সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে ছমিক উদ্দিন
জিসি দেবের বাড়িতে ২৩ পরিবার বাস করলেও কেবল একজনকে নিয়ে অপপ্রচারের অভিযোগ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ ডিসেম্বর ২০২২, ৬:৫৩:২৪ অপরাহ্ন

স্টাফ রিপোর্টার : বিয়ানীবাজার উপজেলার শহীদ বুদ্ধিজীবী ড. জিসি দেবের ২৪৭ শতক ভূমিতে হিন্দু-মুসলিম মিলে ২৩টি পরিবার ভূমি অধিগ্রহণ করে দীর্ঘদিন থেকে বসবাস করে আসছে। গতকাল মঙ্গলবার সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে বিয়ানীবাজার উপজেলার লাউতা গ্রামের বাসিন্দা মো. ছমিক উদ্দিন এই তথ্য জানিয়ে বলেন, কিন্তু, এ ব্যাপারে কেবল তার বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণা চালানো হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, এই মহান ব্যক্তির ভূমির কোন অংশ দখলে থাকলে সেটি স্বেচ্ছায় ছেড়ে দেয়া হবে। ড. জিসি দেবের ভূমির অংশ কে বা কারা দখল করেছে-সেটি সরেজমিন তদন্ত করে বের করারও দাবি তার।
লিখিত বক্তব্যে ছমিক উদ্দিন বলেন, ১৯৬৫ সালের ৩ ডিসেম্বর ১১৯৯ নং গেজেটে ১/১৯৬৯ নং অর্ডিন্যান্স মতে নন্দিরফল মৌজার বিভিন্ন দাগে ২৪৭ শতক ভূমি এনিমি প্রপার্টি হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়। পরবর্তীতে ২০১২ সালে বাংলাদেশ সরকার নতুন গেজেটে এসএ মালিকদের নাম তালিকাভুক্ত করে। এতে গেজেটে এসএ মালিকরা হলেন, পুলিশ চন্দ্র দেব, রাজেন্দ্র ভট্টাচার্য্য, বিহারী চরণ পাল এবং ঠাকুরধন পাল। পরবর্তীতে ভিপি কেস নং ৭/৭১-৭২ এর মাধ্যমে বন্দোবস্ত গ্রহিতা হলেন কটাই মিয়ার পুত্র জমসেদ আলী। তার নামে এসএ দাগ ৮৮, ৮৯, ৯০ ও ৯১ নং দাগে মোট ২৪৭ শতক ভূমি বন্দোবস্ত ছিল। জমসেদ আলী লিজ নবায়ন না করায় পরবর্তীতে এই ভূমি অন্যান্য ব্যক্তির নামে বন্দোবস্ত দেয়া হয়। যারা ১৯৬৬ সাল থেকে এই ভূমি ভোগদখল করে আসছেন। বন্দোবস্ত পাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে সুধাংশু চন্দ্র চন্দের নামে ৯১ নং দাগে লিজ ছিল ৭৪ শতক ভূমি। পরবর্তীতে কর্তন করে এটি করা হয় ৫৭ শতক এবং বর্তমানে সরেজমিন রয়েছে ৪৪ শতক। তার মৃত্যুর পর এই ভূমিতে বর্তমানে বসবাস করছেন তার ভাই গৌরাঙ্গ চন্দ্র চন্দ গং।
অনুরূপভাবে এই দাগে আরেক গ্রহিতা আতাই মিয়ার নামে ৩০ শতক ভূমি বন্দোবস্ত দেয়া হয়। ৯০ নং দাগে সদয় চন্দ্র দেবের নামে ৩০ শতক ভূমি বন্দোবস্ত দেয়া হয়। সদয় দেবের মৃত্যুর পর এই ভূমির লিজ গ্রহণ করেন মকুল লাল দেব। বর্তমানে মকুল দেবের ছেলে মহিত লাল ও বলাই লাল এ ভূমিতে বসবাস করছেন। ৯০নং দাগে আরো তিন লিজ গ্রহিতা হলেন-পরেশ মালাকার ৪২ শতক, নরেশ মালাকার ৪২ শতক এবং হরিপদ মালাকার ৪৩ শতক। পরেশ মালাকারের ভূমিতে বর্তমানে তার ছেলে প্রণয় মালাকার ও পরিমল মালাকার বসবাস করছেন। আর নরেশ মালাকারের মৃত্যুর পর তার ছেলে অপন মালাকার ও অপু মালাকার ৩৮ শতক ভূমি বন্দোবস্ত নেন। এছাড়া হরিপদ মালাকারের মৃত্যুর পর তার স্ত্রী কৃষ্ণা মালাকার ৮ শতক ভূমির লিজ গ্রহণ করেন। বর্তমানে তার ছেলে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক রিপন মালাকার বসবাস করছেন।
সংবাদ সম্মেলনে ছমিক উদ্দিন বলেন, ১৯৯৭ সালে তিনি ৮৮ নং দাগে ১৩ শতক, ৮৯ নং দাগে ৩৩ শতক এবং ৯০ নং দাগে ৩৫ শতক ভূমি তিনি সরকারের নিকট থেকে বন্দোবস্ত আনেন। এই তিন দাগে মোট ৮১ শতক ভূমিতে তিনি পুকুর ও বসতভিটা নির্মাণ করে বসবাস করে আসছেন। ২০০৪ সালে তিনি সর্বশেষ এই ভূমি নবায়ন করেছেন এবং গত ২৪ অক্টোবর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে পুনরায় নবায়নের জন্য আবেদন করেছেন। এটি এখনো প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উল্লেখ করা হয়, আতাই মিয়ার লিজকৃত ভূমিতে তিনিসহ তার ভাই আজন মিয়া ও ভাগ্নে মোস্তফা উদ্দিন বসবাস করছেন। অন্যদিকে পরেশ মালাকারের ভূমিতে তিনিসহ আলতাফ হোসেন ও জনি আহমদ নামে আরো দুজন বসবাস করছেন। এছাড়া অপন ও অপু মালাকারের লিজকৃত ভূমিতে তারাসহ বিকাশ চন্দ্র দেব ও বিপ্লব দেব বর্তমানে বসবাস করছেন।
ছমিক উদ্দিন বলেন, ৮৮ নং দাগে তার ১৩ শতক ভূমির মধ্যে ৫ শতক ভূমি তার অগোচরে মখদ্দছ আলীর নামে বিএস ৯৪ নং খতিয়ানে রেকর্ড হয়। মখদ্দছ কিভাবে রেকর্ডপ্রাপ্ত হলেন-এটি তার বোধগম্য নয় বলে দাবি করেন ছমিক উদ্দিন। ৫ শতক ভূমিতে আলা উদ্দিন গং তিন ভাই বর্তমানে বসবাস করছেন।
সংবাদ সম্মেলনে ছমিক উদ্দিন দাবি করেন প্রতি বছর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে একটি চক্র তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে বিভ্রান্তির সংবাদ প্রচার করে। ফলে তিনি এবং তার পরিবারের চরম মানহানি ঘটে। এই চক্র অসৎ উদ্দেশ্যে অপপ্রচার চালায় বলেও দাবি করেন তিনি।
তিনি বলেন, দেশের গুণীজন শহীদ বুদ্ধিজীবী ড. জিসি দেব ও তাঁর ৬ ভাই এবং রাজকুমার ভট্টাচার্য্য ও রাজ চন্দ্র ভট্টাচার্য্য নামে দুই ব্যক্তি এই ভূমির এসএ মালিক। কিন্তু, ১৯৬৫ সালে সরকার এটি বন্দোবস্ত দিয়ে দেয়। এই ২৪৭ শতক ভূমিতে হিন্দু-মুসলিম ২৩টি পরিবার বসবাস করে আসলেও বারবার তাকেই অভিযুক্ত করা হয় বলে জানান ছমিক উদ্দিন। তার বন্দোবস্ত ভূমিতে ড. জিসি দেবের মালিকানা থাকলে তিনি স্বেচ্ছায় এই ভূমি ছেড়ে দেবেন বলে জানান। সেই সাথে সরেজমিন তদন্ত সাপেক্ষে ড. জিসি দেবের ভূমি কারা দখল করেছে-সেটি বের করার জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান।