সফল নারী রাবেয়া
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১২ ডিসেম্বর ২০২২, ৫:৩৬:৩০ অপরাহ্ন
মো. আব্দুল ওদুদ
সিলেট বিভাগের বিশিষ্ট সমাজসেবী ও শিক্ষানুরাগী দৈনিক সিলেটের ডাকের সাবেক সম্পাদক মহীয়সী নারী বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরী এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বিয়ে হয়েছিল আরো এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের কৃতি সন্তান বাংলার মহসিন উপমহাদেশের অন্যতম দানবীর ড. রাগীব আলীর সঙ্গে। বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরী যতদিন জীবিত ছিলেন ততদিন মানুষের কল্যাণে কাজ করেছেন। সব সময় মানুষের অভাব-অনটন, দুঃখ-কষ্ট লাঘবে কাজ করে গেছেন তিনি। চরম বিপদগ্রস্ত অসহায়-সম্বলহীন গরীব নারী-পুরুষ সব সময় উনার নিকট হতে আর্থিক সাহায্য পেয়েছেন। অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা, বাসস্থান ও দরিদ্র অসহায়দের স্বার্থে সবসময় কাজ করে গেছেন। ব্যাপক সংখ্যক হত-দরিদ্র মেয়েদেরকে বিয়ে দিয়েছেন। বাংলার মহসিন দানবীর ড. রাগীব আলীর প্রায় সব জনহিতকর কর্মের পিছনে সার্বিকভাবে বেশি অবদান রেখেছেন বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরী। সফলতার সাথী ছিলেন তিনি।
বাংলাদেশের সবচেয়ে বিরল ঘটনা হচ্ছে বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরী সব সময় হত-দরিদ্র অসহায় সব ধর্মের মানুষের মাঝে অর্থ বিলিয়ে দিয়েছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ড. রাগীব আলী মহান যুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ছিলেন। বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরী সারাজীবন অসংখ্য স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল, রাস্তাঘাট সহ হত-দরিদ্র মানুষদেরকে বাড়ি ঘর তৈরি করে দিয়েছেন। বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরী ও উনার স্বামী ড. রাগীব আলীর মত সাহায্য সহযোগিতার দৃষ্টান্ত বাংলাদেশে খুবই কম রয়েছে। বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরী কোন অহংকারী ছিলেন না। মানবদরদী বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরী ছিলেন গরীবের মাতা। উনার কাছে যাওয়ার সুযোগ না হলেও দূর থেকে দেখেছি এবং শুনেছি খুবই ভাল ব্যবহারের অধিকারী বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরী। সবসময় নামাজ, রোজা ও কুরআন শরীফ তেলাওয়াত করতেন। তিনি ছিলেন খুবই জনদরদী ও অতিথি পরায়ণ মহিলা। উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত, দরিদ্র এবং হত-দরিদ্র সবাইকে সমান চোখে দেখতেন। দুনিয়াতে যারা কাজে কর্মে ভাল হন, তারা পৃথিবী থেকে বিদায় নেওয়ার পর সর্বশ্রেণির মানুষের হৃদয়ে অমর হয়ে থাকেন। উনারা মানুষের মণিকোঠায় সদা জাগ্রত থাকেন। কিছু মানুষ আছেন যারা পৃথিবী থেকে বিদায় নেওয়ার পরেও উদারতা, সহনশীলতা, সততা, মানবতা ও ভালো কাজ করার কারণে সর্বাবস্থায় তাদেরকে স্মরণ করা হয়। বাংলার মহসিন ড. রাগীব আলীর সহধর্মিনী মহীয়সী নারী বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরী ২০০৬ ইংরেজীর ১২ ডিসেম্বর আমাদের ছেড়ে চলে যান না ফেরার দেশে। দেশের অন্যতম শিল্পপতির স্ত্রী হওয়া সত্ত্বেও তিনি ছিলেন অত্যন্ত সহজ সরল ও অমায়িক চরিত্রের অধিকারী। ড. রাগীব আলী ও বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরী ছিলেন জনবান্ধব মানব দরদী। উনাদের সফল সৎ উদ্যোগ ও কর্মকে ধারাবাহিকভাবে চির অম্লান করে রাখার জন্য বাংলার মহসিন ড. রাগীব আলী প্রতিষ্ঠা করেন রাগীব-রাবেয়া ফাউন্ডেশন। প্রতি বৎসর কোটি কোটি টাকা উক্ত প্রতিষ্ঠান থেকে নিয়মিত মানুষের কল্যাণে দান করে থাকেন। উনারা মসজিদ, মাদ্রাসা, স্কুল, কলেজ, মন্দির ও এতিমখানায় সব সময় বিশেষ অর্থ দান করে থাকেন রাগীব-রাবেয়া ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে। সিলেট বিভাগ ছাড়াও বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দানবীর ড. রাগীব আলী রাগীব-রাবেয়া ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে স্থাপন করেছেন তারা দুজনের নামে। সিলেট সদর ও সিলেট বিভাগের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় রাবেয়া খাতুন চৌধুরী জেনারেল হাসপাতাল, রাবেয়া খাতুন মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র, রাগীব-রাবেয়া ডিগ্রী কলেজ, রাবেয়া খাতুন নার্সিং কলেজ, রাগীব-রাবেয়া হোমিওপ্যাথিক কলেজ ও হাসপাতাল, রাগীব-রাবেয়া হাইস্কুল এন্ড কলেজ হবিগঞ্জ, রাগীব-রাবেয়া হাইস্কুল এন্ড কলেজ লামাকাজি, শাহজালাল রাগীব-রাবেয়া প্রতিবন্ধী ইনস্টিটিউট, রাগীব-রাবেয়া জামে মসজিদ, লিডিং ইউনিভার্সিটি, প্রসিদ্ধ জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল সহ অনেক প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছেন।
মহীয়সী নারী বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরী, বাংলার মহসিন দানবীর ড. রাগীব আলী সাহেবের সকল কাজের মধ্যে সরাসরি সবধরনের সহযোগিতা ও অবদান রেখেছিলেন। দেশ বিভাগের পর পাকিস্তান আমলে পূর্ব পাকিস্তান তথা বর্তমান বাংলাদেশে মাত্র একজন কোটিপতি ছিলেন। বর্তমানে বাংলাদেশে হাজার হাজার কোটিপতি থাকলেও দানশীল ও জনবান্ধব মানুষের সংখ্যা অত্যন্ত কম। অবৈধ অর্থ উপার্জনের মাধ্যমে বিদেশে টাকা পাচার আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ টাকা উপার্জনের প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে বাংলাদেশে। এটাই হচ্ছে বাংলাদেশের বাস্তবতা। বাংলাদেশের এই বাস্তব অবস্থার মধ্যেও, রাগীব-রাবেয়া ফাউন্ডেশন টাকা দানের নজির বিহীন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তা ইতিহাসের খাতায় গৌরব উজ্জ্বলভাবে লেখা থাকবে। পৃথিবীর যেকোন দেশের সুনাগরিক, বেঁচে থাকেন তার কাজের মাধ্যমে। এমতা অবস্থায় মহীয়সী নারী বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরীও বেঁচে আছেন সবার মধ্যে উনার অত্যন্ত সফল কর্মের দ্বারা। আজ বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরীর ১৬তম মৃত্যুবার্ষিকীতে দোয়া করছি পরম করুণাময় আল্লাহ তায়ালা উনাকে যেন বেহেস্ত নছিব করেন।
লেখক : মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও কলামিস্ট।