উপকারভোগীর তালিকা জনপ্রতিনিধিরা জানেন না ॥ বিস্মিত পরিকল্পনামন্ত্রী
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৩ ডিসেম্বর ২০২২, ৫:০৩:০৮ অপরাহ্ন
জগন্নাথপুর (সুনামগঞ্জ) থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা : পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান গতকাল শুক্রবার অনুদানের চেক বিতরণী অনুষ্ঠানে গিয়ে জানতে চান উপকারভোগীর তালিকা তৈরির বিষয়টি স্থানীয় জন প্রতিনিধিরা জানেন কিনা। এসময় উপস্থিত জনপ্রতিনিধিরা বিষয়টি জানেন না বলে জানান। এতে মন্ত্রী বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, সরকারের একটি প্রকল্পের অর্থ বিতরণ জনপ্রতিনিধিরা জানেন না, এটা দুঃখজনক। ঘটনাটি ঘটেছে জগন্নাথপুর উপজেলা প্রশাসন ও সমাজসেবা কার্যালয়ের উদ্যোগে বাংলাদেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় প্রশিক্ষণ গ্রহণকারীদের অনুদানের চেক বিতরণী অনুষ্ঠানে।
গতকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে ১১ টায় উপজেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাজেদুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা বিল্লাল হোসেনের পরিচালনায় সভার শুরুতে সমাজসেবা কর্মকর্তা জানান, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নের জন্য ১৮ হাজার টাকা করে ৩২৫ জনের মধ্যে আর্থিক অনুদানের চেক বিতরণ করা হবে। এসময় পরিকল্পনা মন্ত্রী জানতে চান, উপকারভোগীর তালিকা কীভাবে তৈরি করা হয়েছে। তখন সমাজসেবা কর্মকর্তা জানান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সভাপতি ও উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা সদস্য সচিব ও একটি পৌরসভা ও আট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সদস্য হিসেবে উপকারভোগী চূড়ান্ত করার উপজেলা কমিটিতে রয়েছেন। তাদের মতামতে উপকারভোগীদের তালিকা চূড়ান্ত হয়।
এসময় সাবেক পৌর মেয়র মিজানুর রশীদ ভূঁইয়া, রানীগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছদরুল ইসলাম, পাইলগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মখলুছ মিয়া, পাটলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আংগুর মিয়া, আশারকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আইয়ুব খান, চিলাউড়া হলদিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম বকুল উপকারভোগীর চূড়ান্ত করার তালিকা তৈরির বিষয়টি তাঁরা জানেন না বলে জানান। সভায় সাবেক পৌর মেয়র মিজানুর রশীদ ভূঁইয়া জানান, দুই বছর আগে আমি পৌরসভার মেয়র ছিলাম। আমি এ ধরনের বিষয়ে কিছু জানি না।
পাইলগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের টানা দুইবারের চেয়ারম্যান মখলুছ মিয়া বলেন, আমার জানা নেই। কেউ আমাদের কে এ বিষয়ে অবগত করে নি। একইভাবে রানীগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছদরুল ইসলাম, পাটলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আংগুর মিয়া, আশারকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আইয়ূব খান, চিলাউড়া হলদিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম বকুল বিষয়টি জাানেন না বলে সভায় জানান। এসময় পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাজেদুল ইসলাম বলেন, দুই বছর আগে উপকারভোগীর তালিকা তৈরি করা হয়েছে। আমি তখন দায়িত্বে ছিলাম না। তিনি বলেন, উপকারভোগীর তালিকা চূড়ান্ত হয়ে গেছে তা বাতিল করা যাবে না।
এ সময় পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, আমরা বাতিলের কথা বলছি না, আমরা এ তালিকা আবারও যাছাই বাছাই করা যায় কিনা সকলের মতামত চাই। তখন সবাই পরিকল্পনামন্ত্রীকে বিষয়টি যাছাই বাছাই করে চেক বিতরণের আহবান জানান। পরে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার উপকারভোগীদের সাথে তিনি কথা বলেন এবং উপকারভোগীর তালিকা যাছাই বাছাই করে চেক বিতরণ করেন।
এসময় পরিকল্পনা মন্ত্রী প্রশাসনের কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্য বলেন, আপনারা সরকারের নিয়ম কানুন মেনে কাজ করুন এটা আমরা চাই। জনপ্রতিনিধিদের সাথে আলোচনা করলে কোন ক্ষতি নেই। তিনি বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, জনপ্রতিনিধিদের সাথে আলোচনা করে কাজ করার মানসিকতা থাকলে জনগণের কল্যাণ হবে। আমাদের সবাইকে জন কল্যাণে কাজ করতে হবে।
পরিকল্পনামন্ত্রী আরও বলেন, বিএনপি আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে এখন দেশের বিরুদ্ধে গুজব রটাচ্ছে। ব্যাংকে টাকা নেই বলে অপপ্রচার চালিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চেয়েছিল। এসব গুজব ও অপপ্রচারের বিরুদ্ধে মানুষকে সজাগ থাকতে হবে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হচ্ছে। চলমান বিশ্ব অর্থনৈতিক সংকট সরকার সফলতার সাথে মোকাবিলা করছে। সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নিত্যপণ্যের দাম রাখতে সরকার নানা উদ্যোগ নিয়ে আন্তরিকতার সাথে কাজ করে যাচ্ছে। সভায় অন্যানের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ এর সহ সভাপতি সিদ্দিক আহমেদ, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আকমল হোসেন, উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আবুল হোসেন, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সুফিয়া খানম সাথী, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান প্রমুখ। পরে পরিকল্পনামন্ত্রী নব নির্মিত জগন্নাথপুর থানার ভবনের কাজ পরিদর্শন করেন। এসময় জগন্নাথপুর ও শান্তিগঞ্জের সার্কেল শুভাশীষ ধর উপস্থিত ছিলেন।