এক সপ্তাহের মধ্যে বকেয়া পরিশোধের প্রতিশ্রুতি পেয়েছি : জেলা প্রশাসক
সংকটে চা শিল্প : মজুরি-রেশন পরিশোধ করতে পারছে না অনেক বাগান
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ এপ্রিল ২০২৫, ৫:২৩:০৪ অপরাহ্ন

স্টাফ রিপোর্টার : সিলেটে বকেয়া মজুরি, রেশন পরিশোধসহ ১১ দফা দাবিতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় অভিমুখে বিক্ষোভ করেও ঈদের আগে পাওনা টাকা পেলেন না চা-শ্রমিকরা। ফলে পরিবার পরিজন নিয়ে তারা মানবেতর জীবন পার করছেন। অনেক পরিবারের শিশুরা স্কুলেও যেতে পারছে না। বাগান কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে জেলা প্রশাসক বলছেন, ব্যাংকের জটিলতায় ঈদের আগে টাকা পাওয়া যায়নি। তবে, এক সপ্তাহের মধ্যে টাকা পরিশোধের আশ্বাস আমরা পেয়েছি।’
চা-শ্রমিকরা এমনিতে সুবিধাবঞ্চিত। তার মধ্যে টানা ১৪ সপ্তাহ ধরে মজুরি ও রেশন পাচ্ছেন না বুরজান চা-বাগান, বুরজান চা কারখানা, ছড়াগাং চা-বাগান ও কালাগুল চা- বাগানের শতাধিক শ্রমিক। বেতন-ভাতার দাবিতে তাঁরা একাধিকবার বিভিন্ন দপ্তরে জানিয়েছেন। কিন্তু তাঁদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
সর্বশেষ গত ২৪ মার্চ দুপুরের দিকে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন চা-শ্রমিকেরা। সেই বিক্ষোভ কর্মসূচিতে সিলেটের ২২টি বাগানের চা-শ্রমিক ও নেতারা অংশ নেন।
‘চা-শ্রমিক ও চা-বাগান রক্ষা কমিটির’ ব্যানারে এ কর্মসূচি হয়। পরে বেলা দেড়টার দিকে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দেয়া হয়।
চা-শ্রমিকদের দাবিগুলোর মধ্যে আছে-বন্ধ থাকা মজুরি, বাগান সরদারদের মাসিক বেতন, চা-শ্রমিকদের সাপ্তাহিক রেশন, বাগানের মাসিক বেতনপ্রাপ্ত শ্রমিকদের বেতন প্রদান ও চা-শ্রমিকদের কর্তনকৃত পিএফ টাকা ফান্ড অফিসে জমা, শ্রমিকদের চিকিৎসা ও ওষুধ প্রদান, শ্রমিকদের নিয়মিত বসতবাড়ি নির্মাণ, টিন, কাঠ, দরজা, জানালা প্রদান, শ্রমিকদের এরিয়া বকেয়া টাকা ও বকেয়া বোনাসের টাকা প্রদান, আইন মোতাবেক খাবার পানি ও স্যানিটেশন প্রদান এবং চা-বাগানের অবসরে থাকা শ্রমিকদের ফান্ডের টাকা প্রদান।
বিক্ষোভ মিছিলটি নগরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে সিলেট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পৌঁছায়। এ সময় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে চা-শ্রমিকদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে বক্তব্য দেন সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী ও সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কাশেম।
শ্রমিকদের পক্ষ থেকে বক্তব্য দেন ‘চা-শ্রমিক ইউনিয়ন সিলেট ভ্যালির’ সভাপতি রাজু গোয়ালা, সাধারণ সম্পাদক দেবু বাউরি, মালনীছড়া চা-বাগান পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি জিতেন সমরসহ আরো অনেকে।
বিক্ষুব্ধ চা শ্রমিকেরা জানিয়েছেন, বুরজান চা-কোম্পানির অধীনে থাকা ২ হাজার ৫০০ শ্রমিকের বেতন- রেশন ও বোনাস বকেয়া পড়ে আছে। বকেয়া বেতন ও রেশন না পাওয়াতে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন পার করছেন তারা।
মজুরি না পেয়ে তারা মানবেতর জীবন পার করছেন। পাশাপাশি রেশন বন্ধ থাকায় অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন। শ্রমিক পরিবারের সদস্য শিশুরাও পড়াশোনা দূরের কথা, তিন বেলা খাবার নিয়ে কষ্ট করছে। এমন অবস্থায় চা-শ্রমিকেরা একযোগে কর্মবিরতিতে গেলে এর দায় বাগান কর্তৃপক্ষকেই নিতে হবে। শ্রমিকদের মজুরি প্রদান করে দ্রুত সময়ের মধ্যে বিষয়টি সুরাহা করার আহ্বান জানানো হয়। কিন্তু ঈদের কয়েকদিন পার হলেও বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়নি। যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে সংশ্লিষ্ট বাগান কর্তৃপক্ষের কাউকে পাওয়া যায়নি। তবে সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ বলেছেন, ‘আমরা সব বাগান কর্তৃপক্ষের সাথে বসেছি এবং শ্রমিকদের সুবিধার্থে একটি কমিটিও গঠন করেছি। তবে ঈদের আগে বকেয়া পরিশোধ না হলেও আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সব পরিশোধের প্রতিশ্রুতি পেয়েছি।’