তাহিরপুরের তিন শুল্ক স্টেশনে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২:১৫:২৮ অপরাহ্ন
শহীদনূর আহমেদ, তাহিরপুর থেকে ফিরে : সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়নের তিনটি শুল্ক স্টেশন বড়ছড়া, চারাগাঁও এবং বাগলী দিয়ে কয়লা ও চুনাপাথর আমদানিতে প্রতি বছর দেড় থেকে দুইশো কোটি টাকা রাজস্ব আয় হলেও দীর্ঘ দুই যুগে শুল্ক স্টেশনে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ক্ষমতাসীনদের চাঁদাবাজি ও সিন্ডিকেটের ফলে তাদের নিজেদের উন্নয়ন হলেও শুল্কস্টেশনের উন্নয়ন হয়নি-এমন অভিযোগ ব্যবসায়ীদের।
জানা যায়, সুনামগঞ্জের এই তিন শুল্ক স্টেশন দিয়ে প্রতিনিয়ত শতাধিক ভারতীয় ট্রাকে কয়লা ও চুনাপাথর আমদানি করা হয়। এতে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব পাচ্ছে সরকার। এসব মালামাল পরিবহনে শুল্ক স্টেশনগুলোতে আজও নির্মাণ হয়নি পাকা সড়ক। শুল্ক স্টেশনের অবকাঠামোসহ গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত সড়কগুলোও বেহাল অবস্থায় রয়েছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, তাহিরপুর উপজেলার শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়নের বড়ছড়া, চারাগাঁও ও বাগলী শুল্কস্টেশন থেকে সরকারকে বছরে দেড় থেকে দুইশো কোটি টাকা রাজস্ব দেয়া হলেও দীর্ঘদিন ধরে উন্নয়ন বঞ্চিত রয়েছে এই তিন শুল্কস্টেশন।
১৯৯৪ সালে বিএনপি সরকারের আমলে তিনটি শুল্কস্টেশনের কার্যক্রম চালু হয়। যেটি চালুতে ভূমিকা রাখেন প্রয়াত সংসদ সদস্য নজির হোসেন। তৎকালীন সময় শুল্কস্টেশন এলাকার রাস্তাঘাট ও অবকাঠামো উন্নয়ন হলেও বিগত ১৫ বছর উন্নয়নের তেমন কোন ছোঁয়া পড়েনি। শুল্ক স্টেশনে চাঁদাবাজি ও সিন্ডিকেটের মাধ্যমে তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের অনেক নেতা বাড়ি-গাড়ির মালিক বনে গেলেও উন্নয়ন বঞ্চিত রয়ে যায় এই তিন শুল্ক স্টেশন এলাকা। পণ্য খালাসের সড়কগুলোরও বেহাল অবস্থা। ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের খানাখন্দ দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে ট্রাকবোঝাই মালামাল পরিবহন করতে হয় ব্যবসায়ীদের। এতে গুণতে হয় দ্বিগুণ টাকা। ব্যবসায়িদের নেই আবাসন, কিংবা বিশ্রামের ব্যবস্থা। তাই, পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধার অভাবে বিমুখ হন অনেক বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান।
সাধারণ ব্যবসায়ীরা মনে করেন ব্যবসার পরিধি বাড়াতে এই তিনটি শুল্কস্টেশনের রাস্তাঘাট ও অবকাঠামো উন্নয়ন করলে সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধির পাশাপাশি এলাকার আর্থসামাজিকথার উন্নয়ন সাধিত হবে।
তাহিরপুর কয়লা আমাদানিকারক গ্রুপের সহ সভাপতি হাজী শামছুল হক বলেন, বিগত আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কিছু ব্যবসায়ী ও নেতা কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছে। আমাদের মতো ব্যবসায়ীদের কোনঠাসা করে রাখা হয়েছিল। রাস্তাঘাটের কোনো উন্নয়ন হয়নি।
ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ডা. শামছুদ্দিন হাজী ফরিদ উদ্দিন বলেন, শেখ হাসিনা সরকারের আমলে বিএনপি ও জামায়াতের ব্যবসায়ীদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হয়েছে। আবাসনের কোনো সুযোগ সুবিধা নেই। রাস্তার অবস্থা খারাপ থাকায় পণ্য পরিবহনে অধিক ব্যয় করতে হয়।
কয়লা ব্যবসায়ী হাজী ফরিদ উদ্দিন বলেন, সরকার বছরের ২০০ কোটি টাকার রাজস্ব নেয় কিন্তু শুল্ক স্টেশনের উন্নয়নে কোনো টাকা ব্যয় করেনা। ব্যবসায়ীরা নিজেদের মতো করে রাস্তাঘাটের মেরামত করেন। আমরা মনে করি বিষয়টি নিয়ে বর্তমান সরকারকে এখনই ভাবতে হবে।
এদিকে, তাহিরপুর উপজেলার তিন শুল্ক স্টেশনে আদায়কৃত রাজস্বের একটি অংশ সংশ্লিষ্ট শুল্কস্টেশন এলাকার উন্নয়নে ব্যয় করতে সরকারের নিকট দাবি করেন তাহিরপুর আমদানি কারক গ্রুপের সভাপতি খসরুল আলম।