আসছেনা অতিথিরা
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ ডিসেম্বর ২০২২, ৭:৪৯:১৮ অপরাহ্ন
আসছেনা এবার অতিথি পাখিরা। ভরা মওসুমেও অতিথি পাখিদের দেখা নেই সিলেটের বিভিন্ন হাওরে। প্রতি বছর শীতের শুরুতেই দেশের সর্ববৃহৎ হাওর হাকালুকিসহ বিভিন্ন বিল অতিথি পাখির কলকাকলীতে মুখরিত হয়ে উঠতো কিন্তু এবার ঘটেছে এর ব্যতিক্রম। পাখি শিকারীদের অপতৎপরতায় দেখা নেই অতিথি পাখিদের। বিষটোপ ও ফাঁদ পেতে অবাধে পাখী শিকার এবং ইঞ্জিন নৌকার অবাধ চলাচলে সৃষ্ট মারাত্মক শব্দদূষণের কারণে অতিথি পাখিরা হাওরে আসছেনা। অথচ প্রতি বছর মধ্য অক্টোবর থেকেই বিশ্বের শীত প্রধান দেশগুলো থেকে নানা প্রজাতির বিপুল সংখ্যক পাখি আসতে শুরু করে সিলেটের হাওর অঞ্চলে।
এই সুন্দর পৃথিবীতে পাখি হচ্ছে আল্লাহর অপূর্ব একটি সৃষ্টি। পাখি সুন্দরের প্রতীক। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় পাখির ভূমিকা অনন্য। আর পাখির গানে ঘুম ভাঙ্গা এবং পাখির গানে ঘুমিয়ে পড়ার একটা কথা প্রচলিত রয়েছে আমাদের সমাজে। আমাদের সাহিত্য সংস্কৃতি অনেকটা জুড়েই রয়েছে নানা বর্ণ-নানা জাতের পাখির উপস্থিতি। বিজ্ঞানীদের মতে, পৃথিবীতে প্রায় দশ হাজার প্রজাতির পাখি রয়েছে। এর মধ্যে বিশাল অংশই পরিযায়ী পাখি। এই পাখিরা নিজের দেশে বছরের মাত্র কিছু সময় অবস্থান করে। বাকি সময়টা তারা অন্য দেশে কাটায়। এর কারণ হচ্ছে-নিজ দেশের ভৌগোলিক অবস্থা, আবহাওয়া তথা পরিবেশের সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিতে না পারা। বিশেষ করে প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে পাখিদের এক দেশ থেকে অন্য দেশে পরিগমন চলতে থাকে সারা বছরই। যেমন-উত্তর গোলার্ধে যখন শীতকাল, দক্ষিণ গোলার্ধে তখন গ্রীষ্মকাল। বাংলাদেশ বা দক্ষিণ এশিয়ার অবস্থান উত্তর গোলার্ধে হলেও এর বেশির ভাগ অঞ্চলে শীতকালে তুষারপাত হয় না। তাই ইউরোপ, মধ্য এশিয়া, সাইবেরিয়া ও চীন থেকে বিপুল প্রজাতির পাখি বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়। পশ্চিমের আরব, আফ্রিকা এবং দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলের দ্বীপপুঞ্জ থেকেও ঋতু পরিবর্তনের নানা সময়ে পাখিরা এখানে আসে। জানা গেছে, সুদূর অতীত থেকে বাংলার সমতল ও সুন্দরবনকে লক্ষ করে প্রায় আটটি পথে আসে এই পাখিরা। বিশেষজ্ঞদের মতে-যখন পাখিরা আসে তখন জলাভূমিতে মাছ ধরা পড়ে। বোরো ধান চাষেরও মৌসুম থাকে। ওই এলাকায় তখন মানুষের আনাগোনা বেড়ে যায়। পাখিরা যদি বুঝে নেয় তাদের আবাসস্থলটি নিরাপদ নয়, তবে পরবর্তী বছরে ওই জায়গাটিতে তারা আর আসতে চায় না। এ ছাড়া পরিযায়ি পাখি যখন যেখানেই আসুক সেখানকার প্রজনন, খাবার ও পরিবেশ এমন সার্বিক অবস্থার ওপরই নির্ভর করে। অনিরাপদ আবাসস্থল আর খাদ্য সংকট মূলত এ দু’টি বিষয় পাখি কমবেশি হওয়ার অন্যতম কারণ।
অতিথি পাখিদের নিরাপত্তা সবচেয়ে জরুরি। এজন্য প্রথমে হাওরাঞ্চলের জীববৈচিত্র্য রক্ষা করতে হবে। নির্বচারে হাওরের মাছ, উদ্ভিদ, জলজপ্রাণি ও জলজ গাছ ধংস করা যাবে না। সর্বোপরি পাখি নিধন বা পাখি শিকার বন্ধ করতে হবে। বাংলাদেশে পাখি শিকার বন্ধে রয়েছে আইন। সেটা খুব একটা কার্যকর নেই। সিলেটের হাওর বিল জলাশয়ে আগের মতো পরিযায়ি পাখিরা আসেনা। কারণ পাখিরা দিনে দিনে বাংলাদেশকে তাদের জন্য ‘অনিরাপদ’ বলেই মনে করছে। দেশি-বিদেশি সব ধরনের পাখি নিধন বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। তা-না হলে কেবল অতিথি নয়, একদিন দেশিয় নানা বর্ণের পাখিগুলো নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।