হাজী রাশীদ আলী উচ্চবিদ্যালয়ের সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন
‘দানবীর ড. রাগীব আলী ছিলেন বলেই বিশ্বময় শিক্ষার আলো ছড়িয়ে পড়ছে’
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:৪০:১২ অপরাহ্ন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বর্ণিল আয়োজনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল সিলেটের দক্ষিণ সুরমার কামাল বাজারস্থ হাজী রাশীদ আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের সুবর্ণ জয়ন্তী অনুষ্ঠান। মনোমুগ্ধকর এই অনুষ্ঠানের মধ্যমণি ছিলেন বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা উপমহাদেশের প্রখ্যাত দানবীর অসংখ্য শিক্ষা ও সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান দানবীর ড. রাগীব আলী। পুরো অনুষ্ঠানই ছিলো দানবীর ড. রাগীব আলীর প্রশংসায় মুখর। বক্তারা বলেন, ‘সিলেটের একজন দানবীর ড. রাগীব আলী ছিলেন বলেই শিক্ষার আলো আজ ছড়িয়ে পড়ছে বিশ^ময়। বিশেষ করে বৃহত্তর কামালবাজার তথা রাগীব নগর শিক্ষানগরী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। এলাকার এই আমূল পরিবর্তনের মহানায়ক দানবীর ড. রাগীব আলী। তাকে রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মানিত করা এখন সময়ের দাবি।
উৎসবমুখর পরিবেশে গতকাল শনিবার বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত হয় ৫০ বছর পূর্তির এই অনুষ্ঠান। দিনব্যাপী এই উৎসবে ছিল পুনর্মিলনী, সংবর্ধনা, আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, স্মৃতিচারণমূলক আয়োজন ও র্যাফেল ড্র। অনুষ্ঠানে বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও রাগীব-রাবেয়া ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান দানবীর ড. রাগীব আলী ও বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ রমজান আলীকে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠানে দানবীর ড. রাগীব আলী বলেন, ৫০ বছরের ইতিহাসে হাজী রাশীদ আলী উচ্চ বিদ্যালয় অগণিত মেধাবী শিক্ষার্থী তৈরি করেছে। প্রান্তিক এলাকার সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের জন্য এটি শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি নৈতিক শিক্ষা প্রদানেও ভূমিকা রেখে চলেছে। বিদ্যালয়টি শুধু শিক্ষার জন্যই নয়, সিলেটের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নেও অবদান রেখে চলেছে। তিনি বলেন, এই প্রতিষ্ঠান এমনি এমনি এতদূর আসেনি। এর পিছনে রয়েছে সুশীল বাবু ও রমজান আলীর মত দক্ষ প্রধান শিক্ষকের অবদান। যারা নিজেদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময় ব্যয় করেছে বিদ্যালয়ের এগিয়ে যাওয়ায়। দানবীর ড. রাগীব আলী আরো বলেন, আমার প্রাপ্তি অপ্রাপ্তির সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে। আমার আর পাওয়ার কিছু নেই। আমি ভালোবাসি জন্মভূমি ও এর মানুষকে। নতুন প্রজন্মকে সুশিক্ষার জন্য সকল পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করে দিয়েছি। বিশ^বিদ্যালয়, কলেজ, হাইস্কুল, মাদরাসা, হাসপাতাল সবই আছে। এখন শুধু তোমাদের তা গ্রহণ করার পালা। আমি শুধু সকলের ভালোবাসা চাই। পরকালীন মুক্তি চাই। এই দোয়া পেলেই আমি মনে করি আমার সকল কাজের সার্থকতা আসবে। তিনি বলেন, জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত মানুষের জন্য কাজ করে যেতে চাই।
গতকাল শনিবার সকাল থেকে সূবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ। প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং সুধীজনদের অংশগ্রহণে পরিণত হয় মিলন মেলায়। প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা একে অপরের সঙ্গে দেখা করে স্মৃতিরোমন্থন করেন। হারিয়ে যান শৈশবে। অনুষ্ঠানের সাংস্কৃতিক পর্বে শিক্ষার্থীদের পরিবেশনা ছিল মনোমুগ্ধকর।
হাজী রাশীদ আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন পরিষদের আহবায়ক মো. আব্দুর রকিবের সভাপতিত্বে সংবর্ধিত অতিথির বক্তব্য রাখেন হাজী রাশীদ আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও রাগীব-রাবেয়া ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান দানবীর ড. রাগীব আলী এবং বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ রমজান আলী।
আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা: আবেদ হোসেন বলেন, দানবীর ড. রাগীব আলী দেশের অন্যতম শিক্ষা ও সমাজকল্যাণমূলক ব্যক্তিত্ব। তিনি বাংলাদেশের শিক্ষা খাতে অসামান্য অবদান রেখেছেন। ১৯৭৪ সালে হাজী রাশীদ আলী উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে তিনি এলাকায় শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, দানবীর ড. রাগীব আলী কেবল সিলেট কিংবা দেশ নিয়ে ভাবেননি; যিনি এলাকার মানুষকে ভালোবাসেন সবচেয়ে বেশি। যার জন্য দেশখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো গড়ে তুলেছেন নিজের এলাকায়। পুরো এলাকাকে স্যাটেলাইট সিটিতে রূপান্তর করেছেন। দানবীর রাগীব আলীর মত ব্যক্তিত্ব সমাজে বিরল। আমরা তার সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু কামনা করি।
সংবর্ধিত অতিথি অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো: রমজান আলী তার বক্তব্যে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তিনি দীর্ঘ ৩৬ বছরের চাকুরীকালীন স্মৃতিচারণ করে বলেন, একজন দানবীর ড. রাগীব আলী পাশে ছিলেন বলেই বিদ্যালয়টি এতদূর এগিয়েছে। বিদ্যালয়ের উন্নয়নে কখনো পিছপা হননি। না চাইতেও অনেক কিছু দিতেন। বিদ্যালয়টির নামকরণ এলাকাবাসী ভালোবেসে দানবীর ড. রাগীব আলীর বাবার নামে নামকরণ করেছিলেন। দানবীর রাগীব আলীর এই অবদান কখনো ভুলার নয়। মো: রমজান আলী বিদ্যালয়ের উন্নয়নে প্রয়াত মহীয়সী নারী বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরীর অবদানের কথাও স্মরণ করেন।
দিনব্যাপী চলা অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন পরিষদের যুগ্ম আহবায়ক আজম আলী, সদস্য সিদ্দিকুর রহমান খালেদ, সদস্য সচিব আমিনুল ইসলাম ও সদস্য সোহেল আহমদ। অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথির বক্তব্য রাখেন লিডিং ইউনিভার্সিটির ব্যবসা প্রশাসন অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. বশির আহমদ ভূঁইয়া, দৈনিক সিলেটের ডাক-এর অতিথি সম্পাদক নজরুল ইসলাম বাসন, ১৯৭১ সালের বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ সোলেমানের ছোট ভাই ও হাজী রাশীদ আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি মাওলানা বুরহান হুসেইন, ১৯৭১ সালের বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ এনামের বড় ভাই মো. সুনু মিয়া, হাজী রশিদ আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বিশ্বনাথ চক্রবর্তী, দানবীর ড. রাগীব আলীর নাতি সৈয়দ আজমাইন আব্দুল হাই, ১০নং কামাল বাজার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান একরামুল হক, স্টারলাইট একাডেমির পরিচালক নুরুল ইসলাম বাবুল, সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন পরিষদের যুগ্ম আহবায়ক মো. মুহিবুর রহমান, মো. এনামুল হক মাক্কু, মো. আবুল হোসেন। সুবর্ণ জয়ন্তী অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন আবুল মনাফ, শামসুল ইসলাম, মাসুক আহমদ, সুমন আহমদ, আমিনুল ইসলাম, আহমদ, আশরাফ, ফেরদৌস, আব্দুল করিম, কবি মকবুল আলী, রিয়াজ মিয়া, সুহেল আহমদ, শামসুদ্দীন শুভ, শাহীন, হিরন, বেলাল, শেখ লায়েছ আহমদ সহ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা। অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন শেখ শফি উদ্দিন ও গীতা পাঠ করেন পূজা রানী নাথ। অনুষ্ঠানে ‘অর্ধ শতকের অর্ক’ শিরোনামে একটি স্মারকের মোড়ক উন্মোচক করেন দানবীর ড. রাগীব আলী।