ঘাতকদের রক্ষায় পরিকল্পনাকারীদের অদৃশ্য হাতের কারসাজি
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০১ ডিসেম্বর ২০২২, ৬:২৩:০৭ অপরাহ্ন
০ আদালতের বিস্ময় প্রকাশ
০ ওসি-এএসপি’র যোগসাজশ
০ সাদা কাগজে সিআইডি’র প্রতিবেদন
কাউসার চৌধুরী:
মহান মুক্তিযুদ্ধের ৫নং সেক্টরের লালবাহিনীর কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল হক চৌধুরী বাচ্চু হত্যাকান্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ও ঘাতকদের রক্ষা করতে একটি অদৃশ্য হাতের কারসাজি করা হয়। জগন্নাথপুর থানার তৎকালীন ওসি তার নিজ হাতে মনগড়া এজাহার লিখে দেন। আবার এ হত্যা মামলা তিনি নিজেই তদন্তও করেন। জগন্নাথপুর থানার তৎকালীন ওসি হুমায়ুন কবির সরকার ও সহকারী পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম মজুমদারের যোগসাজশে এটি করা হয়েছে। এই দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে বাঁচাতে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক এনায়েতুর রহমান চৌধুরীও একটি গৎবাঁধা তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছিলেন। এখানেই শেষ নয় সিআইডির ওই কর্মকর্তা এক আসামিকে রক্ষা করতে আদালতে সাদা কাগজেও প্রতিবেদন দেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা বাচ্চু চৌধুরী হত্যা মামলার নথিপত্র পর্যালোচনা করে এমন তথ্য বেরিয়ে এসেছে। চাঞ্চল্যকর এ মামলাটির অধিকতর তদন্তের দেয়া আদালতের আদেশেও এমন তথ্য উঠে এসেছে।
যোগাযোগ করা হলে সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত পিপি এডভোকেট সোহেল আহমদ এ বিষয়ে সিলেটের ডাককে বলেন, তদন্ত কর্মকর্তারা বীর মুক্তিযোদ্ধা বাচ্চু চৌধুরী হত্যাকান্ডের তদন্তে চরম গাফিলতি করেছেন। স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে নাম আসার পরেও ওই ব্যক্তিকে চার্জশিটে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। ঘাতকদের রক্ষা করতে কোনো মহলের যোগসাজশে কারসাজি করা হয়েছে। হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন দূরের কথা উল্টো তাঁকে হেয় প্রতিপন্ন করতে তৎকালীন ওসি প্রাণপন চেষ্টা করেন। অধিকতর তদন্তে হত্যাকান্ডের আদ্যোপান্ত বেরিয়ে আসবে বলে তার আশাবাদ। জাতীর সূর্যসন্তান এই বীর মুক্তিযোদ্ধা হত্যাকারীদেরকে বিচারের মুখোমুখি করতেই র্যাবকে তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
আসামিপক্ষে আদালতে যুক্তিতর্কে অংশগ্রহণকারী আইনজীবী আবুল খায়ের হেলাল আহমেদ বলেন, তদন্তের গাফিলতি, মূল পরিকল্পনাকারী ও আসামিদেরকে রক্ষা করার বিষয়টি আদালতের নিকট ধরা পড়েছিল। আমিও আদালতে তদন্তে গাফিলতির বিষয়টি তুলে ধরেছি। আদালত তদন্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেও বলেছিলেন। কিন্তু তা আর হয়ে উঠেনি। এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড। এজন্য মামলাটি অধিকতর তদন্ত করতে আদেশ দেয়া হয়েছে।
সুনামগঞ্জ জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু সুফিয়ান বলেন, দীর্ঘ ২৬ বছর অতিবাহিত হয়ে গেল। কিন্তু একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা হত্যার বিচার আর হল না। এর চেয়ে দুঃখজনক ঘটনা আর কি হতে পারে। তদন্তে যারা সত্যকে আড়াল করেছেন তাদেরকেও আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। অধিকতর তদন্তের নামে যেন আবার সময়ক্ষেপণ করা না হয়; সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। অধিকতর তদন্তে সকল ঘাতকের নামসহ হত্যাকান্ডের পুরো রহস্য উদঘাটন করার দাবি করে তিনি ঘাতকদের দ্রুত বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানিয়েছেন।
০ পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়
জানা গেছে, বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল হক চৌধুরী বাচ্চু হত্যা মামলার অধিকতর তদন্ত করতে দেয়া আদেশে মামলার তদন্তে নানা ত্রুটি, প্রশ্নবিদ্ধ তদন্ত ও তদন্ত কর্মকর্তাদের নানা ভূমিকাও তুলে ধরেন আদালত। আদেশে বলা হয়, ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী আব্দুস সালাম তার জবানবন্দিতে বলেছেন, শফিকুল হক চৌধুরীকে হত্যার পর ঘটনাস্থলে একটি ইঞ্জিন বোট আসে এবং ওই বোটে মহরম মেম্বার, আনোয়ার হাজি, রফিক ও জহির আসে। মহরম মেম্বার করম আলীকে ডাক দিলে করম আলী বাচ্চু চৌধুরীর বন্দুকটি নরেশ এর হাতে দিয়ে ঐ নৌকায় উঠে চলে যায়। আনোয়ার হাজিদের সাথে করম আলীর গাদিয়ালা জলমহাল নিয়ে বিরোধ থাকলেও ঘটনার পর আনোয়ার হাজি মহরম মেম্বার, রফিক ও জহিররা নৌকা নিয়ে এসে করম আলীকে ঘটনাস্থল থেকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ায় এটা খুব জোরালোভাবে অনুমান করা যায় যে, বিবদমান উভয়পক্ষ এক হয়ে বাচ্চু চৌধুরীকে পরিকল্পিতভাবে খুন করেছে। আনোয়ার হাজি, মহরম মেম্বারসহ অন্যরা বাচ্চু চৌধুরী হত্যার পরিকল্পনায় অংশগ্রহণ পরিলক্ষিত হলেও তদন্ত কর্মকর্তা তাদেরকে মামলায় আসামি করেননি।
০ সরদার উল্লার জবানিতে হত্যাকান্ডের বর্ণনা
ঘটনার পর মামলার আসামি সরদার উল্লাকে পুলিশ গ্রেফতার করে। এরপর তিনি আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। জবানবন্দিতে হত্যাকান্ডের সাথে নিজের সম্পৃক্ততার বিষয়টি অকপটে স্বীকার করে সরাসরি কিলিং মিশনে অংশ নেয় এমন ২৩ জনের নামও তিনি প্রকাশ করেন। জবানবন্দিতে তিনি বলেন, ‘আসামি লিয়াকত, আব্দুল হক, হামিদ, কাইয়ূম, নান্দু, বেতাউকা গ্রামের কাইয়ূম পিতা-তাজ মোহাম্মদ, ছাদ, জালাল, লিটন, আব্দুল কাদির, রিপন, খালিক, শাহীন, নিজাম পিতা- সাঈদ, ওয়াজিদ, হাসিম, শহীদ পিতা- আজিজ, রশিদ, রফিক, আজিজ, আবুল হোসেন, কলমদর ও আমি। বাচ্চু চৌধুরীকে খুন করার হুকুম দেই আমি, লিয়াকত, হামিদ, খালিক ও নান্দু। এসময় বাচ্চু চৌধুরী পালানোর জন্যে দৌড় দেয়। আব্দুল হক বেন্দা দিয়ে সজোরে বাচ্চু চৌধুরীকে আঘাত করে। বাচ্চু চৌধুরী পড়ে যায়। তখন সকল আসামি সুলফি ও ঝাটা দিয়ে তার শরীরে ঘাই মারতে থাকে। বাচ্চু চৌধুরীর সঙ্গীয় করম আলীর হাতে থাকা বন্দুক নিয়ে প্রাণের ভয়ে পালিয়ে যায়। আমরা সকলে বাচ্চু চৌধুরীকে ফেলে চলে যাই। এমন সময় নাচনী বাজারের ডাক্তার আবুল হোসেন গিয়ে জানায়, বাচ্চু চৌধুরী মরে নাই। তার কাছে ঔষধ চেয়েছে খাওয়ার জন্যে। সঙ্গে সঙ্গে আমরা সকল আসামি বাচ্চু চৌধুরীর কাছে যাই। লিয়াকত, আব্দুল হক, হামিদ, নান্দু, ছাদ দুই কাইয়ুম ঘাই মেরে বাচ্চু চৌধুরীকে মেরে ফেলে। পরে সকলে পালিয়ে যাই। পুলিশ কামারখালি থেকে আমাকে গ্রেফতার করে। আনোয়ার হাজি চক্রান্ত করে আমাদেরকে দিয়ে বাচ্চু চৌধুরীকে খুন করিয়েছে।’ তবে, জবানবন্দী প্রদানকারী সরদার উল্যা এরই মধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন।
০ আদালতের বিষ্ময়
আদালতে দেয়া সরদার উল্লার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে চক্রান্তকারী হিসেবে আনোয়ার হাজির নাম বললেও তদন্ত কর্মকর্তারা তাকে আসামি করেননি। আদালত আদেশে বলেন, এই স্বীকারোক্তি পর্যালোচনায় দেখা যায়, আসামি সরদার উল্লা নিজেকে জড়িয়ে স্বীকারোক্তি প্রদান করেছিল এবং স্পষ্ট করে বলেছে, আনোয়ার হাজির চক্রান্তে এই বর্বরোচিত হত্যাকান্ড ঘটেছে। আসামি নিজেকে জড়িয়ে স্বীকারোক্তি দেয়ার পরও আনোয়ার হাজি এই মামলার আসামি না হওয়ার বিষয়টি বিষ্ময়কর।
০ সাদা কাগজে লিখে প্রতিবেদন দাখিল
দায়রা আদালতের গত ১৯৯৭ সালের ৯ মার্চের ১০ নং আদেশমূলে মামলাটি অধিকতর তদন্তের নির্দেশ প্রদান করা হয় এবং তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলকারী ২ জন কর্মকর্তা তথা ১ম তদন্ত কর্মকর্তা জগন্নাথপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হুমায়ূন কবির সরকার ও ২য় তদন্ত কর্মকর্তা এএসপি রফিকুল ইসলাম মজুমদারের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্যে সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেওয়া হয়। ত্রুটিযুক্ত তদন্তের কারণেই আদালতের নির্দেশে অধিকতর তদন্ত এবং একই সাথে তদন্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে অপ্রণিধানবশতঃ অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার পর নথি আমলি আদালতে প্রেরণ করা হয়নি। অধিকতর তদন্তের আদেশের প্রেক্ষিতে সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক এনায়েতুর রহমান চৌধুরী প্রতিবেদন দাখিল করেন, যে আনোয়ার হাজি ঘটনায় জড়িত নয়। এই প্রতিবেদনটি সাদা কাগজে লিখে দাখিল করেন সিআইডির কর্মকর্তা। তিনি যথাযথভাবে তদন্ত করেননি। তাছাড়া সাক্ষীরা ঘটনাস্থলে আনোয়ার হাজি উপস্থিত থাকার বিষয়ে সাক্ষ্য প্রদান করায় তদন্ত কর্মকর্তার ঐ বক্তব্য সঠিক নয় মর্মে প্রতীয়মান হয় বলে উল্লেখ করেন আদালত। আদালত পরবর্তীতে পরিদর্শক হুমায়ুন কবির সরকার ও এএসপি রফিকুল ইসলাম মজুমদার কর্তৃক তদন্তকৃত এবং এএসপি রফিকুল ইসলাম মজুমদার কর্তৃক দাখিলকৃত ক্রটিপূর্ণ প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এই মামলার বিচারকার্য শুরু করেছেন। পরবর্তী তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডি পরিদর্শক এনায়েতুর রহমান চৌধুরী পূর্বের দুই কর্মকর্তাকে বাঁচানোর জন্য গৎবাঁধা তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছেন।
০ দেহরক্ষী সোবহানকে খোঁজা হয়নি
শফিকুল হক চৌধুরীর দেহরক্ষী উষনপুরের আব্দুস সোবহান ঘটনার দিন সকাল ৭/৮ টার দিকে বাড়ি থেকে চলে যায়। এরপর সে আর ফিরে আসেনি এবং কোনো খোঁজ-খবরও নেয়নি। ঘটনার দিন সকাল বেলা বাচ্চু চৌধুরীর দেহরক্ষী বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার এবং তার নিয়োগকর্তার মৃত্যুর পরেও ফিরে না আসায় হত্যা পরিকল্পনার সাথে তার সম্পৃক্ততা অনুমান করা গেলেও তদন্ত কর্মকর্তা এই আব্দুস সোবহান এর বিষয়ে কোনো তদন্ত করেননি।
০ ঘটনার পরের জিডি গোপন
মামলার সুরতহাল রিপোর্ট ও পোস্টমর্টেম রিপোর্ট পর্যালোচনায় দেখা যায়, জগন্নাথপুর থানার জিডি নম্বর-২১৯ নং মূলে সুরতহাল প্রতিবেদন এবং ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। সংবাদদাতা কর্তৃক ঘটনার পরদিন ০৮/০১/৯৬ ইং তারিখ সকাল ১০টায় এজাহার দায়ের করা হলেও ঘটনার পরপরই ঘটনার বিষয়ে জগন্নাথপুর থানায় জিডি করা হয়েছে। সাক্ষী লিটন মিয়া তার জবানবন্দিতে বলেছেন, ঘটনার পর তিনি থানায় যান এবং পুলিশ নিয়ে আসেন। তদন্ত কর্মকর্তা হুমায়ূন কবির সরকার জেরায় স্বীকার করেছেন, লিটন নামক ব্যক্তি থেকে সংবাদ পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে যান। কিন্তু ঐ জিডি তিনি দাখিল করেননি। মামলার সিডিতে বিশ্বনাথ থানার জিডি নং-২৬৭ ও ২৮০ এর কপি থাকলেও তর্কিত জিডিটি নেই। বিষয়টি সন্দেহের উদ্রেক করে। আসামি পক্ষের বক্তব্য হলো, প্রকৃত সত্য উদঘাটিত হওয়ার ভয়ে ঘটনার পরপর দায়ের করা ঐ জিডির কপি প্রসিকিউশন পক্ষ দাখিল করেননি। জিডির বিষয় গোপন করে সুচিন্তিতভাবে ঘটনার পরদিন এজাহার দায়ের করা হয়েছে। জগন্নাথপুর থানার জিডি নং-২১৯, তারিখ-০৭/০১/৯৬ ইং, এ আদালতে উপস্থাপিত না হওয়ায় এই মামলার একটি অন্যতম ত্রুটি।
০ অদৃশ্য হাতের কারসাজি
তদন্ত কর্মকর্তা হুমায়ূন কবির সরকার জেরায় স্বীকার করেছেন, তিনি ০১/০২/৯৬ পর্যন্ত মোট ২৬ দিন মামলার তদন্ত করেন। তিনি তদন্তভার গ্রহণ করেছিলেন ০৮/০১/৯৬ ইং তারিখে। এজাহারমতে সাক্ষী বেনু মিয়া এবং মানিক বাচ্চু চৌধুরীর সাথে বাড়ি থেকে বের হয়ে ঘটনাস্থলে যায়। অথচ এই দুইজন গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীর ১৬১ ধারার জবানবন্দি তদন্ত কর্মকর্তা রেকর্ড করেছেন ০১/০২/৯৬ ইং তারিখে। জগন্নাথপুর থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কর্তৃক স্বহস্তে এজাহার লেখা, এজাহারে বাচ্চু চৌধুরীর বিষয়ে ঋণাত্মক বক্তব্য থাকা, নিজ গ্রামের আসামিদের নাম অজ্ঞাত থাকা, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিজে তদন্ত করা, বিলম্বে গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীদের সিআরপিসির-১৬১ ধারায় জবানবন্দি রেকর্ড করা, স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে উল্লেখিত চক্রান্তকারী আসামিসহ অন্য আসামিদের তদন্তের আওতায় না আনা ইত্যাদি বিষয়সমূহ বিবেচনা করলে সামগ্রিক তদন্ত কার্যক্রমে হত্যাকান্ডের মূল পরিকল্পনাকারীদের অদৃশ্য হাতের কারসাজি এবং তদন্ত কর্মকর্তার যোগসাজশ পরিলক্ষিত হয়।
জানা গেছে, বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল হক চৌধুরী বাচ্চু হত্যাকারীদের বাঁচাতে জগন্নাথপুর থানার তৎকালীন ওসিসহ একটি চক্র কোমর বেঁধে মাঠে নামে। আইনশৃংখলা বাহিনীর পদস্থ কর্মকর্তার এমন ভূমিকায় খোদ নিহতের স্বজনরাও ন্যায় বিচারের আশা ছেড়ে দেন। অনেকটা বাধ্য হয়েই ওসি হুমায়ুন কবির সরকারের লিখে দেয়া এজাহারে স্বাক্ষর করেন নিহতের বড় ভাই আব্দুল মুকিত চৌধুরী লেবু মিয়া। এজাহারে অনেক তথ্য লুকানো হয়। প্রায় ২৭ বছর আগে পুলিশের সেই আচরণ আজও নিহতের স্বজনরা ভুলতে পারেননি।
প্রসঙ্গত, ১৯৯৬ সালের ৭ জানুয়ারী রোববার সকাল প্রায় সাড়ে ১০টায় জগন্নাথপুর উপজেলার গাদিয়ালা নদীর পশ্চিম পাড়ে স্থানীয় সন্ত্রাসীরা বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল হক চৌধুরী বাচ্চুকে (৪২) কুপিয়ে হত্যা করে। নিহত বাচ্চু চৌধুরী পার্শ্ববর্তী বেতাউকা গ্রামের আব্দুল ওয়াহিদ চৌধুরীর ২য় পুত্র। তৎকালীন সময়ের অত্যন্ত প্রভাবশালী ও সাহসী রাজনীতিক বীরমুক্তিযোদ্ধা বাচ্চু চৌধুরী এভাবে খুন হবেন -তা কেউ কল্পনাও করতে পারেনি।