উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বললেন, শুধু দুর্নীতি নয়, সম্পদ নষ্ট করারও বিচার হবে
সিলেট ইনস্টিটিউট অব লাইভস্টক সায়েন্স এন্ড টেকনোলজির যাত্রা শুরু
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ২:৪৬:২৮ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : যাত্রা শুরু হলো সিলেট ইনস্টিটিউট অব লাইভস্টক সায়েন্স এন্ড টেকনোলজির (আইএলএসটি)। শিক্ষার্থীরা এ প্রতিষ্ঠানে প্রাণিসম্পদ বিষয়ে ৪ বছরের ডিপ্লোমা কোর্সে ভর্তি হবার সুযোগ পাবেন। প্রথম বছরের ক্লাস আগামী জানুয়ারি থেকে শুরু হচ্ছে। এরই মধ্যে ৪৫ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে।
গতকাল শনিবার আনুষ্ঠানিকভাবে নবনির্মিত এ ইন্সটিটিউটের উদ্বোধন করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার । এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, এই সরকার কেবল দুর্নীতি নয়, সম্পদ নষ্ট করারও বিচার করবে।
আইএলএসটি-এর সাথে সংশ্লিষ্টরা জানান, সিলেট কৃষি বিশ^বিদ্যালয় সংলগ্ন আলুরতল এলাকায় প্রায় ৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫ একর জায়গায় নির্মিত হয়েছে এই ইনস্টিটিউট। ইনস্টিটিউটের আসন সংখ্যা ৫০টি। এরই মধ্যে ৪৫ সিট এরই মধ্যে ফিলাপ হয়ে গেছে। ইনস্টিটিউটে ৫ তলা একাডেমিক বিল্ডিং সহ ৫ তলা ছাত্র হোস্টেল, ৫ তলা ছাত্রী হোস্টেল ও ৫ তলা শিক্ষক আবাসন রয়েছে। এছাড়া, ৩ তলাবিশিষ্ট প্রাণি হাসপাতাল, মসজিদ, প্রাণি শেড ও ডরমিটরিও রয়েছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ফরিদা আখতার যা বলেন….
বেলা আড়াইটায় প্রধান অতিথি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে ইনস্টিটিউটের উদ্বোধন করেন এবং পরে উদ্বোধনী ফলকের পর্দা উন্মোচন করেন। উদ্বোধন শেষে বৃক্ষরোপণ করে ক্যাম্পাস ঘুরে দেখেন উপদেষ্টা। উদ্বোধন শেষে জেলা দুদ্ধ খামার অডিটোরিয়ামে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপদেষ্টা ফরিদা আখতার চব্বিশের গণআন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, তরুণদের রক্তের বিনিময়ে আমরা ২৪ এর স্বাধীনতা পেয়েছি। বন্দুকের গুলির সামনে শহীদ হয়েছেন, হাত, পা, চোখ হারিয়েছে হাজার হাজার তরুণ। মাত্র ১৫/১৬ বছরের তরুণদের সাহস ও আত্মত্যাগ আমাদের দায়িত্ব আরো অনেকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। তাদের কাছে আমাদের অনেক দায়-ঋণ, আমাদের কোন ভাবেই ভুল করা যাবে না।
তিনি বলেন, আমাদের সবাইকে রাষ্ট্রের জন্য, তরুণদের স্বপ্নের জন্য নিষ্ঠা ও সততার সাথে কাজ করতে হবে। সবাই মিলে নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলবো।
তিনি আরো বলেন, দুর্নীতি তদন্ত করে বিচার-তো হবেই। এছাড়া, অপ্রয়োজনীয় অতিরিক্ত ব্যয়ের প্রকল্প গ্রহণ করে সরকারের সম্পদ নষ্ট করার বিষয় গুলোও দেখা হবে। তিনি বলেন, নতুন চালু হওয়া প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাণিসম্পদ খাতে দক্ষ জনবল তৈরি হবে এবং সিলেটসহ দেশে প্রাণিসম্পদ উৎপাদন কার্যক্রম আরো সুসংগঠিত হবে।
খাদ্য বলতে কৃষিকে বুঝানো হয়-এই মন্তব্য করে তিনি বলেন, সবাই খাদ্য বলতে চাল-ডাল কে বুঝে। প্রাণিসম্পদ এর বিষয়টি বিবেচনায় আনেন না। কিন্তু, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ ছাড়া মানুষের পুষ্টি নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।
তিনি সিলেট অঞ্চল সম্পর্কে বলেন, এই অঞ্চলে প্রায়ই বন্যা দেখা দেয়। ভারতের ছেড়ে দেয়া পানিতে এবং বৃষ্টির পানিতে সিলেটে বছরে কয়েক বার বন্যা হচ্ছে। তাই এসময় প্রাণিসম্পদ রক্ষায় গোখাদ্য ও ঔষুধ সরবরাহ এবং প্রাণি আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণের বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে কর্মকর্তাদের বলেন। তিনি পশু পালনে নারীদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়নের সুযোগ রয়েছে বলে উল্লেখ করেন।
ইনস্টিটিউটের শ্রেণি কার্যক্রম শুরুর পর তিনি আবারো আসবেন উল্লেখ করে বলেন, ইনস্টিটিউটের সুযোগ সুবিধা পুরোপুরি কাজে লাগাতে হবে। শিক্ষার্থী যাতে জ্ঞান অর্জন ও প্রশিক্ষণ গ্রহণের মাধ্যমে নিজেদের ভবিষ্যতের জন্য গড়ে তুলতে পারে; সেদিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। এই প্রতিষ্ঠান মানুষকে সম্পদে পরিণত করতে ভূমিকা রাখবে বলে তিনি প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. মোহাম্মদ রেয়াজুল হকের সভাপতিত্ব অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এটিএম মোস্তফা কামাল ও মো. তোফাজ্জল হোসেন।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় পরিচালক ডা. মারুফ হোসেন। প্রকল্পের বিস্তারিত তুলে ধরেন প্রকল্প পরিচালক ডা. জাহাঙ্গীর আলম।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সিলেটের জেলা প্রশাসক মো: শের মাহবুব মুরাদসহ সিলেট বিভাগ, জেলা ও উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের কর্মকর্তাবৃন্দসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে সিলেট বিভাগে প্রাণিসম্পদ দপ্তরের কার্যক্রম ও উৎপাদন এবং সংকট বিষয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বালাগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আ জ ম সালাহ উদ্দিন।