দুর্নীতি বিরোধী দিবস
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৯ ডিসেম্বর ২০২২, ৭:১৬:১২ অপরাহ্ন
দুর্নীতি বিরোধী দিবস পালিত হচ্ছে আজ। দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার জন্য সারা দেশে দিবসটি পালিত হচ্ছে। ঘুষ, অনিয়ম, দুর্নীতির মাত্রা দিন দিন বেড়ে চলেছে যে সমাজে, সেখানে দুর্নীতিবিরোধী দিবস পালনের গুরুত্ব যে কতোটুকু সেটা বলাই বাহুল্য। ঘুষ, দুর্নীতি, লুটপাট এখানে নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। বিশেষ করে সরকারি অফিস আদালতে অবৈধ অর্থের লেনদেন অতি সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঘুষ ছাড়া ফাইল নড়ে না, ঘুষ ছাড়া নড়ে না মানুষ। খুলে না মানুষের মুখ। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারিদের মধ্যে এমন একজনকেও খুঁজে পাওয়া মুশকিল, যিনি কখনও ঘুষ ছাড়া কোনো কাজ করে দিয়েছেন।
দেশের সকল অর্থনৈতিক কার্যক্রমেই দুর্নীতির বিস্তার ঘটছে ব্যাপকভাবে। সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে তৃণমূল পর্যন্ত বিস্তার ঘটছে দুর্নীতির। দেশের নিম্ন আদালত থেকে উচ্চ আদালত পর্যন্ত বছরে তিন হাজার কোটি টাকার বেশি ঘুষ লেনদেন হয়। সরকারি কাজে প্রতিদিনই ঘটে চলেছে সীমাহীন দুর্নীতি। কিন্তু প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেই। চিহ্নিত দুর্নীতিবাজরা কোনো শাস্তি পায় না। বছরের পর বছর এই ধারা চলতে থাকায় সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতি বেড়েই চলেছে। ফলে একদিকে অপচয় হচ্ছে রাষ্ট্রীয় কোষাগারের অর্থ, অপরদিকে পরিকল্পনা অনুযায়ী অবকাঠামো নির্মাণ না হওয়ায় দেশের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প তদারকির কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তারা দুর্নীতির তথ্য উদঘাটনে বরাবরই ব্যর্থ। বিভিন্ন জরিপে প্রাপ্ত তথ্য হচ্ছে, সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পে বরাদ্দ অর্থের ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ লুটপাট হচ্ছে। তাছাড়া দুর্নীতির কারণে দ্রুত বাড়ছে কালো টাকার দৌরাত্ম্য, বাড়ছে ধনী-গরিবের ব্যবধান। প্রতি মাসে দুর্নীতির কারণে দেশে আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে প্রায় ৩৬ কোটি টাকা। দুর্নীতির কারণে ইতোপূর্বে দাতাসংস্থা স্থগিত করেছে অনেক প্রকল্প। অত্যন্ত দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, সরকারি অফিস আদালতে একদিকে সাধারণ মানুষকে নানাভাবে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে, অপরদিকে সরকারিভাবে বাস্তবায়িত বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ লুটপাট হচ্ছে-অপচয় হচ্ছে। রাস্তা-ঘাটসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণের ক্ষেত্রে প্রকল্প গ্রহণ থেকে শুরু করে অনুমোদন বাস্তবায়ন পর্যন্ত স্তরে স্তরে ঘুষ দিতে হয়। সরকারের উচ্চস্তরের কর্মকর্তাসহ পিয়ন, দারোয়ান এবং মাঠ পর্যায়ের ঠিকাদাররা প্রকল্পের অর্থ লুটপাটের সঙ্গে জড়িত। যেহেতু ওপর মহল থেকে নিচ পর্যন্ত দুর্নীতি বিস্তৃত, তাই দুর্নীতির বিষয়টি তদারকি করার কেউ নেই। তাই দুর্নীতিবাজরা দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় এটাই যে, বিভিন্ন দপ্তর ও প্রতিষ্ঠানে সরকারি সিস্টেমেই ঘুষ দুর্নীতির সুযোগ রয়েছে। উপনিবেশিক আমলের পদ্ধতিতে পরিচালিত সরকারি অফিস আদালতে অনেক সময় সরকারি ‘আইন মেনেই’ চলছে ঘুষ দুর্নীতি। অনেক অফিসে ঘুষ গ্রহণ একটা ‘বৈধ কাজ’ হিসেবেই পরিলক্ষিত হয়ে আসছে।
ঘুষ দুর্নীতির কবল থেকে বাঁচতে হলে এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে সরকারসহ সকল শ্রেণির মানুষকে। নিজেদের অধিকার আদায়ে সোচ্চার না হলে দুর্নীতিবাজদের দাপট বাড়তেই থাকবে। ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী ঘুষ আদান-প্রদান অপরাধ। এটাও সংশ্লিষ্টদের উপলব্ধি করতে হবে। অনেক সময় দুর্নীতির পেছনে থাকে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা। তাই দুর্নীতি প্রতিরোধে চাই রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি। আজকের দুর্নীতিবিরোধী দিবসে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার প্রত্যয় ঘোষণা করতে হবে সকলকে।