সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ
টাউন কো-অপারেটিভ সোসাইটির নির্বাচন অবৈধ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ৩০ নভেম্বর ২০২২, ৫:০১:৪১ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : সিলেট টাউন কো-অপারেটিভ সোসাইটির সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনকে ‘অবৈধ ও নীল নকশা’র নির্বাচন বলে অবিহিত করেছেন সমিতির নতুন কয়েকজন সদস্য। বেআইনিভাবে তাদের ভোটাধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তারা। গত সোমবার সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এ অভিযোগ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে শম্ভু নাথ সেন লিখিত বক্তব্যে বলেন, সিলেট টাউন কো-অপারেটিভ সোসাইটি একটি প্রতিষ্ঠিত সমিতি। ১৯০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত সমিতি সিলেট টাউন ব্যাংক লিমিটেড নামে সমবায় সমিতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। সরকারি নিবন্ধন নিয়ে সমিতিটি দীর্ঘদিন ধরে অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখেছে। ১৭৫ সদস্যের এ সমিতির নিজস্ব স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তিও আছে এবং ইতোপূর্বে এ সমবায় সমিতি নিজেদের বাইলজ ও সরকারের সমবায় আইন ও বিধি মেনে কমিটির যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, দুঃখজনক হলেও সত্য, সমিতির নির্বাহী ক্ষমতা সম্পন্ন সেক্রেটারি মঈন উদ্দিন টানা ৯ বছর সেক্রেটারি হিসেবে ছিলেন। এ দীর্ঘ সময়ে সমিতির নিয়ম ও বিধি-বিধান লঙ্ঘন ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে আধিপত্য ও প্রভাব প্রতিপত্তি বাড়াতে ছেলেমেয়ে, পরিবারের সদস্য, আত্মীয়-স্বজনসহ নিজের লোকদের সমিতির সদস্য হিসেবে বেআইনিভাবে অন্তর্ভুক্ত করে সুপ্রতিষ্ঠিত সমবায় সমিতিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছেন।
তিনি আরও বলেন, মঈন উদ্দিন সমিতির ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে সমিতিতে আত্মীয়করণের মাধ্যমে তার ভগ্নিপতি মবশ্বির আলীকে সেক্রেটারি মনোনীত করেন। পরে সমিতির সদস্যরা ২ মাসের মধ্যে তাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করেন। অবশিষ্ট মেয়াদে ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যদের ম্যানেজ করে মঈন উদ্দিন নিজে কো-অপ্ট হয়ে সেক্রেটারি পদে পুনরায় আসীন হন। পরবর্তী নির্বাচনে তিনি পুনরায় সেক্রেটারি পদে প্রার্থী হলে তৎকালীন নির্বাচন পরিচালনা কমিটি তার প্রার্থীতা বাতিল করে। পরে কৌশলে তার ছেলে ফখর উদ্দিন মাহমুদকে তিনি তিন বছর মেয়াদের জন্য সেক্রেটারি মনোনীত করেন। এ সময়ে ব্যবস্থাপনা কমিটির সিদ্ধান্তে নতুন ৫০ জন সদস্য আবেদনের সুযোগ পান। সমিতির বিধি-বিধান অনুসারে নতুন সদস্য অন্তর্ভুক্তির জন্য আবেদন ফরম বিতরণের মাধ্যমে নতুন সদস্য হিসেবে ৫০ জন সদস্যের আবেদন ফরম গ্রহণ করা হয় এবং যাচাই-বাছাই করে সমিতির যাবতীয় বিধি বিধান মোতাবেক ৪৯ জনকে সদস্য করা হয়।
তিনি বলেন, গত ২৪ জুলাই অনুষ্ঠিত ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় ৪৯ জনকে সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্তির সিদ্ধান্ত সর্ব সম্মতিক্রমে সভায় গৃহীত হয়। এরই মধ্যে ‘নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করা হয়। চলতি বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর প্রত্যেক সদস্য বরাবরে রেজিস্ট্রি ডাকযোগে নির্বাচনে ভোট দেয়ার জন্য ভোটার তালিকাসহ চিঠি প্রেরণ করা হয়। ব্যবস্থাপনা কমিটির অনুমোদন সাপেক্ষে চূড়ান্ত যাচাই-বাছাই করে খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয় এবং পরবর্তীতে আপত্তি না থাকায় সর্বসম্মতিক্রমে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও প্রকাশ করা হয়।
তিনি বলেন, এবার হেরে যাবেন জেনে জেলা সমবায় কার্যালয়ের কতিপয় কর্মকর্তার সঙ্গে অবৈধ যোগসাজসে সমিতির বাইলজ এর ১২(১)(গ), ১২(২) বিধি অমান্য করে নতুন সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত আমরা ৪৯ জন সদস্যকে কোন কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান না করে এবং আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে ব্যবস্থাপনা কমিটি এবং সাধারণ সভার অনুমোদন না নিয়ে সম্পূর্ণ অন্যায় ও বেআইনিভাবে ভোটাধিকার কেড়ে নিতে উঠে পড়ে লাগেন। গত ৯ নভেম্বর আমরা ৪৯ জন সদস্যের ভোটাটিকার হরণ করতে জেলা সমবায় কর্মকর্তা বরাবরে মঈন উদ্দিন নিজ উদ্যোগে আবেদন করেন। কর্মকর্তা বরাবরে জেলা সমবায়ে করা আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ১৫ নভেম্বর শুনানীর দিন ধার্য্য করা হয়।
বর্তমান সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্বরত তার ছেলের যোগসাজসে নোটিশ গোপন করে, ব্যবস্থাপনা কমিটির অন্যান্য সদস্যকে অবহিত না করে, মঈন উদ্দিন ও তার ছেলে শুনানীতে অংশ নেন এবং ৪৯ জন সদস্যকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে তড়িঘড়ি করে একতরফাভাবে পরের দিন গত ১৬ নভেম্বর তারা তাদের ভোটাধিকার হরণ করেন।
তিনি বক্তব্যে আরো বলেন, নির্বাচনের এক কার্যদিবস সামনে রেখে জেলা সমবায় কর্মকর্তা ৪৯ জন সদস্যের ভোটাধিকার বেআইনি হরণ করেন যাতে আমরা ৪৯ জন সদস্য বন্ধের দিনে কোন আইনি পদক্ষেপ নিতে না পারি সেই মোতাবেক পরিকল্পিতভাবে আদেশ প্রদান করেন এবং গত ১৯ নভেম্বর পূর্ব নির্ধারিত নির্বাচন করেন।
সংবাদ সম্মেলনে তারা এ নির্বাচনকে অবৈধ ও বেআইনি আখ্যা দিয়ে নির্বাচন বাতিল এবং তাদের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিয়ে পুনরায় ব্যবস্থাপনা কমিটি নির্বাচনের দিন নির্ধারণের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের প্রতি দাবি জানান।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন সৈয়দ শামীম আহমদ, মো. মহসিন ভূইয়া, মো. মতিউর রহমান, কল্লোল জ্যোতি বিশ্বাস, মো. সেলিম, মো. আনিস, ফয়ছল ইসলাম, নাদের খান, শফিকুন নূর ও মোতাহের হোসেন দুলাল প্রমুখ।