বৃষ্টি উপেক্ষা করে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচি
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১০ অক্টোবর ২০২৫, ৭:১৩:০৮ অপরাহ্ন
শাবিপ্রবি প্রতিনিধি : ২৫ শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে বৃষ্টি উপেক্ষা করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। আজ দুপুর ২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বরে এ কর্মসূচি পালন করেন তারা। কর্মসূচিতে কয়েক শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
অবস্থান কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীরা স্লোগান দেন “প্রশাসন না প্রহসন প্রহসন!”, “প্রশাসনের সৈরাচারিতা মানি না মানব না!”, “জাস্টিস জাস্টিস, উই ওয়ান্ট জাস্টিস!”, “সাস্টিয়ান সাস্টিয়ান, এক হও লড়াই কর!”। প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল— “আমার ভাইয়ের বহিষ্কার মানি না মানব না”, “আমার বোনের বহিষ্কার মানি না মানব না”, “বহিষ্কার নাকি ষড়যন্ত্র?” ইত্যাদি।
এসময় অর্থনীতি ও পরিসংখ্যান বিভাগের ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী এবং যাদের ‘র্যাগিং’-এর স্বীকার বলা হচ্ছে, তারাও বক্তব্য দেন।
২০২৩–২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আবরার বিন সেলিম বলেন, “সেদিন আমরা সিনিয়র ভাইদের সঙ্গে বসার জন্য যোগাযোগ করি। রাতে ফাহিম ভাইয়ের মেসে যাই। আমাদের পক্ষ থেকে প্রক্টরকে কোনো খবর দেওয়া হয়নি। কিন্তু প্রক্টর স্যার সেখানে কীভাবে উপস্থিত হলেন, সেটা রহস্যজনক। আমরা মনে করি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে প্রক্টরকে পাঠিয়েছে। পরে প্রক্টর স্যার আমাদের অফিসে নিয়ে গিয়ে বোঝান, বুয়েটের আবরার ফাহাদকে র্যাগিং করে হত্যা করা হয়েছিল। তখন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিল মাত্র সাত দিন। আমরা না বুঝে কিছু কথা বলেছিলাম। পরদিন বিষয়টি বিভাগীয় প্রধানের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয় এবং তিনি লিখিতভাবে প্রক্টর অফিসে পাঠান। এক বছর পর এসে এমন অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত কিভাবে নেয়া হলো, আমরা বুঝতে পারছি না। এটা আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ছাড়া কিছু নয়।”
২০২২–২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী উমামা বলেন, “এক বছর আগে বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়েছিল। তিনটি সিন্ডিকেট সভা পেরিয়ে গেছে, তখন কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। পরীক্ষা শুরুর আগমুহূর্তে ২৫ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা অমানবিক ও সম্পুর্ন প্রহসনমুলক । ফাহিম মুন্তাসির জীম যাকে ক্যাম্পাসে সবাই চেনে খেলাধুলা ও সবার সহযোগিতায় পাশে থাকে। তাকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা অযৌক্তিক ছাড়া কিছুই নয়। সাইদুল বাসার রিফাত কয়েক মাস আগে তার বাবা, গত মাসে মা মারা গেছেন। এখন তাকেও বহিষ্কার করা হয়েছে। এই মানসিক নির্যাতনের দায় কে নেবে? আমরা প্রশাসনের কাছে দাবি জানাই, এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে প্রশাসনকে দায় স্বীকার করতে হবে।”
গতকালের উপ-উপাচার্যের বক্তব্যের বিষয়ে ২০২১–২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী হাফিজুল ইসলাম বলেন, “প্রো-ভিসি স্যার বলেছেন, বিভাগীয় প্রধানদের মাধ্যমে ক্লাসে ফেরার অনুরোধ জানানো হয়েছে এবং আফিল করতে বলা হয়েছে। কিন্তু আমরা এই আশ্বাসে আস্থা রাখি না। কারণ গত বছর বিভাগীয় প্রধান বিষয়টির সমাধান করে প্রক্টর অফিসে চিঠি দিয়েছিলেন। প্রথমে প্রক্টর সেই চিঠি পাওয়ার কথা অস্বীকার করেন, পরে বলেন চিঠি আসার আগেই সিন্ডিকেটে বিষয়টি উঠেছে। দুই দিনে দুই রকম বক্তব্য আমরা পেয়েছি। তাই আমরা এটিকে প্রহসন মনে করছি। আশ্বাস দিয়ে সমস্যা মেটে না। জরুরি সিন্ডিকেট ডেকে দ্রুত বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার ও প্রশাসনের দায় স্বীকার করতে হবে।”
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সাজেদুল করিম বলেন, “পরিসংখ্যান বিভাগের প্রধান জানিয়েছেন, তাদের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে। তবে অর্থনীতি বিভাগের ক্ষেত্রে তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি। শিক্ষার্থীরা যদি মনে করেন সিদ্ধান্তটি প্রহসনমূলক, তাহলে তারা লিখিতভাবে আপিল করতে পারেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী, এ ধরনের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন বা মওকুফ করতে হলে তা আপিলের মাধ্যমেই করতে হবে। এখানে জোর করে কিছু করা সম্ভব নয়।”




