মানুষের তরে
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১২ ডিসেম্বর ২০২২, ৫:৫৪:৪৪ অপরাহ্ন
এডভোকেট মো. আমান উদ্দিন
‘মানুষ বাঁচে তার কর্মের মধ্যে, বয়সের মধ্যে নহে’। কেউ বাঁচে ১০০ বৎসর কিন্তু কর্মের হিসাব করলে দেখা যায় ১০ বৎসরও নয়। কেহ হাজার কোটি টাকা সঞ্চয় করে বিভিন্ন স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি উত্তারাধীকারীদের জন্য রেখে গেল। কিন্তু উত্তারাধীকারীগন ভোগ বিলাসে মশগুল। সম্পত্তির মূল মালিককে স্মরণ ও তাদেরই নামে একটা কিছু করি সে চিন্তা তাদের মধ্যে জাগ্রত হবে না। কেননা যার আছে ভুরি ভুরি, রাজার কোষাগার থেকে সকল সম্পত্তি সে-ই করবে চুরি। সুতরাং হাজার কোটি বা উত্তরাধীকারীরা পরকালে কোন কাজে আসবে না। বরঞ্চ এ সব সম্পদ সাপ বিচ্ছু হয়ে পরকালে যন্ত্রণার উপসর্গ হয়ে যেতে পারে।
বাপ দাদা সকলেরই আছে, থাকবে। তাদেরও তো বাপ দাদা ছিল। কেহ বাঁচে নাই। বাঁচবেও না। শুধু বাঁচবে তার রেখে যাওয়া চিন্তা ও চেতনা। কর্মই ধর্ম। যদি ভাল কিছু জীবদ্দশায় জনস্বার্থে করে যান। নিজের অর্জিত সম্পদ থেকে। সেই সম্পদই পরকালে হাদিয়া হয়ে পরম সৃষ্টি কর্তার দয়ালাভ করতে পারেন। যা-কিছুই করেন না কেন, যদি সম্পদ থাকে, তাহলে জীবদ্দশায় রাবেয়া খাতুন চৌধুরী ও তার জীবন সঙ্গী দানবীর রাগীব আলী এর দেখানো পথে সম্পদশালী ব্যক্তি তার নিজের এলাকা তথা যেকোন স্থানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, দাতব্য প্রতিষ্ঠান বা চ্যারিটেবল ফান্ডগঠন করে মানবকল্যাণে নিজের অর্জিত সম্পদ কে স্থায়ীভাবে প্রাতিষ্ঠানিক রুপ দিয়ে যান। হউক নিজের অথবা এলাকার নামে। জাগতিক জগত ত্যাগ করলে ও অনন্ত কাল মহিয়সী নারী রাবেয়া খাতুন চৌধরীর নামটি ভালবাসার স্পন্দন হিসাবে তার কর্মময় জীবনকে শ্রদ্ধাভাবে স্মরণ করবে অনন্ত কাল। মরহুমা রাবেয়া খাতুন চৌধরী মরেও তো অমরত্ব লাভ করে গেছেন। রাবেয়া খাতুন চৌধরী ও রাগীব আলী এর সৃষ্টিশীল চিন্তা জাতির সামনে তুলে ধরা সময়ের দাবী। যেমন- রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, লিডিং ইউনিভার্সিটি, রাগীব-রাবেয়া স্কুল এন্ড কলেজ সহ অনেক প্রতিষ্ঠান করেছেন নিজ উদ্যেগে। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে উপকৃত হচ্ছেন দেশের আপামর জনগণ। এসব প্রতিষ্ঠান এর মাধ্যমে হাজার ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক, আইনজীবী তথা বিভিন্ন পেশায় এসব ছাত্ররা নিয়োগ পেয়ে দেশগড়ার কাজে অগ্রণী ভূমিকা পালন করিতেছেন। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এসব শিক্ষার্থীরা তাদের নিজেদের পরিবার তথা মানসম্মত সমাজ গড়ার কাজে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। এর ক্ষেত্র তৈরী করেছেন মরহুমা রাবেয়া চৌধরী আর তার সহযোদ্ধা জীবন সঙ্গী রাগিব আলী।
যুগেযুগে এসব ক্ষনজন্মা মানুষদের সৃষ্টি হয়ে সমাজ বিনির্মাণে আলোকিত জীবন গড়ার প্রেরণা হউক সকলের অঙ্গীকার। রাগীব-রাবেয়া হাসপাতালের কর্মতৎপরতা দেখে আমি অভিভূত। জনগণ সরিবদ্ধভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে টিকেট কিনছে। জিজ্ঞাসা করলাম টিকেটের দাম কত? মাত্র ৩০ টাকা। এই টাকা দিয়ে প্রফেসর সাহেবের সাথে করে আমার সমস্যার কথা বলব। প্রফেসর সাহেব ট্রিটম্যান্ট দিবেন। এসব চিকিৎসা নিয়ে থাকেন দৈনিক শত শত রোগী। মানুষ সন্তুষ্ট হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে এবং যখন ঐ ব্যক্তি সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবন যাপন করবে। তখন ঐ ব্যক্তি মুখ খুলে দোয়া না করলে ও তার অন্তরআত্মা আরাম পেয়ে ন্যাচারেলি দোয়ার তালিকায় লিপিবদ্ধ হবেন ঐ দম্পত্তি। আর ক্ষেত্র তৈরী করে গেছেন মরহুমা রাবেয়া চৌধরী এবং রাগীব আলী। জনসংখ্যার চাপে হয়ত এসব আধুনিক চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হতেন সাধারণ জনগন।সিলেট ওসমানী ম্যাডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের এসব চিকিৎসা হয়ত সম্ভব হত না। কারণ ওসমানী হাসপাতাল চাইলেও তো এতসব লোকজনকে সামাল দেওয়া কষ্ট সাধ্য। যেনে রাখা ভাল, সকাল ১০ঘটিকায় মৃত্যু হলে জানাযা দাফন এসব কার্যাদি সম্পাদন শেষে বিকালে সমাহিত করা হবে। গরিব ধনী সকলের জন্য আল্লাহর সৃষ্টি জগতে অন্য সকলের ন্যায় একই মাটিতে সমাহিত করা হবে। ধর্মীয় কার্যাদি সম্পাদন করতে যেমন গরিব ধনী পৃথক করার সুযোগ নেই। তদ্রুপ মৃত ব্যক্তি মৃত্যুবরনের সাথে সাথে অন্য দশজনের ন্যায় ধর্মীয় কার্যাদি সম্পদন করে দাফন কার্য শেষে সকলেরই নিজ নিজ গন্তব্যে চলে যাবে। সাথে থাকবে শুধু আমল নাম। সুতরাং সময় থাকতে আলিশান জীবন ত্যাগ করে স্মরনীয় বরনীয় হয়ে থাকতে চাইলে মরহুমা রাবেয়া খাতুন চৌধুরী, রাগীব আলী, হাফিজ মজুমদার, হাফছা মজুমদার, মরহুম ড. সৈয়দ মকবুল হোসেন, মরহুম সৈয়দ নবীব আলী, মৃত মুরারী চাঁদ, মৃত রাজা জি.সি দেব, মৃত প্রমথনাত দাস, মৃত মদন মোহন, হরগোবিন্দ প্রমুখ ব্যক্তিদের তালিকাভুক্ত হউন জীবদ্ধশায়। আপেক্ষা করবেন হয়ত ছেলে মেয়েরা আপনার নামে একটা কিছু করবে। সেটা কিন্তু ভূলে যান। তখন সে চিন্তা করবে নিজে বাঁচলে বাপের নাম। ৩০০/৪০০ কোটি টাকা দিয়ে স্থাপনা নির্মাণ করে গেলেন। তখন এই স্থাপনার জন্য সরকার বিভিন্ন সময়ে ট্রাক্স ধার্য্য করবে। হয়ত একদিন আপনার মত সামর্থ্য উত্তারাধীকারীগণের নাও থাকতে পারে। তখন কথায় কথায় গালি দিবে। সময় থাকতে বিলাসী জীবন ত্যাগ করে, আর্থ মানবতার সেবায় অর্জিত সম্পদ বিনিয়োগ করুন। কথায় আছে সকাল বেলার বাদশারে তুই, ফকির সন্ধ্যাবেলা’। ‘নদীর এপার ভাংগে, অপার গড়ে এই তো নদীর খেলা’।
সুতরাং সময় থাকতে ধনাঢ্য ব্যক্তিদের বলব, মরহুমা রাবেয়া খাতুন চৌধুরী ও রাগীব আলী সাহেবের দেখানো পথে ধনাঢ্য ব্যক্তিরা বিনিয়োগ করুন। সময় চলে গেলে আফসোস করে বলবেন যে ভুলে তোমারে ভুলে হীরা ফেলা কাঁচ তুলে, ভিখারী সেজেছি আমি, আমায় সে ভুল প্রভু ভেঙ্গে দাও“। তখন আফসোস করে কোন লাভ হবে না। পরিশেষে বলতে চাই, রাবেয়া খাতুন চৌধুরী এবং রাগীব আলী সাহেবের জীবন ধন্য। আপনাদের সৃষ্টিশীল চিন্তা চেতনা জাতি কখন ও ভূলবে না। ভুলার কথাও নহে। মানুষের হ্নদয়ে স্থান করে নিয়েছেন মরহুমা রাবেয়া খাতুন চৌধুরী। আমি তাহার আত্মার মাগফেরাত কামনা করি এবং রাগীব আলী সাহেবের সুস্বাস্থ্য ও দীঘায়ূ কামনা করি।
লেখক : সভাপতি, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) বিয়ানীবাজার, সিলেট।