফুল ইসলাম, জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল প্রফেসর ডা. এ.কে. এম. দাউদ, বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কলামিস্ট আফতাব চৌধুরী, দৈনিক সিলেটের ডাক এর অতিথি সম্পাদক মো. নজরুল ইসলাম বাসন, লিডিং ইউনিভার্সিটির ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. বশির আহমেদ ভুঁইয়া, রেজিস্ট্রার মো. মফিজুল ইসলাম, খাজাঞ্চি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন, সিলেট মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর এডভোকেট মো. বদরুল আহমেদ চৌধুরী, রাগীব-রাবেয়া ফাউন্ডেশন এবং লিডিং ইউনিভার্সিটি ট্রাস্টি বোর্ডের সচিব ইঞ্জিনিয়ার মো. লুৎফর রহমান, রাখি ভৌমিক, কবি মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ।
আলোচনা সভায় লিডিং ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান ও দৈনিক সিলেটের ডাক এর সম্পাদক আব্দুল হাই বলেন, আমার মমতাময়ী মা অনন্য গুণের অধিকারী ছিলেন। মানুষের জন্য ছিল তার গভীর মমতা। তিনি সকল শ্রেণির মানুষের সাথে মিশতেন।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ড. তাজ উদ্দিন বলেন, বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরী ছিলেন অনেক গুণে গুণান্বিত একজন মহীয়সী নারী। রাগীব-রাবেয়া দম্পতি প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ উন্নয়নমূলক কার্যক্রমে যে অবদান রেখেছেন তা অবিস্মরণীয়। দানবীর ড. রাগীব আলীর সফলতার পথে বড় নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছেন বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরী।
শাবির প্রফেসর ড. সাইফুল ইসলাম বলেন, বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরীর কৃতিত্বের কথা সংক্ষেপে বলে শেষ করা যাবে না। ৪৯টি প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন তিনি। তাঁর প্রতিষ্ঠানগুলোতে শত শত মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে। এটা তার মানবিকতার বহি:প্রকাশ বলে উল্লেখ করেন তিনি।
প্রফেসর ডা. এ.কে. এম. দাউদ বলেন, কর্মে যিনি জনসেবার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তিনি মহীয়সী নারী বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরী। ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল, মাদার তেরেসার মতোই ছিলেন বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরী। কর্মের কারণে তিনি আজীবন অমর হয়ে থাকবেন বলে উল্লেখ করেন তিনি।
বিশিষ্ট সাংবাদিক আফতাব চৌধুরী বলেন, মহীয়সী নারী বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরী উঁচু সমাজের মানুষ হয়েও মিশতেন সাধারণ মানুষের মাঝে। নিরহংকারী অসাধারণ মানুষটি ছিলেন দানবীর ড. রাগীব আলীর সকল কাজের প্রেরণা।
লিডিং ইউনিভার্সিটির ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. বশির আহমেদ ভুঁইয়া বলেন, দানবীর ড. রাগীব আলীর সফলতার পেছনে রাবেয়া খাতুন চৌধুরীর অবদান অনস্বীকার্য। এই দম্পতি নিজ এলাকাকে ভালবাসেন বলেই রাগীবনগরে স্মার্ট ভিলেজ গড়ে তুলেছেন। যার সুফল পাচ্ছেন অত্র এলাকাসহ গোটা দেশবাসী।
খাজাঞ্চি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন বলেন, বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরী ছিলেন একজন মানবদরদী মানুষ। তাঁর চাওয়া ছিল মানবতার কল্যাণ। তাঁর ভালো কাজগুলো কবুল করে আল্লাহ তাকে জান্নাতবাসী হিসেবে কবুল করুন,এই কামনা করি।
সিলেট মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর এডভোকেট মো. বদরুল আহমেদ চৌধুরী বলেন, দানবীর ড. রাগীব আলীর সকল প্রতিষ্ঠান যার উৎসাহে প্রতিষ্ঠিত তিনি মহীয়সী নারী বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরী। লন্ডনের মতো উন্নত স্থান ছেড়ে দেশে এসে সামাজিক কর্মকান্ডে জড়িয়েছেন শুধু নাড়ির টানে। কর্মের কারণে তিনি আজীবন বেঁচে থাকবেন ।
আলোচনা সভায় রেজিস্ট্রার মো. মফিজুল ইসলাম বলেন, দানবীর ড. রাগীব আলী কামালবাজার এলাকার একটি পিছিয়েপড়া জনপদকে আলোকিত করে তুলেছেন। এতে প্রেরণা যুগিয়েছেন তাঁর সুযোগ্য সহধর্মিণী বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরী। প্রাথমিক থেকে সর্বস্তরের শিক্ষার অনন্য সুযোগ করে দিয়েছেন এই দম্পতি।
অনুষ্ঠানে রাগীব-রাবেয়া ফাউন্ডেশন ও লিডিং ইউনিভার্সিটি কর্তৃক প্রকাশিত মূল্যায়ন ও স্মৃতিচারণমূলক
স্মারক ‘আলোকময়ী রাবেয়া’ এবং রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ এবং হাসপাতাল কর্তৃক ‘অমর কীর্তির কিছু স্মৃতি’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। অষ্টাদশ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে গ্রামবাসী, লিডিং ইউনিভার্সিটি, জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালসহ রাগীব-রাবেয়া ফাউন্ডেশনের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং আমন্ত্রিত অতিথির মাঝে শিরনী বিতরণ করে রাগীব-রাবেয়া ফাউন্ডেশন এবং লিডিং ইউনিভার্সিটি পরিবার।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের পরিচালক প্রফেসর ডা. তারেক আজাদ চৌধুরী, সহকারী অধ্যাপক ও লিডিং ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ড সদস্য ডা. সাদিয়া মালিক চৌধুরী, ট্রাস্টি বোর্ড সদস্য দেওয়ান সাকিব আহমেদ, কলা ও আধুনিক ভাষা অনুষদের ডিন ড. মো. রেজাউল করিম, আধুনিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন রুমেল এম এস রহমান পীর, লিডিং ইউনিভার্সিটির পরিচালক অর্থ ও হিসাব মোহাম্মদ কবির আহমেদ, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. মোহাম্মদ মোস্তাক আহমেদ, রাগীব-রাবেয়া ডিগ্রি কলেজ পানিউমদা, নবীগঞ্জ এর অধ্যক্ষ মো. এনামুল হক, রাজনগর চা বাগানের ম্যানেজার মোহসিন খান, মালনিছড়া চা বাগানের ম্যানেজার আজম আলী, দৈনিক সিলেটের ডাক এর প্রধান বার্তা সম্পাদক এনামুল হক জুবের, বার্তা সম্পাদক সমরেন্দ্র বিশ্বাস সমর, চীফ রিপোর্টার মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম, সিনিয়র রিপোর্টার কাউসার চৌধুরী, আনাস হাবিব কলিন্স, নূর আহমদ, দক্ষিণ সুরমা প্রেসক্লাব সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম মুসিক প্রমুখ।
লিডিং ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের প্রভাষক মো. রেজাউল করিমের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় কবিতা আবৃত্তি করেন কবি এবং ব্যাংকার তারেশ কান্তি তালুকদার, কবি ও শিক্ষক উত্তম কুমার চৌধুরী, সাবেক কাউন্সিলর নাজনিন আক্তার কনা, লিডিং ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কাজী মো. জাহিদ হাসান, রাগীব-রাবেয়া ফাউন্ডেশন ও লিডিং ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের গবেষণা কর্মকর্তা জসিম আল ফাহিম, অফিস সহকারী শরিফুল ইসলাম শরিফ, সাবেক শিক্ষার্থী ইউসুফ আলী এবং জকিগঞ্জ সাহিত্য সংসদের সাধারণ সম্পাদক ফজলুর রহমান ফজলু। অনুষ্ঠানে ইসলামিক গজল এবং গান পরিবেশন করেন রাগীব-রাবেয়া ফাউন্ডেশন একুশে সম্মাননা প্রাপ্ত গীতিকবি ও শিক্ষক আব্দুল ওহাব মাস্টার।
অনুষ্ঠান শেষে দোয়া পরিচালনা করেন রাগীব-রাবেয়া জামেয়া ইসলামিয়া সিদাইরগুল, সাহেববাজারের মুহতামিম মাওলানা মাজহারুল ইসলাম আজাদী এবং শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তিলাওয়াত করেন লিডিং ইউনিভার্সিটির ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. ফজলে এলাহী মামুন।
এদিকে, মানবকল্যাণে নিবেদিত প্রতিষ্ঠান রাগীব-রাবেয়া ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে খতমে কোরআন, মরহুমার কবরে দানবীর ড. রাগীব আলী ও পরিবারের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধাঞ্জলি প্রদান এবং কবরস্থান সংলগ্ন লিডিং ইউনিভার্সিটির জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। এতে মহীয়সী নারী বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরীর রুহের মাগফেরাত কামনা এবং দেশবরেণ্য শিল্পপতি দানবীর ড. রাগীব আলীর সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন আলহাজ্ব সৈয়দ হাফিজ মুহাম্মদ আশরাফ আলী। এছাড়া লিডিং ইউনিভার্সিটি জামে মসজিদের সামনে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয় । এতে দোয়া পরিচালনা করেন লিডিং ইউনিভার্সিটি জামে মসজিদের ইমাম হাফিজ মাওলানা আব্দুল কাদির।