৯ বছরে টিলা ধসে ৫১ জনের প্রাণহানি
সিলেটে টিলা কাটার ফলে লোকালয়ে থাকতে পারছে না বন্যপ্রাণি
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:১০:৩১ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার: সিলেটে পাহাড়-টিলা কাটার ক্ষেত্রে কোন আইন মানা হচ্ছে না। এ অবস্থায় বন্যপ্রাণি তাদের আবাসস্থল হারাচ্ছে। অনেকক্ষেত্রে প্রাণিরা চলে আসছে লোকালয়েও। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)-এর তথ্য বলছে, ২০১২ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত -৯ বছরে সিলেটে টিলা ধসে ৫১ জনের প্রাণহানি হয়েছে।
বেলা’র সিলেট বিভাগীয় সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট শাহ সাহেদা আখতার জানান, এসএ রেকর্ড অনুযায়ী সিলেটে ২০০৯ সালে টিলার সংখ্যা ছিল ১০২৫ টি। বর্তমানে এ সংখ্যা এসে পৌঁছেছে মাত্র ৫৬৫ টি’তে। এই তথ্য বিশ্লেষণ করলেই অনুধাবন করা যায় কত খানি আইনের সফল বা কঠোর প্রয়োগ হচ্ছে। টিলা মূলত ধ্বংস হয় সরকারি উদ্যোগ, ব্যক্তি উদ্যোগ, শিল্প প্রতিষ্ঠান নির্মাণ, কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা, আইন প্রয়োগের অভাবে। টিলাকে পাথর কোয়ারী হিসেবেই ইজারা প্রদান করা হচ্ছে সরকারিভাবে। এ প্রসঙ্গে তিনি কোম্পানীগঞ্জের শাহ আরপিন টিলা ইজারা প্রদানের বিষয়টি আলোকপাত করেন। মানুষের অপরিনামদর্শী কর্মকান্ডের কারণে টিলা সংরক্ষণ করা যাচ্ছে না। এমনটি টিলাকাটার প্রভাব পড়ছে চা শিল্পেও। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মধ্যে সমন্বয়হীনতা, রাজনৈতিক প্রভাব, ব্যক্তি স্বার্থের প্রাধান্য ও প্রলম্বিত আইনি প্রক্রিয়ার কারণে- টিলা কাঁটা রোধ করা যাচ্ছে না বলে তিনি মন্তব্য করেন।
বেলার আলোচনা সভা
গতকাল রোববার সিলেটের একটি অভিজাত হোটেলের কনফারেন্স হলে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) উদ্যোগে ‘প্রকৃতি, পরিবেশ ও জনস্বার্থে পাহাড়/টিলা সংরক্ষণের গুরুত্ব: আমাদের করণীয়’ শীর্ষক এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
বেলার কো-অর্ডিনেটর হাসানুল বান্নার সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) হোসাইন মো. আল-জুনায়েদ।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে রাখেন-সিলেট বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মো. ফেরদৌস আনোয়ার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মো. রাসেলুর রহমান। এ সময় আরো বক্তব্য রাখেন শ্রীলঙ্কার পরিবেশ ন্যায় বিচার কেন্দ্রের আইনি কর্মকর্তা সমাধি হাসনানী প্রেমাসীরী।
আলোচনা সভায় বক্তারা আরো বলেন, যে জিনিস সৃষ্টি করার ক্ষমতা আমার নেই, সেটা ধ্বংস করার অধিকারও আমার নেই। তারা বলেন, টিলা যদি কেটেই ফেলা হয়, তাহলে তো সংরক্ষণের জন্য আমার আর কিছু থাকবে না। জরুরী পদক্ষেপ হিসেবে টিলা কাঁটাকে বন্ধ করতে হবে। সিলেটে পাহাড় কাঁটা হচ্ছে। এটা একটা বড় সমস্যা।
মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন-সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা বিশ্বজিত দেব, সিলেট সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মাহবুবুল ইসলাম, সিলেট প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ইকবাল সিদ্দিকী, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক প্রফেসর ড. তাহমিনা ইসলাম ও ড. শফিকুর রহমান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সিলেটের অতিরিক্ত উপপরিচালক মোহাম্মদ আনিছুজ্জামান, অ্যাডভোকেট মো. ইরফানুজ্জামান চৌধুরী, সিলেটের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর এডভোকেট কামাল হোসেইন, সুপ্রীমকোর্টের আইনজীবী সৈয়দ কাউসার, এডভোকেট মোহিত লাল ধর, সাজিদুর রহমান, ব্লু-বার্ড স্কুলের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক নাসিমা চৌধুরী, জৈন্তা ছিন্নমূল সংস্থা (জেছিস)-এর এটি এম বদরুল ইসলাম, সত্যজিৎ কুমার দাস, জৈন্তাপুরের নাজমুল ইসলাম, সাংবাদিক সাদিকুর রহমান সাকি, আইডিয়ার পরিচালক নাজিম আহমদ, নাসির উদ্দিন আহমদ প্রমুখ।