বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৩ ডিসেম্বর ২০২২, ৭:৪৩:২৬ অপরাহ্ন
আজ আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস। প্রতিবন্ধীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সমাজের মূল স্রোতে সম্পৃক্ত করার লক্ষে প্রতিবছর দিবসটি পালিত হয়। অস্বীকার করার উপায় নেই যে, প্রতিবন্ধীরা সমাজের অবহেলিত অংশ। তারা পায় না সামাজিক নানান সুযোগ-সুবিধা। অনাদরে বেড়ে ওঠা বুদ্ধি ও শারীরিক প্রতিবন্ধী শিশুদের কর্মক্ষম করে তোলা কিংবা তাদেরকে যাতে সমাজের বোঝা হিসেবে না ভাবা হয় সেটা নিশ্চিত করার দায়িত্ব আমাদের সকলের। সর্বোপরি, তাদের গড়ে তুলতে হবে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী হিসেবে। এই প্রেক্ষাপটে আমাদের দেশে পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস।
সরকারি হিসেবে দেশে প্রতিবন্ধীর সংখ্যা ৯২ লাখের ওপরে। আর বেসরকারি হিসাবে সংখ্যা কমপক্ষে এক কোটি দশ লাখ। নানা কারণে এই শারীরিক বা বুদ্ধি প্রতিবন্ধীর সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে। জাতিসংঘ ঘোষিত প্রতিবন্ধী অধিকার সনদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ি সরকার প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে নানা উদ্যোগ নিচ্ছে। স্মরণ করা যেতে পারে, বাংলাদেশ ২০০৬ সালে প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে প্রণীত আন্তর্জাতিক সনদে স্বাক্ষর করেছে। তার ভিত্তিতে প্রতিবন্ধীদের প্রাপ্য অধিকারটুকু দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ সরকার। ইতোমধ্যে বেশ কিছু উদ্যোগ বাস্তবায়িত হয়েছে। প্রতিবন্ধীদের লেখাপড়া নিশ্চিত করতে তাদের জন্য উপবৃত্তি প্রবর্তন করা হয়েছে। তাদের চিকিৎসার বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এছাড়া, সরকারি আবাসন প্রকল্পের সুযোগ দেয়া, খাস জমি বরাদ্দ দেয়ার পাশাপাশি প্রতিবন্ধীদের সুবিধা দেয়া হবে বিমানবন্দর, রেলওয়েসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে। প্রতিবন্ধীদের উন্নয়ন ও সুবিধার জন্য ৪৬টি ফোকাল পয়েন্ট নির্ধারণ করে তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা, সরকারের এই সব উদ্যোগের সুফল যথাযথভাবে পাচ্ছে না সংশ্লিষ্টরা। এর কারণ অনেক। প্রথমত সরকারের এইসব প্রকল্প বাস্তবায়নের বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় রয়েছে নানা অনিয়ম অব্যবস্থাপনা। বছর কয়েক আগে প্রতিবন্ধী জরিপ অনুষ্ঠিত হয় সারা দেশে। কিন্তু তাতে সঠিকভাবে প্রতিবন্ধীদের তথ্য বেরিয়ে আসেনি বলে অভিযোগ রয়েছে। তাছাড়া, যেহেতু প্রতিবন্ধীদের বেশির ভাগই অসচ্ছল দরিদ্র পরিবারে বেড়ে উঠছে; তাই আর্থিক দৈন্যতায় চিকিৎসাসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা তারা পাচ্ছে না। অপরদিকে বিত্তবান ঘরে জন্ম নেয়া প্রতিবন্ধীরা অনেক সময় সুচিকিৎসার সুযোগ পাচ্ছে। এতে তাদের প্রতিবন্ধীত্ব অনেকটাই ঘুচিয়ে ফেলা সম্ভব হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী বর্তমানে বিশ্বে প্রতিবন্ধীর সংখ্যা ৭শ’ ৫০ মিলিয়ন। এদের ৮০ ভাগেরই বসবাস উন্নয়নশীল দেশে। আর এইসব দেশের জনসংখ্যার দশ ভাগই প্রতিবন্ধী।
প্রতিবন্ধীরা সমাজ বা রাষ্ট্রের কাছ থেকে যে মর্যাদাই লাভ করুক না কেন, তারা পরিবারে অবশ্যই আদরের সন্তান। মা-বাবার কাছ থেকে তারা স্নেহ-মমতা পাবেই, এটাই স্বাভাবিক। তাছাড়া, তাদের এই অবস্থার জন্য তো তারা নিজেরা দায়ী নয়; কিংবা মা বাবাও দায়ী নয়। সুতরাং তাদেরকে সহযোগিতা করা, তাদের সঙ্গে স্বাভাবিক আচরণ করা, তাদেরকে স্বাভাবিক জীবনযাপনে উৎসাহিত করার দায়িত্ব আমাদের সকলের। সবচেয়ে বড় কথা, প্রতিবন্ধীদের ব্যাপারে সামাজিক সচেতনতা গড়ে তোলার ওপর জোর দিতে হবে। উন্নত বিশ্বে প্রতিবন্ধীদের সমাজে সর্বোচ্চ সুযোগ সুবিধা দেয়া হয়। আমাদেরও সেটি মাথায় রাখতে হবে।