হাইকমিশনার আবিদা ইসলাম ও মেয়র লুৎফুর রহমান বৈঠক
টাওয়ার হ্যামলেটসে বাংলাদেশ হেরিটেজ মাস উদযাপনের প্রস্তাব
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০১ জুলাই ২০২৫, ৪:৪১:১৮ অপরাহ্ন

লন্ডন প্রতিনিধি: যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার আবিদা ইসলাম গতকাল সোমবার টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের নির্বাহী মেয়র লুৎফুর রহমানের সঙ্গে প্রথম আনুষ্ঠানিক বৈঠকে মিলিত হন। বৈঠকে তিনি টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল এবং বাংলাদেশ হাইকমিশনের যৌথ সহযোগিতায় “বাংলাদেশ হেরিটেজ মাস” উদযাপনের প্রস্তাব দেন।
মেয়র লুৎফুর রহমান টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল কার্যালয়ে হাইকমিশনার আবিদা ইসলামকে আন্তরিকভাবে স্বাগত জানান। ইউরোপে নির্বাচিত প্রথম মুসলিম ও অশ্বেতাঙ্গ মেয়র হিসেবে মেয়র রহমান ৬ বিলিয়ন পাউন্ডের বাজেট এবং ১২,৫০০ কর্মচারীর একটি বিশাল কর্মবল পরিচালনার মাধ্যমে কাউন্সিলের কৌশলগত দিকনির্দেশনা প্রদান করছেন।
তিনি হাইকমিশনারের প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়ে “বাংলাদেশ কালচারাল মাস’ উদযাপনের প্রতি সমর্থন জানান। হাইকমিশনার আবিদা ইসলাম সংস্কৃতি, রন্ধনশৈলী ও শিল্পের ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক বিনিময়ের গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি বাংলাদেশ হাইকমিশন ও টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের যৌথ সমন্বয়ে একটি কোর গ্রুপ গঠনের প্রস্তাব দেন, যারা এই উদ্যোগ বাস্তবায়নে কাজ করবে।
এছাড়াও, হাইকমিশনার ইসলাম জিসিএসই (এঈঝঊ – এবহবৎধষ ঈবৎঃরভরপধঃব ড়ভ ঝবপড়হফধৎু ঊফঁপধঃরড়হ) পরীক্ষায় বাংলা ভাষাকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান। উল্লেখ্য, টাওয়ার হ্যামলেটস হচ্ছে যুক্তরাজ্যের এমন একটি বরো যেখানে বাংলাদেশিদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি (৩৫%) এবং মুসলিম জনসংখ্যাও সর্বাধিক (৪০%)।
হাইকমিশনার বলেন, ব্রিটিশ-বাংলাদেশি তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতিকে তুলে ধরা জরুরি, যাতে তারা নিজেদের শিকড়ের সঙ্গে সংযোগ রক্ষা করতে পারে এবং বাংলাদেশের উন্নয়নে অবদান রাখতে পারে।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, ব্রিটিশ-বাংলাদেশি তরুণরা যুক্তরাজ্যের মূলধারার বিভিন্ন ক্ষেত্রে খুব ভালো করছে এবং তারা বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করতে পারে।
মেয়র লুৎফুর রহমান বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে তাঁর প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, “আমি একজন বাংলাদেশি হিসেবে গর্বিত। আমরা একটি শান্তিপূর্ণ ও প্রগতিশীল বাংলাদেশ চাই।”
তিনি আরও বলেন, টাওয়ার হ্যামলেটস একটি বহুসাংস্কৃতিক ও বহুধর্মীয় জনগোষ্ঠীর আবাসভূমি।
টাওয়ার হ্যামলেটস যুক্তরাজ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক কেন্দ্র, যার বার্ষিক অর্থনৈতিক উৎপাদন ৩০ বিলিয়ন পাউন্ড- যা বার্মিংহাম বা ম্যানচেস্টারের তুলনায় বেশি এবং মাল্টা, মোনাকোসহ অনেক দেশের জিডিপির চেয়েও বেশি। এটি লন্ডনের মাত্র ১% জমি জুড়ে অবস্থিত হলেও, পুরো লন্ডনের মোট অর্থনৈতিক আউটপুটের ৭% এবং যুক্তরাজ্যের ২% উৎপাদন করে। এই বরোতে রয়েছে কানারি ওয়ার্ফ, যা যুক্তরাজ্যের প্রধান ব্যবসা ও আর্থিক জেলা।
এছাড়া, এখানে অবস্থিত কুইন মেরি ইউনিভার্সিটি-একটি বিশ্বখ্যাত গবেষণা কেন্দ্র এবং রয়েল লন্ডন হাসপাতাল-যা ইউরোপের বৃহত্তম হাসপাতাল।
লুৎফুর রহমান ২০১০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত এবং ২০২২ সালের মে মাস থেকে পুনরায় টাওয়ার হ্যামলেটসের নির্বাহী মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ২০০৮ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত টাওয়ার হ্যামলেটস লেবার পার্টির নেতা ছিলেন এবং বর্তমানে লন্ডনের ছয়জন নির্বাহী মেয়রের একজন।