৩১তম ব্যাচের ওরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠান সম্পন্ন
‘জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ মানবিক ডাক্তার গড়ার কারখানা’
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ জুন ২০২৫, ৮:৪৫:৪৩ অপরাহ্ন

স্টাফ রিপোর্টার: মানবিক ডাক্তার তৈরি করে বিশ^ব্যাপী শান্তির বারতা দিচ্ছে সিলেটের প্রথম বেসরকারি মেডিকেল কলেজ জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ। বিশে^র যে কোন দেশে গেলে পাওয়া যায় এই কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের। যারা চিকিৎসাসেবায় বিশ^ পরিমন্ডলে দেশ ও দশের সুনাম বয়ে আনছেন। এরা একেকজন অশান্ত পৃথিবীতে শান্তির দূত হিসেবে কাজ করছেন।
গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টায় স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের আয়োজনে জুম প্লাটফর্মে দেশের সকল সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষের নবীন এমবিবিএস শিক্ষার্থীদের ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রামে বক্তারা এই বক্তব্য দেন। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম। সারাদেশে এক যুগে তিনি বক্তব্য রাখেন।
স্থানীয় উদ্বোধনী অনুষ্ঠান পর্বে প্রধান অতিথি ছিলেন-জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ অসংখ্য শিক্ষা ও সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান দানবীর ড. রাগীব আলী। অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা করে দক্ষ চিকিৎসক তথা মানব সম্পদ সৃষ্টিতে অবদান রাখতে পারায় আজ আমি গর্বিত। শিক্ষার্থীদের এই কলেজে পড়ার যে তীব্র প্রতিযোগিতাতা আমাকে উৎসাহ যোগায়। আমি অর্থের জন্য মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল গড়ে তুলিনি। এই কলেজ ও হাসপাতাল গড়ে উঠেছে আর্ত মানবতার সেবার জন্য। জন্মলগ্ন থেকে সেবাই দিয়ে যাচ্ছে। আমি মনে করি, এই মেডিকেল হলো মানবিক ডাক্তার গড়ার কারখানা
দানবীর ড. রাগীব আলী বলেন, জালালাবাদ রাগীব রাবেয়া মেডিকেল কলেজ আমার প্রাণের প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানের অগ্রযাত্রায় নিজের ধন সম্পদ উজাড় করে দিয়েছি। নানা প্রতিবন্ধকতা আমাকে দমাতে পারেনি। সেবার মানের দিক থেকে ন্যূনতম ছাড় নেই। স্বল্প খরচে বিশ^মানের সেবা দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। পড়াশোনার ক্ষেত্রে আরো বেশি আন্তরিকতা রয়েছে। প্রতিটি বিভাগে পর্যাপ্ত অধ্যাপকরা ক্লাস নিচ্ছেন। রয়েছে মনোরম পরিবেশ। চা বাগানের বর্ণিল পরিবেশে শিক্ষার সুযোগ বাংলাদেশের অন্য কোন মেডিকেলে নেই। যার জন্য দেশ-বিদেশের শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার সুযোগ পাচ্ছেন এই মেডিকেল কলেজে। তিনি শিক্ষার্থীদের মনযোগ দিয়ে পড়াশোনা করে মানবিক চিকিৎসক হিসেবে গড়ে উঠার আহবান জানান। তাঁর পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলে জানান।
এদিকে নবীন শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত ছিল কলেজ ক্যাম্পাস। মানবসেবার মহান ব্রত নিয়ে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসা শিক্ষার্থীদের চোখে-মুখে ছিল নতুন স্বপ্ন আর নব উদ্যমে এগিয়ে চলার প্রত্যয়। কলেজের ভর্তি হওয়া ১৩০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ১৭জন বিদেশী শিক্ষার্থী রয়েছেন। যার মধ্যে ১৪ জন ভারতের এবং ৩ জন নেপালের।
জালালাবাদ রাগিব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোঃ আবেদ হোসেনের সভাপতিত্বে কলেজের ১নং লেকচার গ্যালারিতে অনুষ্ঠিত ওরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডাঃ একেএম দাউদ, হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ মোঃ তারেক আজাদ, একাডেমিক কো অর্ডিনেটর অধ্যাপক ডাঃ সাইরাস সাকিবা এবং মেডিকেল এডুকেশন ইউনিট এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডাঃ সায়েক আজিজ চৌধুরী । অনুষ্ঠান পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন সার্জারির অধ্যাপক ও এসোসিয়েট একাডেমিক কো অর্ডিনেটর ডাঃ নূরুল কাইয়ূম মোঃ মুসাল্লিন।
অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে নতুন ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের নিকট মেডিকেল কলেজের একাডেমিক দিক তুলে ধরেন , এনাটমী বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডাঃ জেসমিন সুলতানা, ফিজিওলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডাঃ ওয়াজিউন নেছা, বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডাঃ গুলশান আরা বেগম ও তাদের সহযোগী অন্য শিক্ষকবৃন্দ। অনুষ্ঠানে অভিভাবকদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন ডা: মো: আনিসুর রহমান ও নবীন শিক্ষার্থীদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন তাসনিম জান্নাত অহনা। পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন শিক্ষার্থী আশিকুর রহমান জাকি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডাঃ একেএম দাউদ নবীন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, মেডিকেলে পড়াশোনার যাত্রা খুবই কঠিন নয়, আবার কঠিন। তবে নিয়মিত অধ্যবসায় সাফল্য এনে দেয়। এ যাত্রাকে আনন্দদায়ক করতে হলে শৃঙ্খলা মেনে চলতে হবে। দেখবে একদিন সাফল্যের উচ্চ শিখরে পৌঁছে গেছো।
হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ মোঃ তারেক আজাদ বলেন, তোমার স্বপ্ন যদি হয় ডাক্তার হওয়ার, সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের সারথি আছেন তোমাদের শিক্ষকরা। তোমাদের মানবিক ডাক্তার হিসেবে গড়ে তুলতে আমাদের জ্ঞানের সর্বস্ব বিলিয়ে দেই। আমরা বিশ^াস করি, তোমরা একদিন পৃথিবীর দিকে দিকে শান্তির বারতা নিয়ে ছড়িয়ে পড়বে। নিজের এবং এই কলেজের সুনাম বৃদ্ধি করবে।
মেডিকেল এডুকেশন ইউনিট এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডাঃ সায়েক আজিজ চৌধুরী বলেন, বেসরকারি মেডিকেলে অন্যতম সংকট হচ্ছে হাসপাতাল। এই কলেজের সেই সংকট নেই। ইনডোর আউটডোরে এতো রোগী সেবা নিতে আসেন যে, অনেক বেসরকারি হাসপাতালেও তা দেখা যায় না। তিনি বলেন, অভিজ্ঞ শিক্ষকমন্ডলী রয়েছেন- যারা তোমাদের ডাক্তার তৈরিতে আন্তরিক এবং নিজেকে উজাড় করে দেন। রয়েছে মনোরম পরিবেশ। শিক্ষার্থীদের সেই সুযোগকে কাজে লাগাতে হবে।
একাডেমিক কো-অর্ডিনেটর অধ্যাপক ডাঃ সাইরাস সাকিবা বলেন, বাবা-মা থেকে দূরে থাকার কষ্ট অনেক, কিন্তু নিজের বাবা-মায়ের স্বপ্ন পূরণে কিছু কষ্ট তো তোমাদের করতেই হবে। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, এখন থেকে কোন সমস্যা হলে আগে বাবা-মা নয় শিক্ষককে বলতে হবে। নিয়মিত অধ্যবসায় করতে হবে। দেখবে একদিন সফলতা আসবেই।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোঃ আবেদ হোসেন বলেন, জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ দেশের ৬৯টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের মধ্যে টপ টুয়েন্টিতে রয়েছে। এর পড়াশোনার মান বিশ^মানের। এই প্রতিষ্ঠানের পিছনে রয়েছে দুজন মানুষের অক্লান্ত পরিশ্রম ও স্বপ্ন। দানবীর ড. রাগীব আলী ও বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরীর স্বপ্নের এই প্রতিষ্ঠান তোমাদের স্বপ্নপূরণে সারথি হয়েছে। এই দুজনের জন্য তোমরা দোয়া করবে। জাতিও একদিন এই দম্পতিকে কখনো ভুলবে না।
অনুষ্ঠান শেষে জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজের মাঠে প্রত্যেক নতুন মেডিকেল ছাত্র-ছাত্রীবৃন্দ সরকারি নির্দেশনা মেনে একটি করে বৃক্ষরোপণ করেন।