বিজয়ের মাস
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ ডিসেম্বর ২০২২, ৫:০২:০৮ অপরাহ্ন

স্টাফ রিপোর্টার : আজ ৪ ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের এই দিনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বেতারে এক ভাষণ দেন। সেই ভাষণে বাংলাদেশের প্রতি তার সমর্থন স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল। পূর্ব পাকিস্তান আর দখলে রাখা যাবে না এবং মুক্তিবাহিনী যে ক্রমেই শক্তিশালী হয়ে উঠছে, সেটা পাকিস্তানিরা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছিল। রণাঙ্গনগুলোতে ক্রমেই পরাস্ত হচ্ছিল পাকিস্তানি হানাদাররা। এই বাস্তবতা সামনে রেখে পাকিস্তানিরা আরেক যুদ্ধে মেতে উঠে। সেই যুদ্ধ স্নায়ুযুদ্ধ। আন্তর্জাতিক এই স্নায়ুযুদ্ধ শুরু হয় জাতিসংঘে। পাকিস্তান চেয়েছিল এই যুদ্ধকে পাক-ভারত যুদ্ধ হিসেবে দেখিয়ে নিজেদের সুবিধা হাতিয়ে নিতে। বিশ্ব সম্প্রদায়ের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা কাজে লাগিয়ে যুদ্ধবিরতি কার্যকর করাই ছিল তাদের মূল লক্ষ্য। যুদ্ধ থামাতে পারলে মুক্তিযোদ্ধাদের অগ্রগতি রোধ করা সম্ভব হবে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা প্রসঙ্গ তখন দুর্বল হয়ে পড়বে।
একাত্তরের এই দিনে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে পাকিস্তানের অনুরোধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব উপস্থাপন করে। এ প্রস্তাবে দাবি করা হয়- এ মুহূর্তে ভারত ও পাকিস্তানকে নিজ নিজ সীমান্তের ভেতর সৈন্য প্রত্যাহার করতে হবে। কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়ন এই প্রস্তাবের বিপক্ষে অবস্থান নেয়। বৈঠকের পর বৈঠক হলেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবটি নিরাপত্তা পরিষদে পাস হতে পারেনি। কিন্তু তখনও পাকিস্তান তার অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছিল। এমনই অস্থির সময়ে ভারতে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার পড়ে যায় চরম উৎকণ্ঠায়। একাত্তরের এই দিনে তারা ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে লিখিত এক পত্রে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদানের জন্য অনুরোধ করে। এ চিঠিতে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে আশ্বাস দিয়ে বলা হয়- ‘উভয় দেশের এই ভয়াবহ বিপদে বাংলাদেশ সরকার ও জনগণ আপনাদের সঙ্গে রয়েছে। আমাদের আন্তরিক আশা রয়েছে, আমাদের যৌথ প্রতিরোধে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের জঘন্য চক্রান্ত ব্যর্থ হতে বাধ্য। আমরা সফল হবই।’ এই দিন দুপুরে এক বেতার ভাষণে ইয়াহিয়া খান ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে বলেন, ‘আমাদের সেনাবাহিনী শত্রুকে কেবল আমাদের ভূখন্ড থেকে বিতাড়িত করবে না, শত্রুর ভূখন্ডে গিয়েও তাদের নির্মূল করবে।’ কথাগুলো ছিল তার শুধুই আস্ফালন। রণাঙ্গনে তখন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ক্রমেই পিছু হটছে। তারা ভয়ে অনেকটা দুর্বল হয়ে পড়ে। মনের দিক থেকেও প্রবল ধাক্কা খায়। মুক্তিযোদ্ধারা দখলদার মুক্ত করতে থাকে দেশের বিভিন্ন এলাকা। পাকিস্তানি সামরিক ঘাঁটিগুলোতে অবিরাম গোলাবর্ষণ করছে। পালানোর পথ খুঁজছে পাকিস্তানি হানাদাররা। এই দিন যৌথবাহিনীর তিনটি ডিভিশন যশোর, পঞ্চগড় ও চুয়াডাঙ্গা দিয়ে ঢাকা অভিমুখে এগোতে থাকে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বাংলার দামাল মুক্তিযোদ্ধারা প্রাণপণ লড়াই করতে থাকেন। দখলদার মুক্ত হয় বিভিন্ন এলাকা।