সিলেট-ম্যানচেস্টার রুটে বিমানের ফ্লাইট বন্ধের শঙ্কা প্রবাসীদের
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:১১:০৭ অপরাহ্ন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জাতীয় পতাকাবাহী বাংলাদেশ বিমানের সিলেট-ম্যানচেষ্টার ফ্লাইট নিয়ে প্রবাসীদের মধ্যে এক ধরনের শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
একটি সূত্র জানায়, আগামী ২৭ এপ্রিলের পর থেকে পোর্টালে এ রুটের ফ্লাইটের কোন টিকেট মিলছে না। প্রবাসীরা বলছেন, এটা এ রুটের ফ্লাইট বন্ধের পায়তাঁরার অংশ। এর অংশ হিসেবে প্রবাসীরা যুক্তরাজ্যের পাশাপাশি দেশেও আন্দোলনমুখর। ইউকে এনআরবি সোসাইটির একটি প্রতিনিধি দল দেশে অবস্থান করে এ বিষয়ে জনমত তৈরির চেষ্টা করছে। এ রুটের ফ্লাইট বন্ধের বিপক্ষে এসোসিয়েশন অব ট্রাভেলস এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব)সহ সিলেটের সচেতন মহল।
একটি সূত্র জানায়, মূলত হজ্ব ফ্লাইট পরিচালনার জন্য ২৭ এপ্রিল হতে এ রুটের ফ্লাইট বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিমান কর্তৃপক্ষ। পর্র্যায়ক্রমে এই ফ্লাইট বন্ধেরও সিদ্ধান্ত ছিল তাদের। কিন্তু, জনমতের চাপে বিমান তাদের এ সিদ্ধান্ত থেকে অনেকটা সরে এসেছে।
বিমানের একটি দায়িত্বশীল সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে দৈনিক সিলেটের ডাককে জানিয়েছে, সিলেট-ম্যানচেস্টার ফ্লাইট বন্ধ নয়, চালু থাকবে। হজ্ব ফ্লাইটের জন্য ২৭ এপ্রিল থেকে বন্ধ থাকবে এ রুটের ফ্লাইট। হজ্ব ফ্লাইট শেষে ১১ জুলাই থেকে এ রুটে ফের সচল হবে বলে জানিয়েছে ওই সূত্র। ওইদিন থেকে সিলেট-ম্যানচেস্টার ফ্লাইটের শিডিউলও চূড়ান্ত করে রেখেছে বিমান।
এদিকে, সিলেট ম্যানচেস্টার রুটে বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট চালু না রাখলে রেমিট্যান্স বন্ধের হুমকি দিয়েছেন ইউকে এনআরবি সোসাইটির নেতারা। তারা এও বলেন, সিলেট-ম্যানচেস্টার রুট কখনোই অলাভজনক হয়নি। বরং গত ৫ মাস ধরে এ রুটে দ্বিগুণ মূল্য দিয়েও টিকিট মিলছে না। অথচ একটি সিলেটবিদ্বেষী মহল অলাভজনক রুট দেখিয়ে এ ফ্লাইট বন্ধ করার চক্রান্ত চালাচ্ছে। বিমানের এই টালবাহানা কোনোভাবে সহ্য করার নয় বলে জানান তারা।
এনআরবি সোসাইটির সংবাদ সম্মেলন
‘ইউকে এনআরবি সোসাইটি’র নেতৃবৃন্দ গতকাল শনিবার রাত ৮টায় সিলেট নগরীর পূর্ব জিন্দাবাজারস্থ একটি অভিজাত রেস্টুরেন্টে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন।
সংবাদ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ বলেন- সিলেট-ম্যানচেস্টার রুটে বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট নিয়ে যুক্তরাজ্য প্রবাসীদের সঙ্গে কোনো টালবাহানা বা নাটকীয়তা সহ্য করা হবে না। প্রয়োজনে নর্থ ইংল্যান্ডে অবস্থানরত সিলেটিদের নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে রেমিট্যান্স বন্ধ করে দেওয়া হবে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ‘ইউকে এনআরবি সোসাইটি’র পরিচালক এম আহমদ জুনেদ। তিনি বলেন- দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর ২০২০ সালে দ্বিতীয় দফা চালু হয় সিলেট-ম্যানচেস্টার রুটে বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট। ফ্লাইটটি অত্যন্ত জরুরি। এ রুটে নর্থ ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টার, লুটন, বার্মিংহাম, ওয়েলস, স্কটল্যান্ডসহ বিভিন্ন এলাকার প্রায় ৩ লাখ সিলেটি পরিবার পরিজন নিয়ে যাতায়াত করেন। ম্যানচেস্টার এয়ারপোর্ট থেকে ১০ ঘণ্টায় সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি সুফল ভোগ করছেন বয়ো:বৃদ্ধ ও শিশু যাত্রীরা। কিন্তু প্রায় দুই মাস আগে বাংলাদেশ বিমান কর্তৃপক্ষ ‘অলাভজনক’ এর অজুহাতে হঠাৎ করে এ রুটের ফ্লাইটের অনলাইন টিকিটিং সিস্টেম বাতিল করে দেয়। বিষয়টি নিয়ে নর্থ ইংল্যান্ডে বসবাসকারী সিলেটিদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। সেই প্রতিক্রিয়া তীব্র প্রতিবাদে রূপ নিচ্ছে।
প্রথম দিনই ম্যানচেস্টারে কয়েকশ’ প্রবাসী একত্রিত হয়ে প্রতিবাদ জানান। একই সঙ্গে ম্যানচেস্টারস্থ বাংলাদেশের উপ-দূতাবাস ও বিমানের কর্মকর্তাদের কাছে স্মারকলিপি এবং চলতি বছরের প্রথম দিকে বাংলাদেশে এসে ফ্লাইট চালু রাখার পক্ষে জোরালো দাবি উপস্থাপন করা হয়। নেতৃবৃন্দ বিমান বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও এমডিসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে দেখা করে ফ্লাইট অব্যাহত রাখার যৌক্তিক দাবি তুলে ধরেন। অপরদিকে, এই দাবির সঙ্গে একাত্ম হয়ে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র ও বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরী গত বুধবার বিমানের চেয়ারম্যান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরীর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন। অবশ্য এর প্রেক্ষিতে বিমানের চেয়ারম্যান ফ্লাইট চালু রাখার আশ্বাস দেন।
এম আহমদ জুনেদ তাঁর বক্তব্যে আরও বলেন- বর্তমানে সপ্তাহে দুটি ফ্লাইট চালু আছে সিলেট-ম্যানচেস্টার রুটে। কিন্তু আগামী হজ মৌসুমের জন্য এই দুটি ফ্লাইট বন্ধ রাখতে চাচ্ছে বিমান বাংলাদেশ। এ ক্ষেত্রে দাবি- পবিত্র হজের জন্য একটি ফ্লাইট নিয়ে গিয়ে একটি ফ্লাইট ম্যানচেস্টার রুটে চালু রাখা প্রয়োজন। কারণ, ঈদুল আযহায় কুরবানিসহ ঈদ পালনে বিপুল সংখ্যক প্রবাসী সিলেট আসেন। এক সঙ্গে দুটি ফ্লাইট বাতিল করা হলে এসব প্রবাসী চরম ভোগান্তিতে পড়বেন। এসময় সোসাইটির যৌক্তিক দাবির প্রতি একাত্মতা পোষণ করেন বিশিষ্ট সাংবাদিক, দৈনিক সিলেটের ডাক এর অতিথি সম্পাদক নজরুল ইসলাম বাসন। তিনি বলেন, বিমান কর্র্তৃপক্ষ এই রুটকে অলাভজন বলছেন। যার সাথে বাস্তবতার মিল নেই। ২০২৪ সালেই বিমান কর্তৃপক্ষ ২৮২ কোটি টাকা লাভ করেছে। এটি সিলেটবিদ্বেষী আচরণ ছাড়া আর কিছু নয়। এই অবস্থার পরিবর্তন না হলে সিলেটেরই ক্ষতিসাধিত হবে সবচেয়ে বেশি। এই আচরণের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে পরবর্তী জেরারেশনের উপর। তারা দেশে আসার অভিপ্রায় হারিয়ে ফেলবে। এজন্য বড় ভূমিকা রাখতে পারে গণমাধ্যম। আমাদের অস্তিত্বের শেষ জায়গাটা সাংবাদিক।
‘ইউকে এনআরবি সোসাইটি’র নেতৃবৃন্দ জানান- সিলেট-ম্যানচেস্টার বিমানের রুট কখনোই অলাভজনক নয়। কিছুসংখ্যক মধ্যস্বত্বভোগীর কারণে যাত্রীরা বেশি টাকা দিয়ে পর্যন্ত টিকিট কিনেন। বিমান সেই টাকা কেন পায় না, সেটি তাদেরই খুঁজে বের করতে হবে। সিলেট-ম্যানচেস্টার রুটের ফ্লাইট নিয়ে বিমান কর্তৃপক্ষ প্রবাসীদের সঙ্গে কোনো টালবাহানা বা নাটকীয়তা করলে নর্থ ইংল্যান্ডে থাকা প্রবাসীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে রেমিটেন্স বন্ধ করে দেয়ারও হুশিয়ারি দেন নেতৃবৃন্দ। সুতরাং দ্রুত অনলাইন টিকিটিং সিস্টেম চালুর জোড়ালো দাবি উঠে। সিলেট-ম্যানচেস্টার রুটে বিমানের ফ্লাইট চালু রাখার বিষয়ে সাংবাদিকদের মাধ্যমে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টাদের দৃষ্টি আকর্ষণ এবং কার্যকর পদক্ষেপ কামনা করেন ‘ইউকে এনআরবি সোসাইটি’র নেতৃবৃন্দ।