দেশপ্রেমিক রাবেয়া
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১২ ডিসেম্বর ২০২২, ৬:০২:২০ অপরাহ্ন

নজরুল ইসলাম বাসন
বাংলাদেশে রাগীব আলী এমন একজন ব্যক্তিত্ব, তার নামের আগে কোন বিশেষণের প্রয়োজন নেই। তার সাথে আমার অগ্রজ অনুজ সম্পর্ক। আমাকে ছোট ভাইয়ের মত স্নেহ করতেন তার সহধর্মীনি রাবেয়া চৌধুরী। আমি তাকে আপা ডাকতাম। লন্ডন থেকে সিলেট গেলে তাদের বাংলোতে বেড়াতে গেলে কোনদিন না খাইয়ে দেননি। তিনি আজ নেই কিন্তু রেখে গেছেন তার কর্মের স্বাক্ষর। স্বামীর প্রতিটি পদক্ষেপে তিনি ছিলেন জড়িত। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত তথ্য থেকে আপা সম্পর্কে সংক্ষিপ্তভাবে যা জেনেছি, তা নীচে তুলে ধরলাম।
মহীয়সী নারী বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরী আম্বরখানার রায়হুসেন পাক্কাবাড়িতে ১৯৪৬ সনের ৫ এপ্রিল জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ইরফান আলী চৌধুরী এবং মাতা নাঈমা বানু চৌধুরী। দুই ভাই ও ছয় বোনের মধ্যে তিনি পঞ্চম। বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরী সিলেট সরকারি মহিলা কলেজে লেখাপড়া করেন। কলেজ জীবনে তিনি নারী আন্দোলন ও শিক্ষা-দীক্ষায় পিছিয়ে পড়া মুসলিম জনগোষ্ঠীর মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে কাজ করেন। ১৯৬৩ সালে তিনি যখন আইএ পরীক্ষার্থী. তখন সিলেট জেলার রাগীবনগর নিবাসী সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের আলহাজ্ব রাশিদ আলী সাহেবের পুত্র ড. রাগীব আলীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরী বিয়ের পর স্বামীর সাথে লন্ডনে চলে যান। লন্ডনে স্বামীর সংসার সুচারুভাবে চালিয়েও তিনি ড. রাগীব আলীর কঠোর শ্রম ও মেধায় প্রতিষ্ঠিত ‘তাজমহল’ নামক রেস্টুরেন্টের দেখাশোনা করতেন। তাঁর নিরলস পরিশ্রমে এটি একটি ব্যবসা সফল প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। ড. রাগীব আলীর অন্যান্য ব্যবসাসহ প্রতিটি কাজে তাঁর অনুপ্রেরণা ও অবদান ছিল অনস্বীকার্য। মহীয়সী নারী বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরী চিন্তা ও চেতনায় একজন খাঁটি দেশপ্রেমিক ছিলেন। তাই তিনি স্বামীকে নিয়ে দেশের মাটিতে এসে মানুষের সেবা করতে ব্রত হন। মেহনতি মানুষের জন্য তাঁর হাত ছিল সর্বদা প্রসারিত। তিনি বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত ছিলেন।
বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরী দানবীর ড. রাগীব আলী প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সহপ্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। তিনি দীর্ঘদিন বহুল প্রচারিত স্বনামধন্য পত্রিকা ‘দৈনিক সিলেটের ডাক’ এর সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। নিজ হাতে গড়া স্বপ্নে লালিত মালনীছড়া চা-বাগান তাঁর অত্যন্ত প্রিয় ছিল। তিনি চা-পাতা চয়নকারী শ্রমিকদের সুখ-দুঃখের কথা শুনতেন এবং তাদের সমস্যা তাৎক্ষণিক সমাধান করতেন। ক্ষণজন্মা এই মহীয়সী নারী ২০০৬ সালের ১২ ডিসেম্বর মালনীছড়া চা বাগানের কোম্পানী বাংলোতে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তিনি স্বামী, দু’সন্তান আবদুল হাই ও রেজিনা কাদিরকে রেখে গেছেন।
লেখক : প্রবাসী লেখক ও সংগঠক।