জাফলংয়ে পাথর শ্রমিকদের রোষানলে দুই উপদেষ্টার গাড়ি বহর
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ জুন ২০২৫, ৭:৩৬:৪২ অপরাহ্ন

গোয়াইনঘাট থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা ॥ জাফলং ইসিএ (ইকোলজিক্যাল ক্রিটিকাল এরিয়া) পরিদর্শনে এসে গতকাল শনিবার স্থানীয়দের রোষানলে পড়েন দুই উপদেষ্টা। তারা হলেন-পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং জ¦ালানী ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান।
স্থানীয়রা জানান, জাফলং পরিদর্শন শেষে ফেরার পথে স্থানীয়দের বিক্ষোভ ও বাধার মুখে পড়েন দুই উপদেষ্টা। দুই উপদেষ্টার গাড়ির বহর বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটের দিকে বল্লাঘাট জাফলং বাজার অতিক্রমকালে স্থানীয় কিছু পাথর উত্তোলনকারী ও শ্রমিকরা উত্তেজিত হয়ে রাস্তা আটকে ‘ভুয়া ভুয়া’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় বিক্ষোভকারীদের কয়েকজন রাস্তায় শুয়ে পড়েন। কিছুক্ষণ বিক্ষোভ চলার পর আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী বিক্ষোভকারীদের শান্ত করেন এবং দুই উপদেষ্টার গাড়ি চলাচলের পথ উন্মুক্ত করে দেন।
স্থানীয়রা আরো জানান, উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জাফলংসহ সিলেটের সব পাথর কোয়ারির ইজারা প্রক্রিয়া স্থায়ীভাবে বন্ধ রাখার সরকারি সিদ্ধান্তের কথা জানানোর পর বিক্ষোভ করে লোকজন।
জাফলং ট্যুরিস্ট পুলিশের ইনচার্জ ইন্সপেক্টর সাদত হোসেন জানান, জাফলং পরিদর্শনশেষে ফেরার পথে তাদের গাড়ি বহর স্থানীয়দের রোষানলে পড়ে। পুলিশ কিছুক্ষণের মধ্যে পরিস্থিতি শান্ত করে।
এ ব্যাপারে গোয়াইনঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সরকার মোহাম্মদ তোফায়েল আহমেদ জানান, আকস্মিকভাবে স্থানীয়রা উপদেষ্টাদের গাড়ি আটকে দেয়। পরে পুলিশ দ্রুত তাদেরকে সরিয়ে দিয়ে রাস্তা পরিষ্কার করে। সাড়ে ১২টা নাগাদ উপদেষ্টারা নিরাপদে হরিপুর গেস্ট হাউজে পৌঁছেন।
জাফলং পর্যটন কেন্দ্র ঢেলে সাজানো হবে ॥ পরিবেশ উপদেষ্টা
এর আগে জাফলং পরিদর্শনকালে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান গণমাধ্যমকে বলেন, “সিলেটের আর কোন পাথর কোয়ারি খুলে দেবে না সরকার। জাফলং পর্যটন কেন্দ্রকে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এমনটি করা গেলে এ অঞ্চলের পাথর শ্রমিকদের বিকল্প কর্মসংস্থান তৈরি হবে।”
পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘সিলেটের নান্দনিক আবেদনের পাশাপাশি নৈসর্গিক আবেদনও আছে। এরকম জায়গাগুলোকে আমরা আর পাথর উত্তোলনের জন্য ইজারা দেব না। অবৈধভাবে যে পাথর উত্তোলন হচ্ছে-এটা বন্ধের ব্যাপারে জ্বালানি উপদেষ্টা বলবেন। এই জায়গাটা বিশেষ করে পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলেছি। এখানে ইকোফ্রেন্ডলি ট্যুরিজম তারা করতে পারে। যাতে করে পাথর যারা উত্তোলন করে তাদের বিকল্প কর্মসংস্থান হয়। আমরা আজকে দেখে গেলাম। হয়তো আমরা আবার আসব। এটাকে নিয়ে একটি মহাপরিকল্পনা করে ওইটা চূড়ান্ত করতে চাই।’ বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন করে জাফলং ও আশেপাশের এলাকার পরিবেশ ধ্বংস করা হচ্ছে। জাফলংয়ের অবৈধ পাথর ক্রাশারের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে। তিনি বলেন, দ্রুত ক্রাশার মেশিনগুলো সরিয়ে নিতে হবে। দুই উপদেষ্টার পরিদর্শনকালে সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার খান মো: রেজা উন নবী, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ, পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমানসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।