জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজে স্মরণসভা
শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নে রাগীব রাবেয়া দম্পতির অবদান কখনো মুছে ফেলা যাবে না
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ ডিসেম্বর ২০২২, ৫:৩৯:২৬ অপরাহ্ন
মৃত্যুর পর এই অঞ্চলেরই মানুষ সকল সুবিধা ভোগ করবে: দানবীর ড. রাগীব আলী
স্টাফ রিপোর্টার : শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নে রাগীব-রাবেয়া দম্পতির নাম ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে বলে মন্তব্য করেছেন বিশিষ্টজনেরা। তারা বলেছেন, এই দম্পতির অনবদ্য অবদান কখনো মুছে ফেলা যাবে না। সিলেট অঞ্চলের মানুষ যুগের পর যুগ তাদের মনে রাখবে।
গতকাল মঙ্গলবার সকালে সিলেটের প্রথম বেসরকারি মেডিকেল কলেজ জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে আয়োজিত স্মরণসভায় বক্তারা এসব মন্তব্য করেন। জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সহ প্রতিষ্ঠাতা মহীয়সী নারী বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরীর ১৬ তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে কলেজের লেকচার গ্যালারিতে এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা ও গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান দানবীর ড. রাগীব আলী প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, এ মেডিকেল কলেজটিকে ঘিরে রয়েছে তাঁর অনেক স্বপ্ন। জীবদ্দশায় তিনি এই কলেজটিকে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করে যেতে চান। তিনি বলেন, মেডিকেল কলেজটিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরে নিন্দুকেরা বার বার বাধা হয়ে দাঁড়ায়। ড. রাগীব আলী আক্ষেপ করে বলেন, যদি বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত না করে মৃত্যু হয়, তাহলে তাকে এই একটি মাত্র অপ্রাপ্তির আক্ষেপ নিয়েই চলে যেতে হবে।
শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে গুরুত্ব দেয়া প্রসঙ্গে অসংখ্য শিক্ষা ও সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান দানবীর ড. রাগীব আলী বলেন, যেসব শিক্ষা ও স্বাস্থ্যধর্মী প্রতিষ্ঠান মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে, এর কোনটিই আমার সঙ্গে যাবে না। আমার মৃত্যুর পর এই অঞ্চলের মানুষ, আগামী প্রজন্ম এর সুবিধা নেবে। আমি শুধু সামনে দাঁড়িয়ে পথ দেখিয়ে দিয়েছি। মৃত্যুর পর সকলের দোয়া পেলেই আমি শান্তি পাব।
জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোঃ আবেদ হোসেনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় দানবীর ড. রাগীব আলী আরো বলেন, একজন রাবেয়া খাতুন চৌধুরী ছিলেন বলেই আজকের অবস্থানে আসা সম্ভব হয়েছে। এই মেডিকেল কলেজের প্রতিটি ধুলিকণায় মিশে আছে রাবেয়ার স্মৃতি। সে শুধু জীবন সঙ্গীই ছিলো না, রাবেয়া ছিলেন এগিয়ে নেয়ার অনুপ্রেরণাদাত্রী। রাবেয়া নিজে ছিলো-মানবসেবার ব্রতে নিয়োজিত। আমাকেও দিয়েছিলো উৎসাহ। একটি মার্জিত রুচিবোধের জীবন বলতে যা বোঝায়-সবছিলো তার মধ্যে।
শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে দানবীর ড. রাগীব আলী বলেন, পড়াশোনার মান যতটা ধরে রাখা যাবে, কিংবা আরো উন্নতির দিকে নিয়ে যাওয়া যাবে-বেগম রাবেয়ার আত্মা ততটা শান্তি পাবে। তাই, এ প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনার মান বৃদ্ধিতে জোর দিতে হবে।
আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক এ. কে. এম. দাউদ, হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ মোঃ তারেক আজাদ, রাগীব-রাবেয়া ফাউন্ডেশনের ট্রেজারার ও জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজের গভর্নিং বডির সদস্য আব্দুল হাই, জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজের গভর্নিং বডির সদস্য সাদিকা জান্নাত চৌধুরী।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন-জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজের চর্ম ও যৌন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা: শামীমা আখতার। বক্তব্য রাখেন-জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডাঃ আরমান আহমদ শিপলু, জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ডাঃ সাদিয়া মালিক চৌধুরী, রাবেয়া খাতুন চৌধুরী নার্সিং কলেজের অধ্যক্ষ ডাঃ আয়েশা বেগম, ফিজিক্যাল মেডিসিন এর সহকারী রেজিস্ট্রার ডাঃ ফজলুল হক সোহেল, কলেজের ২৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন আব্দুল মোতালিব শান্ত। পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন-২৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আরাফ আব্দুল্লাহ। সমগ্র অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ২৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আব্দুর রাজ্জাক আল মাসুম ও নিশাত আনজুম। মোনাজাত পরিচালনা করেন জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ মসজিদের পেশ ইমাম এ বিএম লুৎফুর রহমান।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক এ. কে. এম. দাউদ বলেন, বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরী ছিলেন এ প্রতিষ্ঠানের প্রাণ ভোমরা। ধ্যানে জ্ঞানে তিনি রাখতেন এই মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালকে। মানবসেবায় ব্রতী এই মহীয়সী নারীর মতো ক’জন এমন চিন্তা লালন করতে পারেন। যতদিন এই মেডিকেল কলেজ থাকবে; ততদিন বেগম রাবেয়া বেঁচে থাকবেন অমর হয়ে।
জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ মোঃ তারেক আজাদ বলেন, বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরী ছিলেন একজন মাতৃসম অনন্যা নারী। মায়ের মতো ভালোবাসতেন এই মেডিকেল কলেজের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মচারী তথা রোগীদের। এখানকার প্রতিটি ধুলিকণায় মিশে আছে তাঁর অমলিন স্মৃতি। আমাদের বেগম রাবেয়ার মতো মানবিক হতে হবে।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হন রাগীব-রাবেয়া ফাউন্ডেশনের ট্রেজারার ও জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজের গভর্নিংবডির সদস্য মরহুম বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরীর একমাত্র তনয় আব্দুল হাই। তিনি বলেন, আমার মা ছিলেন একজন মহীয়সী নারী। আমাদের ভাই বোনের মতো অসহায় দুস্থদেরকেও ভালোবাসতেন। বাগানের শ্রমিকরা মায়ের ভালোবাসায় ছিলো মুগ্ধ। কখনো নিজেকে মালিক ভাবেননি। যার জন্য মায়ের মৃত্যুর পর আজ অবধি সমাজেন বিভিন্ন শ্রেণিপেশার লোকজন তাকে স্মরণ করছে। তিনি তার মায়ের জন্য সবার কাছে দোয়া কামনা করেন।
জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজের গভর্নিং বডির সদস্য সাদিকা জান্নাত চৌধুরী বলেন, বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরীকে তার দেখার সৌভাগ্য হয়নি, তবে এই পরিবারের সদস্য হয়ে আসার পর থেকে দেখছি প্রতিনিয়ত তার শূন্যতা অনুভব করেন দানবীর ড. রাগীব আলী। একজন স্ত্রী কতটা অনুপ্রেরণাদাত্রী ছিলেন, তা দানবীর ড রাগীব আলীর কর্মযজ্ঞ দেখলেই বোঝা যায়। তিনি বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরীর রুহের মাগফেরাত কামনায় সকলের কাছে দোয়া কামনা করেন।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যক্ষ ডাঃ আবেদ হোসেন বলেন, একজন স্বামী তার স্ত্রীর সার্বিক সহযোগিতা পেলে কতবড় মানবসম্পদ হতে পারেন দানবীর ড. রাগীব আলী তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ। মানুষ চিরদিন বাঁচে না, কিন্তু তার কর্ম তাকে চিরজীবন বাঁচিয়ে রাখে মানুষের মনে। তেমনই একজন মহীয়সী নারী বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরী। এই মেডিকেল কলেজ যত দিন থাকবে; ততদিন উচ্চারিত হবে বেগম রাবেয়ার নাম।
অনুষ্ঠানে বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরী স্মৃতি স্মারক ‘তুমি আলোর শতদল’ এর মোড়ক উন্মোচন করা হয়।