ছেলেকে নিয়ে চা শ্রমিক কমলি রবিদাসের স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিলো
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৯ ডিসেম্বর ২০২২, ৫:২১:১৯ অপরাহ্ন
মৌলভীবাজার থেকে হোসাইন আহমদ : চা শ্রমিক কমলি রবিদাস। চা বাগান আর অন্যের বাড়িতে কাজ করে ছেলেকে পড়িয়েছেন দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ছেলে সন্তোষ রবিদাস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১৯ সালে বিবিএ এবং ২০২০ সালে এমবিএ পাশ করেন। বর্তমানে চা শ্রমিক মায়ের স্বপ্ন পূরণ করে সন্তোষ মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক মৌলভীবাজার শাখায় কর্মরত।
সন্তোষের মা কমলি রবিদাস ‘জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ’ এর সফল জননী নারী ক্যাটাগরিতে মৌলভীবাজার মহিলা অধিদপ্তর থেকে বাছাই হয়েছেন।
জানা যায়, মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগরের ফাঁড়ি কানিহাটি চা-বাগানে সন্তোষের বাড়ি। ছয় মাস বয়সী ছেলে আর স্ত্রীকে রেখে হঠাৎ মারা যান সন্তোষের বাবা সত্যনারায়ণ রবিদাস। চা শ্রমিক স্বামীকে হারিয়ে ব্যাকুল হয়ে পড়েছিলেন কমলি রবিদাস। কীভাবে চলবেন, শিশু সন্তানকে কী খাওয়াবেন, নিজেই বা খাবেন কীভাবে। এনিয়ে তার চিন্তার অন্ত ছিল না। বাগানে কাজ নিলেন। দৈনিক মজুরি ১৮ টাকা। এই সামান্য মজুরি দিয়েই ছেলের খাবারের ব্যবস্থা করতেন। নিজে খেতেন চায়ে ভেজানো রুটি।
ছেলেকে নিয়ে কমলির অনেক স্বপ্ন। একদিন চা বাগানের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়ে দিলেন। সন্তোষ পড়াশোনায় ভালো। কিন্তু চা-বাগানের স্কুলটা তেমন ভালো না। ছেলের ইচ্ছে ভালো স্কুলে পড়া। সেই ইচ্ছে পূরণ করতে সন্তোষ রবিদাসকে তাই ডানকান ব্রাদার্স ফাউন্ডেশনের লংলা স্কুলে ভর্তি করে দিলেন কমলি। সেখান থেকে ২০১৩ সালে এসএসসি পাস করেন সন্তোষ।
ছেলে কলেজে ভর্তি হবে। অর্থ প্রয়োজন। কিন্তু এত টাকা তো কমলি রবিদাসের নেই। চা বাগানের অবস্থা সম্পন্ন পরিবার ও পড়শিদের কাছে সাহায্য চাইলেন। কিন্তু কেউ সাহায্য করল না। বাধ্য হয়ে চা বাগানের কাজের ফাঁকে ফাঁকে মানুষের বাড়িতে কাজ করা শুরু করলেন। বালুঘাটেও দৈনিক ৩০০ টাকা মজুরিতে কাজ করেছেন। তাতেও যখন কুলাচ্ছিল না, গ্রামীণ ব্যাংকের সদস্য হয়ে ঋণ নিলেন কমলি। ২০১৫ সালে শমশেরনগরের বিএএফ শাহীন কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন সন্তোষ রবিদাস। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কোচিং করতে যান সিলেটে। ছেলের পড়াশোনার অর্থ জোগান দিতে গিয়ে দ্বিগুণ হয় মায়ের লড়াই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মার্কেটিং বিভাগে স্নাতকে ভর্তির সুযোগ পান সন্তোষ। এতদিনে মায়ের মুখে হাসি ফোটে।