ওসমানীনগরে জলমহাল শাসন-শোষণে ধ্বংস হচ্ছে মাছের প্রজণন
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ মে ২০২৫, ৮:৩৬:১৮ অপরাহ্ন

মো. কয়েছ মিয়া, ওসমানীনগর (সিলেট) থেকে: ওসমানীনগরে নদী-হাওর, খাল-বিল ও বিভিন্ন জলমহালে অবাধে মা মাছ ও পোনা মাছ শিকারে দেশী মাছের প্রজণন ও বংশ বিস্তার ধ্বংস হচ্ছে। দেশীয় মাছের অভয়ারণ্য খ্যাত উপজেলার সাদিখাল ও লোম বিলসহ বিভিন্ন নদী-হাওর নৌকায় করে অভয়াশ্রম এলাকাসহ অন্যান্য স্থানে দিন-রাতে জাল ও বড়শি ফেলে মারা হচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। স্থানীয় বাজার ও আড়ৎগুলোতে এসব মাছ দেদারছে বিক্রি হচ্ছে। স্থানীয় লোকজন ছোট-বড় জাল দিয়ে নির্বিচারে পোনা ও মা মাছ ধরার কারণে দেশীয় মাছের বংশ বিস্তারে সংকট দেখা দেওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। জলমহালে মা মাছ সংরক্ষণ ও মাছের সংখ্যা বৃদ্ধি করার জন্য অভয়াশ্রম তৈরির বাধ্যবাধকতা থাকলেও বাস্তবে এটি কেবল কাগজে কলমেই লিপিবদ্ধ। মৎস্য অফিসে কর্মকর্তা ছাড়া অফিসে নেই জনবল। এতে ফলপ্রসূ কার্যক্রম করতে ব্যাহত হচ্ছে। উপজেলার দুইটি খালে মাছের অভয়ারণ্য থাকলেও প্রয়োজনীয় বরাদ্দের অভাবে জাপার খালে এখন আর অভয়ারণ্য নেই। একমাত্র মাছের অভয়ারণ্য সাদিখালে থাকলেও সেখানে অবাধে ধরা হয় মাছ।
জানা গেছে, ওসমানীনগর উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে মৎস্য অফিসের তালিকাবদ্ধ ২৮টি ছোট-বড় জলমহালসহ অসংখ্য নদী-হাওর ও খাল-বিল রয়েছে। এর মধ্যে উমরপুর ইউনিয়নে রয়েছে বানাইয়া হাওর, মিলিটারী খাল, সাদিপুর ইউনিয়নে বদ্ধ কুশিয়ারা, সাদিখাল, কালাচান্দের ডর, চানপুর মহাজন, গজিয়া দোমাই বিল, খেজাউরা হাওর, বানাইয়া হাওর, লোম বিল, চেগ বিল, খাখমোড়া, হারুয়া, ধনী মনি বিল, খালেরমুখ নদী, কালামরি, কুড়ি বিল, পৌদ্মা বিল, বান মোরালী, ধোপাখালি, শংকর পাশা-কাগজপুর খাল(বুড়ি নদী), লোমের আগার গ্রুপ, পশ্চিম পৈলনপুর ইউনিয়নে সাদিখাল, বুড়িনদী, সিনজুড়া বিল, হরিন পেটুয়া বিল, আউরী গাং, গৌরাঙ্গ বিল, পিয়াজি বিল, বুরুঙ্গা বাজার ইউনিয়নে বুড়ি বরাক, তেতই খাল, চেঙ্গের খাল, কইয়াচূড়া-বাটুচূড়া, বাইয়া বিল, নিরাইয়ার হাওর, গোয়ালা বাজার ইউনিয়ন নারকিলা নদী, কালাসারা হাওর, গয়নাঘাট কানা বিল, জহিরপুর খাল।
তাজপুর ইউনিয়নে লেঙুরা ডুবির বিল, কাড়ার খেও, উসমানপুর ইউনিয়ন জাপার খাল, বড়ভাগা নদী, দয়ামীর দয়ালং পালাইয়ার হাওর, রুনিয়া হাওর, আমিরদিং নদীসহ অনেক জলাশয় জলমহাল হিসেবে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন মৎস্যজীবিদের নামে ইজারা দেয়। ইজারাকৃত জলমহালগুলোতে মৎস্য আহরণে মৎস্যজীবী সমিতির নেপথ্যে থাকে স্থানীয় প্রভাবশালী চক্রের অদৃশ্য হাত। তারা মৎস্যজীবী সমিতির নাম ভাঙ্গিয়ে জলমহাল ইজারা নিয়ে অবৈধভাবে জলমহাল শাসন ও শোষণ করেন। এসব জলমহালে বর্ষা মৌসুমের শুরুতে মা মাছ তাদের বংশ বিস্তারের জন্য প্রজণন করতে গভীর পানি থেকে কম পানিতে আসে। কিন্তু মৎস্যজীবি ও স্থানীয় শিকারীরা ছোট-বড় মাছ কারেন্ট জাল, চায়না দোয়ারী রিং জাল, বস্তা জাল, বেল জাল, টানা জাল, বড়শি, লোহার সুচালো কুচা, বাঁশের তৈরী ফাঁদ দিয়ে দিন-রাতে অবাধে ধরে মাছের বংশ বিস্তার রোধ করে। মাছের আড়ৎ ও বাজারে এসব মাছ অবাধে বিক্রি হলেও যেন দেখার কেউ নেই। স্থানীয় সচেতন মহল মনে করেন মাছের প্রজণন মৌসুমে নির্দিষ্ট কয়েকদিন দেশীয় মাছ ধরা বা বাজারজাত নিষিদ্ধ করলে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা পাবে দেশীয় মাছ। অবাধে মা মাছসহ পোনা ধরার বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারি বাড়ানো প্রয়োজন বলে অনেকে মনে করেন।
ওসমানীনগর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মাসরুপা তাছলিম বলেন, আমাদের মনিটরিং কাজ চলমান আছে। জনবল ও বরাদ্দ সংকটে মাছের বংশ বিস্তারের জন্য অভয়ারণ্য ও নদী-হাওরে ব্যাপকভাবে কাজ করতে পারছি না। এই অঞ্চলে জলমহালে যে পরিমাণ মাছ রয়েছে, সঠিক ব্যবস্থাপনার আওতায় আনতে পারলে, সেগুলো বিদেশে এক্সপোর্ট করা যেতো। এতে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার আয় বাড়তো।
ওসমানীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন বলেন, নদী-হাওর ও বাজারগুলোতে আমাদের মোবাইল কোর্ট পরিচালনা অব্যাহত রয়েছে। মা মাছসহ পোনা মাছ না ধরার জন্য মানুষকে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। মাছের বংশ বিস্তার বৃদ্ধি করতে সবার সচেতন হওয়া উচিৎ।