এইডস প্রতিরোধে সচেতনতা
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০১ ডিসেম্বর ২০২২, ২:০৫:১৬ অপরাহ্ন
বিশ্ব এইডস দিবস আজ। ঘাতক ব্যাধি এইডস বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষে প্রতিবছর দিবসটি পালিত হয় বিশ্বের অন্যান্য স্থানের মতো বাংলাদেশেও। জাতিসংঘের হিসাব মতে, প্রতিবছর বিশ্বের ৩০ লাখ মানুষ এইডস সংক্রমিত হচ্ছে। প্রতিদিন নতুন করে সংক্রমিত হচ্ছে ছয় হাজার আটশ’ জন। এইডস আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন মারা যাচ্ছে কমপক্ষে পাঁচ হাজার সাতশ’। বিশ্ব এইডস দিবসের প্রাক্কালে আমাদের দেশে এইডসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে কোনো সন্তোষজনক খবর নেই। এদেশে এইডস আক্রান্তদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। আর সিলেটের অবস্থা তো আরও করুণ। এই অঞ্চলে এইডস রোগীর সংখ্যা কতো, তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই। তাছাড়া, রোগীরা সঠিক চিকিৎসাও পাচ্ছে না।
সার্বিকভাবে আমাদের দেশে এইডস ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। বিভিন্ন পরিসংখ্যানে জানা গেছে, দেশে ১৪ হাজারের বেশি এইডস রোগি রয়েছে। এ পর্যন্ত দেড় হাজারের বেশি এইডস রোগি মারা গেছে। এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে যে ক’টি দেশ এইডস ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে তার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশও। আর প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেট রয়েছে ভয়াবহ এইডস ঝুঁকিতে। প্রবাসে অবস্থানকারী অনেকেই দেশে আসার পরে তাদের দেহে ধরা পড়ছে ঘাতক ব্যাধি এইডস। তাই এইডস প্রতিরোধে সম্মিলিতভাবে দ্বিগুণ উৎসাহে দ্বিগুণ গতিতে কাজ করে যেতে হবে। এইডস থেকে মুক্ত থাকার ব্যাপারে সচেতন করে তুলতে হবে সকলকে। বিশেষ করে যুব সমাজের সচেতনতা সবচেয়ে জরুরি। বিশেষজ্ঞগণ বলেছেন, এইডসের কবল থেকে যুব সমাজকে রক্ষা করতে হলে এই সংক্রান্ত তথ্য অবাধ করতে হবে। তথ্য আদান-প্রদান হলে, জ্ঞান বাড়লে মানুষ নিজেই এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সক্ষম হবে। সবচেয়ে বড় কথা, এইডস একটা ঘাতক ব্যাধি। এই রোগের চিকিৎসার সুযোগ নেই বললেই চলে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে চিকিৎসার সুযোগ থাকলেও সেটা সাময়িক। এই রোগ নিরাময়ের সুচিকিৎসা এখনও আবিষ্কৃত হয়নি। তবে সচেতনতার মাধ্যমে এই ব্যাধিকে প্রতিরোধ করা সম্ভব। অবশ্য এইডস রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে অগ্রগতি হচ্ছে দিন দিন। যদিও এই চিকিৎসার সুযোগ পাচ্ছে না অনেক রোগি। এইডস ছড়াতে পারে নানাভাবে। তবে এটা সংক্রামক ব্যাধি নয়। যৌনকর্মী, শিরায় মাদক ব্যবহারকারী, প্রবাসী শ্রমিক, পোশাক শিল্পের নারী শ্রমিক এদের এইডসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। ফলে এদের ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থা এবং আর্থসামাজিক অবস্থার কারণে এই দেশ এইডসের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। উন্মুক্ত সীমান্ত, শ্রম স্থানান্তর এবং দারিদ্র্য ইত্যাদি বিষয় বাংলাদেশকে এইডসের জন্য করে তুলেছে আরও ঝুকিপূর্ণ।
বাস্তবতা হচ্ছে, এইডসের চিকিৎসার ক্ষেত্রে যা-ও অগ্রগতি হয়েছে তার সুযোগ পাচ্ছে না দরিদ্র জনগোষ্ঠী। কারণ এই চিকিৎসা ব্যয়বহুল। আমাদের মতো একটা দরিদ্র দেশের বেশিরভাগ মানুষের পক্ষে এই ব্যয় বহন করা সম্ভব নয়। তাই সচেতনতার মাধ্যমে প্রতিরোধই হচ্ছে এই ঘাতক ব্যাধি থেকে বাঁচার একমাত্র উপায়। তরুণ সমাজ, যৌনকর্মী, নেশার ওষুধ সেবনকারী এবং সমকামীদের সবচেয়ে বেশি সচেতন হতে হবে। শ্রমিকদের বিদেশ যাওয়ার আগে এবং দেশে ফেরার সময় এইডস বিষয়ে তথ্য জানতে হবে। প্রবাসীদের দেশে ফেরার পর যথাযথ শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। সর্বোপরি, ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চললে এইডস থেকে দূরে থাকা সম্ভব। সেই সঙ্গে জরুরি হচ্ছে, এইডস চিকিৎসার উন্নয়ন। এই চিকিৎসাকে করে তুলতে হবে সহজলভ্য। সরকারি উদ্যোগে বিনামূল্যে এইডসের উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হোক, আজকের বিশ্ব এইডস দিবসে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।