ভিটেমাটি হারিয়ে খোলা আকাশের নীচে একটি সম্প্রদায়ের লোকজন
ভটেরখাল নদীর ভাঙ্গণে হুমকিতে গোবিন্দগঞ্জ-বিনোদনগর সড়ক
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০১ ডিসেম্বর ২০২২, ৬:৪৬:৫১ অপরাহ্ন
বদর উদ্দিন আহমদ, গোবিন্দগঞ্জ থেকে : ছাতকের ভটেরখাল নদীর ভয়াবহ ভাঙ্গণে অর্ধ শতাধিক বসতবাড়ি ও ফসলী জমি নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। আন্তঃ ইউনিয়ন সংযোগ রক্ষাকারী গোবিন্দগঞ্জ-বিনোদনগর সড়কের প্রায় অর্ধ কিলোমিটার পাকা সড়ক গিলে খেয়েছে খরস্রোতা ভটেরখাল নদী। আরো প্রায় অর্ধ কিলোমিটার সড়ক হুমকির মুখে রয়েছে। এ কারণে এ সড়ক ব্যবহারকারী অন্তত ৭৫টি গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ যাতায়াতের ক্ষেত্রে চরম উদ্বেগে রয়েছেন। এদিকে, নদীর তীর সংলগ্ন পাড়ায় বসবাসরত মুচি সম্প্রদায়ের লোকজন বসত ভিটা হারিয়ে নিঃস্ব অবস্থায় দিনযাপন করছেন।
স্থানীয়রা জানান, সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়কের গোবিন্দগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের মুখ হতে বিনোদনগর পর্যন্ত পাকা সড়ক দিয়ে এলাকার ৭৫টি গ্রামের লক্ষাধিক মানুষের যাতায়াত। এ সড়ক অন্য সড়কের সাথে সংযুক্ত হয়ে উপজেলা সদর, জেলা ও বিভাগের সাথে সহজ সড়ক যোগাযোগ সৃষ্টি করেছে। অপরদিকে, গোবিন্দগঞ্জ বাজার ও সড়কের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ভটেরখাল নদী। শুষ্ক মৌসুমে নদীটি শান্ত থাকলেও বর্ষায় ভটেরখাল নদী ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। খরস্রোতা ভটেরখাল নদীর ভাঙ্গনের মুখে পড়ে গোবিন্দগঞ্জ বাজার সহ গোবিন্দনগর গ্রাম। ফসলী জমি, অগণিত বাঁশ ঝাড়, গাছ-গাছড়া তলিয়ে যায় নদী গর্ভে। সড়ক সংলগ্ন নদীর তীর এলাকায় যুগ-যুগ ধরে বসবাসরত মুচি সম্প্রদায়ের বসতভিটা কেড়ে নিয়েছে ভটরখাল নদী। ভিটে-মাটি হারিয়ে হত দরিদ্র মুচি সম্প্রাদয়ের ১০-১২টি পরিবার এখন খোলা আকাশের নিচে দিনযাপন করছে। তাদের অসহায়ত্বে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান অলিউর রহমান চৌধুরী বকুল, স্থানীয় মুজিবুর রহমান সহ এলাকার ধনাঢ্য ব্যক্তিরা। সরকারী সহায়তা বঞ্চিত মুচি সম্প্রদায়ের বসবাসের জন্য সামান্য ভূমি ক্রয়ের উদ্যোগ নিয়েছেন তারা। বর্তমানে নদী ভাঙ্গণের মারাত্মক হুমকির মুখে রয়েছে গোবিন্দগঞ্জ বাজার, গোবিন্দনগর মাদ্রাসা, প্রাথমিক বিদ্যালয় সহ গোবিন্দনগর গ্রাম। ভটেরখাল নদীর ভয়াবহ ভাঙ্গণের হাত থেকে মাদ্রাসা, স্কুল, গোবিন্দগঞ্জ বাজার, গোবিন্দনগর গ্রামসহ আশপাশের এলাকা রক্ষার দাবি তুলেছেন এলাকাবাসী। পাশাপাশি সরকারী সুবিধা বঞ্চিত মুচি সম্প্রদায়ের লোকজনদের পুনর্বাসনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা।
গতকাল বুধবার নদী ভাঙ্গণরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কমনা করে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে গোবিন্দনগর গ্রামের মুজিবুর রহমান বলেন, বর্তমানে যেখানে নদী দেখা যাচ্ছে, সেখানে ছিল এলাকার মানুষের ফসলী জমি, বসতঘর ও গাছ-গাছড়া। ভাঙ্গণ রোধ না করলে গোটা এলাকা এক সময় নদী গর্ভে বিলিন হয়ে যাবে।
গোবিন্দনগর মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুস ছালাম আল মাদানী বলেন, নদী ভাঙ্গণের হুমকির মুখে পড়েছে দ্বীনি শিক্ষার অন্যতম প্রতিষ্ঠান গোবিন্দনগর মাদ্রাসা। মাদ্রাসার পাশ দিয়ে চলে যাওয়া গোবিন্দগঞ্জ-বিনোদনগর সড়কটি বিভিন্ন অংশের নিচের মাটি সরে গেছে। বিপজ্জনক অবস্থায় এ সড়ক দিয়ে এখন যান চলাচল করছে। সড়কটি রক্ষা করা হলেই মাদ্রাসা, স্কুল সহ গোটা এলাকা রক্ষা হবে। ছাতক উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান অলিউর রহমান চৌধুরী বকুল বলেন, ভটেরখাল নদীর ভাঙ্গণে ভিটে-মাটি হারা মুচি সম্প্রদায়ের লোকজন মানবেতর জীবন যাপন করছে। প্রায় অর্ধ কিলোমিটার পাকা সড়ক চলে গেছে নদী গর্ভে এবং আরো প্রায় অর্ধ কিমি সড়ক বিলিন হওয়ার উপক্রম। এ সড়ক সুরক্ষা ও মুচি সম্প্রদায়ের পুনর্বাসনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদৃষ্টি কামনা করেন তিনি।