সিলেট-শিলচর বাস বিমান রেল নৌ যোগাযোগ চালুর তাগিদ মৈত্রী উৎসবে
‘সিলট আমরা ২ নম্বর উৎসব পালন করমু’
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ ডিসেম্বর ২০২২, ৫:৫৬:২২ অপরাহ্ন
মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম/সুনীল সিংহ/নুরুল ইসলাম, শিলচর (আসাম) থেকে : আগামী বছর সিলেট-শিলচর ফেস্টিভাল আয়োজনের ঘোষণার মধ্য দিয়ে শেষ হলো দু’দেশের মৈত্রী উৎসব। সমাপনী দিনে দু’দেশের প্রতিনিধিরা সিলেট-শিলচর বাস, ট্রেন, বিমান ও নৌ যোগাযোগ বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তারা বলেন, যৌথ প্রচেষ্টার মাধ্যমেই দুদেশকে উন্নয়নের ক্ষেত্রে আরো এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
শিলচর পুলিশ গ্রাউন্ডে আয়োজিত শিলচর-সিলেট ফেস্টিভালের সমাপনী উৎসবে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের প্রধান ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এমপি আগামী বছর সিলেটে এ উৎসব আয়োজনের ঘোষণা দিয়ে বলেন, সিলেট-শিলচর বাস সার্ভিস চালু আমার ইচ্ছা। আমরা এটা প্রসেস করবো। শিলচর-সিলেট রাস্তা চালু হতে কিছুটা সময় লাগবে জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের দেশের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে অনুমোদন নিতে হয়। এরপর আমরা এ প্রস্তাব ভারত সরকারের কাছে পাঠাবো। রেল যোগাযোগ স্থাপনের ক্ষেত্রেও অনেক অগ্রগতি হয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কমপ্রিহেনসিভ ট্রেড এগ্রিম্যান্ট চালুর বিষয়ে দু’দেশের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এ ইস্যু নিয়ে কাজ করছে। উভয় দেশের মধ্যে কানেকটিভিটি বাড়ানো হয়েছে। ভারতের সাথে বাণিজ্য সম্পর্কের আরো উন্নয়ন, ছোটখাটো অনেক বিষয় আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করাই আমাদের মূল লক্ষ্য।
ভিসা ছাড়াই দু’দেশের মানুষের চলাচল সংক্রান্ত বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সাথে আলোচনা চলছে। আগামীতে এটাও হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন মন্ত্রী। শিলচরে ভিসা অফিস স্থাপনের বিষয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে।
শনিবার সন্ধ্যায় আয়োজিত সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ভারতের কেন্দ্রীয় পররাষ্ট্র ও শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী রাজ কুমার রঞ্জন সিংহ। ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক রাম মাধবের সঞ্চালনায় এতে প্যানেল আলোচক ছিলেন-সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ড. শমসের মবিন চৌধুরী বীর বিক্রম ও শিলচরের লোকসভার সদস্য রাজদ্বীপ রায়। দিনের বিভিন্ন সেশনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, মিজোরামের গভর্নর কে হরি বাবু, আসাম সরকারের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রী চন্দ্র মোহন পাটোয়ারী, সংসদ সদস্য শাহ নেওয়াজ মিলাদ গাজী, ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মোস্তাফিজুর রহমান, সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি তাহমিন আহমদ, সাবেক সভাপতি এটিএম শোয়েব ও উইমেন চেম্বারের সভাপতি স্বর্ণলতা রায় প্রমুখ অংশ নেন। সমাপনী দিনে নীলাঞ্জনা জুই’র নেতৃত্বে সিলেটের নৃত্যশিল্পীরা নৃত্য পরিবেশন করে। এছাড়া, আসামের বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী, নাগা, নেপালি ও রাজবংশী শিল্পীরা নৃত্য পরিবেশন করে।
উৎসবের মূল উদ্যোক্তা রাজদ্বীপ রায় বলেন, ভারতবর্ষ বর্তমানে বিশ্বের ৪র্থ বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। এ থেকে আরো উত্তরণ হতে চাই। ২০২৬ সালে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের উত্তরণ হবে জানিয়ে তিনি বলেন, এজন্য অনেক পরিবর্তন আনতে হবে। সেটা থেকে বাইরে থেকেও এ নিয়ে চিন্তা করতে হবে। নদী পথ খুলে দিতে হবে। গৌহাটি-সিলেট-ঢাকা এয়ারফ্লাইট চালুর বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের বক্তব্য উদ্ধৃত করে বলেন, বিষয়টি সময় সাপেক্ষ এবং এটি দিল্লীতে ভারত সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে। আশাকরি, আগামী কিছুদিনের মধ্যে এটা চালু হয়ে যাবে। বাংলাদেশের সাথে যাতায়াত ব্যবস্থা বাড়বে। বাস সার্ভিস চালু হলে সিলেট-শিলচর যোগাযোগ আরো সহজ হবে। এ অঞ্চলের ইকোসিস্টেম ডেভেলপ করার ওপরও জোর দেন তিনি।
সমাপনী বক্তব্যে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘আমরার আবার দেখা অইব। সুরমা নদীর পারে। আগামী বছর উপরওয়ালা যদি রাজি অইন, অউ অঞ্চল থাকি সবরে লইয়া সিলট যাইমু। আমরা সিলটও ২ নম্বর উৎসব পালন করমু।’
প্রসঙ্গত, ভারতের স্বাধীনতার ৭৫ ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর উদযাপনের অংশ হিসেবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এ মৈত্রী উৎসব। ভারতের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশন, নতুন দিল্লী ও বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট অংশীদারদের সহযোগিতায় আয়োজন করা হয়েছে এ মৈত্রী উৎসবের। বাংলাদেশ ও ভারতের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুক্রবার সম্মেলন শুরু হয়। সমাপনী দিনে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সৌজন্যে ডিনারের আয়োজন করা হয়।
শিলচর এনআইটিতে বঙ্গবন্ধু কর্ণার উদ্বোধন
ভারতের আসামের শিলচরে অবস্থিত ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এনআইটি)-এর ভারত রত্ন ড. এ পি জে আব্দুল কালাম লার্নিং অ্যান্ড রিসোর্স সেন্টারে ‘বঙ্গবন্ধু কর্ণার’ এবং লাইব্রেরি প্রাঙ্গণে বঙ্গবন্ধু গার্ডেন উদ্বোধন করা হয়েছে। গতকাল শনিবার সকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ও এনআইটি শিলচরের ডাইরেক্টর প্রফেসর রজত গুপ্ত এই কর্ণার উদ্বোধন করেন। এনআইটি, শিলচরে বঙ্গবন্ধু কর্ণার এবং বঙ্গবন্ধু গার্ডেনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন শেষে সেন্টারের ভূপেন হাজারিকা অডিটরিয়ামে আয়োজিত আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. মোমেন বঙ্গবন্ধু কর্ণার গড়ে তোলার জন্য ভারত সরকারের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, ‘ভারত সরকারের জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান তথা দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ ডিজিটাল লাইব্রেরিতে মুজিব কর্ণার স্থাপন করায় এ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বঙ্গবন্ধুর সারা জীবনের সংগ্রাম, তার আদর্শ ও স্বপ্ন সম্পর্কে আরও বেশি জানার সুযোগ সৃষ্টি হলো। একইসঙ্গে তারা বাংলাদেশের দীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস এবং ভারত সরকার কীভাবে আমাদের মুক্তিযুদ্ধে সহায়তা করেছে সেগুলোও জানতে পারবে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ উন্নয়ন ও সমৃদ্ধিতে যে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে সেসব তথ্যও তারা জানার সুযোগ পাবে।’
এনআইটি, শিলচরে স্থাপিত মুজিব কর্ণারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন তার লিখিত ও সম্পাদিত বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের উন্নয়ন বিষয়ক কিছু বই উপহার দেন। মুজিব গার্ডেন উদ্বোধনের পর সেখানে তিনি গাছের চারা রোপণ করেন।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের অন্যান্যের মধ্যে মুহিবুর রহমান মানিক এমপি, ইকবালুর রহিম এমপি, গাজী মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ এমপি, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমসের মবিন চৌধুরী, ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মোস্তাফিজুর রহমান, এনআইটি শিলচরের শিক্ষকবৃন্দ, সিলেটের ব্যবসায়ী প্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতা এবং মিডিয়ার প্রতিনিধি ও এনআইটি শিলচরে অধ্যয়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।