তিনি কর্মেই বেঁচে আছেন
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১২ ডিসেম্বর ২০২২, ৫:৩৮:৩৫ অপরাহ্ন
জন্মিলে মরিতে হয়। মৃত্যু মানুষের জীবনের অনিবার্য্য পরিণতি। প্রতিটি মানুষকেই পেতে হয় মৃত্যুর স্বাদ। ক্ষণজন্মা কিছু মানুষ মৃত্যুর পরও অমর হয়ে থাকেন। তেমনি একজন ক্ষণজন্মা মানুষ দৈনিক সিলেটের ডাক-এর সাবেক সম্পাদক রাবেয়া খাতুন চৌধুরীর মৃত্যুবার্ষিকী আজ। সিলেটের কোটি মানুষের অত্যন্ত প্রিয় মুখপত্র ঐতিহ্যবাহী দৈনিক সিলেটের ডাক-এর সাবেক সম্পাদক আজ থেকে ১৫ বছর আগে আজকের এই দিনে না ফেরার দেশে চলে যান। দেশের বরেণ্য সমাজসেবী, শিক্ষানুরাগী, সাহিত্যসেবী, শিল্পপতি, মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রবাসী সংগঠক, দৈনিক সিলেটের ডাক-এর সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি, স্বনামখ্যাত আলহাজ্ব ডক্টর রাগীব আলীর সুযোগ্য সহধর্মিনী ক্ষণজন্মা মহীয়সী নারী রাবেয়া খাতুন চৌধুরীর মৃত্যু ব্যথিত করেছে দৈনিক সিলেটের ডাক পরিবারসহ তাঁর গুণমুগ্ধ অগণিত মানুষকে। আজ আমরা গভীর দুঃখ-ভারাক্রান্ত চিত্তে তাঁর স্মৃতিকে স্মরণ করছি। একজন মহীয়সী নারী, গরিব-দুঃখী মেহনতি মানুষের কষ্টে যার প্রাণ কাঁদে, যিনি নারী জাতির উন্নয়ন-জাগরণের জন্য নিরলস শ্রম দিয়েছেন তিনি রাবেয়া খাতুন চৌধুরী। তাঁকে হারানোর কষ্ট প্রতিনিয়ত কুরে কুরে খাচ্ছে আমাদের। আজকের এই না ভুলা কষ্টের দিনে ক্ষণজন্মা নারীর স্মৃতির প্রতি জানাচ্ছি অফুরন্ত শ্রদ্ধা।
এটা চিরন্তন সত্য যে, মানুষ সৃষ্টির সেরা। তবে এই উপাধি তার কাছেই বেশি সার্থকতা পায় যিনি ‘জীবে প্রেম করে যেইজন- সেই জন সেবিছে ঈশ্বর’ এই বাণী বুকে ধারণ করেন। এমন জন্মই তো সফল। আর এমন জন্ম সবার হয় না। কারও কারও হয়। তেমনি একজন রাবেয়া খাতুন চৌধুরী। তিনি তাঁর কর্ম সাধনায় ভক্ত অনুরাগীদের হৃদয়ের গভীরে স্থান করে নিয়েছেন। রাবেয়া খাতুন চৌধুরী মানুষের প্রতি কতোটুকু সমব্যথী ও সহমর্মী ছিলেন, এটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তিনি দৈনিক সিলেটের ডাক-এর সম্পাদক ছাড়াও দেশের প্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় লিডিং ইউনিভার্সিটির কো-চেয়ারম্যান, রাগীব রাবেয়া মেডিকেল কলেজের কো-চেয়ারম্যানসহ আরও অনেক প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন মৃত্যুর আগের দিন পর্যন্তও। শুধু সিলেট নয়, দেশের বিভিন্ন স্থানে তিনি জনহিতকর কাজে অসামান্য অবদান রেখেছেন। সর্বোপরি দানবীর রাগীব আলীর জীবনের যতো সাফল্য, যতো কৃতিত্ব তার পেছনে আছে তাঁর স্ত্রী রাবেয়া খাতুন চৌধুরীর অসামান্য অবদান। বাস্তবতার নিরিখে এমন ধারণা করাটাই স্বাভাবিক যে, এতো বড় যে মানুষটি এতো কৃতিত্ব যার জীবনের পরতে পরতে- তিনি তো শান-শওকত, বিত্ত-বৈভবের মধ্যে আয়েশী চাকচিক্যময় জীবন যাপন করবেন। কিন্তু রাবেয়া খাতুন চৌধুরী ছিলেন ঠিক অন্য ধারার মানুষ। তিনি যেমন ছিলেন অসাধারণ গুণের অধিকারী, তেমনি ছিলেন অতি সাধারণ একজন মানুষও। শ্রমিক, দিনমজুর আর সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের সান্নিধ্যে এসে তিনি হয়ে গেছেন তাদেরই একজন। তাদের দুঃখ কষ্টের অংশীদার হয়েছেন তিনি। বিত্তের মধ্যে বসবাস করেও তাঁর প্রাণ কাঁদতো অহর্নিশ বিত্তহীনদের জন্য। তাঁর কল্পনায় সারাক্ষণ বিরাজ করতো মাটির কথা, মানুষের কথা, দেশের কথা। এর কারণ একটাই- তাঁর উপলব্ধিতে সবসময়ই ছিলো এই মাটির কাছেইতো তাঁকে ফিরে যেতে হবে একদিন। মানব জীবনের সার্থকতা তো এখানেই। মানবসেবায় নিবেদিত একটি কর্মময় জীবন অতিক্রম করে তিনি এই নশ্বর পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন। তিনি আজ ফিরে গেছেন মাটির কাছে। মৃত্যুর হিমশীতল ছায়া ঢেকেছে তাঁর দেহ। কিন্তু তাঁর স্মৃতি তাঁর কর্ম কথা বলছে প্রতিনিয়ত।
আমাদের সামনে রাবেয়া খাতুন চৌধুরীর শারীরিক উপস্থিতি নেই। তিনি চলে গেছেন পৃথিবীর সবার চোখের আড়ালে। দূরে-বহু দূরে; যেখান থেকে আর ফিরবেন না; ফিরে না কেউই কোনোদিন সেখান থেকে। এই জগৎ সংসারের নিয়মটাই বুঝি এমন, যাকে সবার সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন, তিনিই চলে যান সবার আগে। এই কঠিন নিগঢ়ে বন্দী আমরা চিরকাল। এটি ছিন্ন করার সাধ্য নেই কারও। তার পরেও যাঁরা ক্ষণজন্মা, যাঁদের জীবনটাই অন্য দশজনের চেয়ে একটু আলাদা, যাঁদের জীবন কেটেছে মানুষের সেবায়, সমাজের কল্যাণে, যাঁদের কর্ম আমাদের সবার পথের পাথেয়; সেইসব মানুষ মরে গেলেও তাঁদের অশরীরি উপস্থিতি থেকে যায় সর্বক্ষণ আমাদের চারপাশে। মহীয়সী নারী রাবেয়া খাতুন চৌধুরী বেঁচে থাকবেন এভাবেই আমাদের কাছে বছরের পর বছর। তাঁর কর্ম হোক আমাদের আগামী পথ চলার প্রেরণা। আজ মৃত্যুবার্ষিকীতে মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে মরহুমার রুহের মাগফেরাত কামনা করছি।