ডা. জুবাইদার প্ল্যাকার্ড হাতে সিলেটে স্বাগত মিছিল
খালেদা জিয়ার ‘আবেগঘন’ ফেরা আজ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ মে ২০২৫, ৩:৫৪:১১ অপরাহ্ন

স্টাফ রিপোর্টার : লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে বাংলাদেশের উদ্দেশে যাত্রা করেছেন বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। গতকাল সোমবার (৫মে) লন্ডন সময় বিকেল ৪টা ৩৫ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় রাত ৯টা ৩৫ মিনিট) কাতারের আমীরের দেওয়া বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন তিনি।
বাংলাদেশ সময় আজ মঙ্গলবার (৬মে) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবেন খালেদা জিয়া। দুই পূত্রবধূ ডা. জুবাইদা রহমান ও শর্মিলা রহমান সিঁথিকেও সঙ্গে নিয়ে আসছেন তিনি। প্রায় ১৭ বছর পর দেশে ফিরছেন ডা. জুবাইদা রহমান। যুক্তরাজ্য বিএনপি সভাপতি এম এ মালেক সংবাদ মাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
বেগম খালেদা জিয়া ও ডা: জুবাইদা রহমানকে স্বাগত জানিয়ে গতকাল সিলেটেও বেশ কয়েকটি মিছিল হয়েছে। মিছিলকারীদের হাতে ডা: জুবাইদা রহমানের প্লেকার্ড শোভা পায়।
সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, লন্ডন যাওয়ার আগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে দলের নেতাকর্মীরা সময়ে সময়ে চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় সময় পার করেছেন। লন্ডনে চিকিৎসা নেয়ার পর তার শারীরিক অবস্থার অনেকটা উন্নতি হয়েছে। তিনি সুস্থ হয়ে দেশে ফিরছেন এই বার্তায় আবেগ কাজ করছে নেতাকর্মীদের মাঝে। তারা উৎফুল্ল, উচ্ছ্বসিত। একইসঙ্গে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের সহধর্মিণী জুবাইদা রহমান দীর্ঘ সময় পর দেশে আসছেন। ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের উদ্দেশ্যমূলক মামলা ও হয়রানির কারণে তিনি দেশে ফিরতে পারেননি। তার এই ফেরা নিয়েও স্বজন এবং দলীয় নেতাকর্মীরা উচ্ছ্বসিত। গতকাল বাংলাদেশ সময় রাত নয়টার পর লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে খালেদা জিয়া ও জুবাইদা রহমানকে পৌঁছে দেন তারেক রহমান। মা’কে বিদায় জানানোর সময় এক আবেগঘন পরিবেশ তৈরি হয়। সেখানে উপস্থিত নেতাকর্মী ও স্বজনদের সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায় খালেদা জিয়াকে। তিনি সবার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করে বিমানে ওঠেন। কাতারের আমীরের দেয়া বিশেষ এয়ার এম্বুলেন্সটি কাতারের দোহা হয়ে ঢাকায় পৌঁছাবে আজ সকাল সাড়ে ১০ টায়।
ওদিকে বিএনপি চেয়াপারসনের গুলশানের বাসা ‘ফিরোজা’ প্রস্তুত করা হয়েছে। দেশে ফিরে তিনি এ বাসায় উঠবেন। অন্যদিকে জুবাইদা রহমান ধানম-িতে বাবার বাসা ‘মাহবুব ভবনে’ উঠবেন। তার জন্য নতুন করে বাসার আঙিনা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং প্রয়োজনীয় সংস্কার করা হয়েছে।
সোমবার লন্ডনে স্থানীয় সময় ২টা ১০ মিনিটে তারেক রহমান নিজেই গাড়ি ড্রাইভ করে মা’কে নিয়ে বাসা থেকে বিমানবন্দরের উদ্দেশে রওনা দেন বলে জানিয়েছেন খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন। বাংলাদেশ সময় ৭টা ৪০ মিনিটে বিমানবন্দরে পৌঁছান।
খালেদা জিয়ার শারীরিক অসুস্থতার কথা জেনে কাতারের আমীর শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি রাজকীয় বহরের বিশেষ বিমান দিয়েছিলেন লন্ডন যাওয়ার জন্য। একই এয়ার এম্বুলেন্সে তিনি ঢাকা ফিরছেন। এয়ার এম্বুলেন্সে কাতারের আমীরের একটি মেডিকেল টিমও থাকবে। এছাড়া খালেদা জিয়ার ফেরার সফরে সঙ্গী রয়েছেন ১৪ জন।
বিএনপি’র সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, স্থানীয় সময় সোমবার বিকাল ৪টা ১০ মিনিটে লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে এয়ার এম্বুলেন্সটি রওনা দেয়। দোহার হামাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায় স্থানীয় সময় ১টা ২৫ মিনিটে। যাত্রাবিরতি শেষে সেখান থেকে ২টা ৩০ মিনিটে রওনা হয়ে উড়োজাহাজটি ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ১০টায় পৌঁছানোর কথা।
১৭ বছর আগে তারেক রহমানেরে সঙ্গে জুবাইদা রহমান দেশ ছেড়েছিলেন একমাত্র মেয়ে জায়মা রহমানকে নিয়ে। এক-এগারোর সরকার এবং পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের শেখ হাসিনার সরকারের রোষানলে পড়েছিলেন স্বামীর সঙ্গে ডা. জুবাইদাও।
২০০৮ সালে শিক্ষা ছুটি নিয়ে লন্ডন যাওয়া পরে শেখ হাসিনার সরকার তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করে। লন্ডন যাওয়ার পরে জুবাইদা ইম্পেরিয়াল কলেজ থেকে মেডিসিনে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।
ওদিকে দলীয় সূত্র জানিয়েছে, জুবাইদা রহমানের মা সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানু গত কয়েকদিন আগে রাজধানীর একটি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তার একটি অপারেশন হবে। এই সময়ে তিনি মেয়েকে পাশে চাইছেন। সূত্র জানায়, সব মিলিয়ে মাস খানেক ঢাকায় অবস্থান করতে পারেন জুবাইদা রহমান।
অভ্যর্থনা জানাতে প্রস্তুত বিএনপি: খালেদা জিয়ার দেশে প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের অবস্থান নিয়ে দিক-নির্দেশনা দিয়েছে বিএনপি। ইতিমধ্যে প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ বিষয়ে বলেন, মঙ্গলবার এসএসসি’র পরীক্ষা আছে একটা সাবজেক্টে, যেহেতু ঢাকা বিমানবন্দর থেকে কাকলী পথ দিয়ে ম্যাডাম গুলশানের বাসায় যাবেন। আমি সকলকে অনুরোধ করতে চাই, রাস্তার ওপরে যেন কেউ না দাঁড়ায়। যারা অভ্যর্থনা জানাবেন তারা ফুটপাতে দাঁড়িয়ে যেন ম্যাডামকে অভ্যর্থনা জানান। দলের নেতাকর্মীরা যাতে জাতীয় ও বিএনপি পতাকা হাতে নিয়ে ম্যাডামকে অভ্যর্থনা জানাবেন, এটা আমরা নির্দেশনা দিয়েছি।
খালেদা জিয়া-জুবাইদা রহমানের জন্য সমন্বিত নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ডিএমপি’র ১০ ট্রাফিক নির্দেশনা সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও তার পুত্রবধূ ডা. জুবাইদা রহমানের নিরাপত্তায় ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি) ও র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সমন্বয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। নিরাপত্তার মূল দায়িত্ব পালন করবে ডিএমপি। তাদের সঙ্গে থাকবেন এসবি ও র্যাব সদস্যরা। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য রোববার সকালে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কোর কমিটির সভায় আলোচনা করে ডিএমপি কমিশনারকে নির্দেশনা দেয়া হয়। পরে এ নিয়ে ডিএমপি সদরদপ্তরে এক বৈঠক করা হয়। বৈঠকে ডিএমপি’র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পাশাপাশি র্যাব ও এসবি’র প্রতিনিধিদল উপস্থিত ছিলেন। তাদের আগমন উপলক্ষে বিপুল পরিমাণ মানুষের সমাগম হওয়ার আশঙ্কা ও সড়কের যানজট নিরসনে জনসাধারণের ভোগান্তি এড়াতে ১০টি নির্দেশনা দিয়েছে। ডিএমপি’র সূত্র বলেছে, সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে নির্দেশনার পরই ডিএমপি থেকে খালেদা জিয়া ও জুবাইদা রহমানের নিরাপত্তা নিশ্চিতের যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। বিমানবন্দর থেকে শুরু করে খালেদা জিয়া ও জুবাইদা রহমানের বাসায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
ডিএমপি’র অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে যাত্রীসাধারণের সুবিধার্থে বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ রেলওয়ের সব আন্তঃনগর ট্রেন মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত টঙ্গী, এয়ারপোর্ট এবং তেজগাঁও স্টেশনে দুই মিনিটের জন্য থেমে যাত্রী বহনের ব্যবস্থা করবে। এছাড়া বাংলাদেশ রেলওয়ে মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কমলাপুর-টঙ্গী রুটে অতিরিক্ত একটি শাটল ট্রেন পরিচালনা করবে। হজযাত্রীসহ বিদেশগামী যাত্রী সাধারণকে এয়ারপোর্টে গমনাগমনের ক্ষেত্রে এবং ওই এলাকায় এসএসসি পরীক্ষার্থীদের যথেষ্ট সময় নিয়ে বাসা থেকে বের হওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
গত ৮ জানুয়ারি উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যের লন্ডনে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। লন্ডন ক্লিনিকে টানা ১৭ দিন চিকিৎসা নেন তিনি। এরপর গত ২৫ জানুয়ারি থেকে ছেলে তারেক রহমানের বাসায় চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। এ সময় তিনি লন্ডন ক্লিনিকের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক প্যাট্রিক কেনেডি ও অধ্যাপক জেনিফার ক্রসের তত্ত্বাবধানে ছিলেন।