বেগম রাবেয়া
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১২ ডিসেম্বর ২০২২, ৫:৩১:১৬ অপরাহ্ন
রঞ্জিত কুমার দে
দানবীর রাগীব আলী ১৯৩৮ সালের ১০ অক্টোবর সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার তালিবপুর (বর্তমান রাগীবনগর) গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম হাজী রাশীদ আলী এবং মায়ের নাম রাবেয়া বানু। পূর্ব পুরুষের আদি নিবাস সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই উপজেলার মাটিয়াপুর গ্রামে। ১৯৬৩ইং সনের ২৯ মার্চ রাবেয়া খাতুন চৌধুরীর সঙ্গে তাঁর বিবাহ হয়েছিল। ১৯৬৪ সনের ২৪ জানুয়ারি রাগীব আলীর ঘর উজ্জ্বল করে জন্ম নিলো এক ছেলে সন্তান। নাম রাখলেন মোহাম্মদ আব্দুল হাই।
তিনি একজন নিবেদিত দেশপ্রেমিক পুরুষ। নিস্বার্থ সমাজসেবক, স্বাধীনচেতা ও দৃঢ় ব্যক্তিত্বসম্পন্ন আত্মপ্রত্যয়ী এক সংযমী কর্মবীর। তাঁর কর্মজীবন ও আদর্শ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে স্মরণীয় বরণীয় হয়ে থাকবে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে প্রবাসে তাঁর সাহায্য সহযোগিতা জাতি আজীবন কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ রাখবে। সুদূর বিলেতে নিষ্ঠা ত্যাগ ও পরিশ্রমের বিনিময়ে যে সুনাম, যশ খ্যাতি ও অঢেল প্রাচুর্যের শীর্ষে আরোহণ করছেন তা সত্যিই ঈর্ষণীয়।
দানবীর রাগীব আলী স্ত্রী অন্তঃপ্রাণ। সিলেটের রায় হুসেনের পাক্কা বাড়ির মেয়ে রাবেয়া খাতুন চৌধুরীকে বিয়ে করে তিনি খুবই আনন্দিত হয়েছিলেন। তিনি এমন একজন নারীকে জীবনসাথী হিসেবে পাশে পেয়েছিলেন, যিনি তাঁর সকল কাজে উৎসাহ যোগাতেন, স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে তিনি লন্ডনে হোটেল ব্যবসা করেছেন। সেখানে তিনি তাঁকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করতেন। দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল, কলেজ, মসজিদ, মাদ্রাসা, মন্দির প্রতিষ্ঠায় তাঁর সাথে সহযোগী হিসেবে কাজ করেছেন, অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে এই বৃদ্ধ বয়সে স্ত্রীকে স্মরণ করেন। লন্ডনে কোনো একদিন নিজের হোটেলে বালতি ভরতি পানি তুলতে গিয়ে কোমরে ব্যথা পেয়েছিলেন রাবেয়া খাতুন চৌধুরী। লন্ডনে ডাক্তার দেখিয়েছেন, উন্নত চিকিৎসা নিয়েছেন, দেশেও চিকিৎসা করিয়েছেন কোনো লাভ হয়নি, আজীবন কোমরের ব্যথায় ভুগতে হয়েছে। এমন স্ত্রীকে তাঁর মনে রাখাই স্বাভাবিক।
আমরা দেখি যতগুলো প্রতিষ্ঠান রাগীব আলী গড়েছেন তাতে রাগীব-রাবেয়া কথাটি জোড় লাগানো থাকতো। স্ত্রীর নাম বাদ দিয়ে রাগীব আলীর একক নামে খুব কম সংখ্যক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। রাগীব আলী ১০টি ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠা করেছেন। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান/ব্যক্তির নামে। এগুলো অধিকাংশই রাগীব আলীর সাথে রাবেয়া খাতুন চৌধুরীর নাম যুক্ত আছে। সমাজে রাগীব আলী যে প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন তাতে তাঁর স্ত্রী রাবেয়া খাতুন চৌধুরীর যথেষ্ট অবদান রয়েছে। স্ত্রীকে তিনি সেভাবেই মূল্যায়ন করেছেন।
তবে একটি বিষয় লক্ষ করা যায়, রাবেয়া খাতুন চৌধুরীর স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য তাঁর কীর্তিকে অমর করে রাখার জন্য তিনি আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এজন্য তিনি রাবেয়া খাতুন চৌধুরীর জীবনী রচনায় বিভিন্ন জনকে উৎসাহিত করেছেন। বিভিন্ন মানুষের সাথে রাবেয়া খাতুন চৌধুরী কেমন ব্যবহার করতেন, কাকে কিভাবে সাহায্য সহযোগিতা করেছেন এসব স্মৃতিচারণমূলক একাধিক বই ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন- ‘বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর/ অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর’।/ আমরা দেখতে পাই রাগীব আলীর সব কাজের সফলতায় অংশীদার রাবেয়া খাতুন চৌধুরী।
লেখক : অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক।