কাণ্ডারী হুশিয়ার
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ ডিসেম্বর ২০২২, ৮:০১:০২ অপরাহ্ন

ব্রজেন্দ্র কুমার দাস
পহেলা ডিসেম্বর ২০২২ তারিখের দৈনিক জনকন্ঠ পত্রিকায় বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তিবিদ অধ্যাপক ড. সাজ্জাদ হোসেন ‘অপ্রতিরোধ্য- অদম্য বাংলাদেশ’ শিরোনামে একটি নিবন্ধ লিখেন। এতে তিনি লিখেন, ‘২০০৮ সালে ফের ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ সরকার। এখন টানা তৃতীয় বারের মতো ক্ষমতায় রয়েছে দলটি। বিগত প্রায় ১৪ বছরে দেশের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে অভূতপূর্ব পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু একটি স্বাধীন দেশ উপহার দিয়েছেন। তাঁর কন্যা শেখ হাসিনা সেই দেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত করার কাজটি করেছেন দক্ষ হাতে।’ উপরোক্ত বিষয়ে ড. সাজ্জাদ হোসেন সাহেবের সাথে দ্বিমত পোষণ করা বোধ হয় অনেকের পক্ষেই সম্ভব নয়। কারণ এই উন্নয়নগুলো দিবালোকের মতো দৃশ্যমান। অবশ্য রাজনৈতিক কৌশলের কারণে অনেক রাজনৈতিক দল এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ এই সব উন্নয়নকে স্বীকার করতে রাজি নন। অবশ্য এই সব উন্নয়নের সুযোগ সুবিধাগুলো তারা ঠিকই ভোগ করছেন।
এসবই সত্য, এতে করে আ’লীগ, আ’লীগ সরকার, সব কথার শেষ কথা হলো জননেত্রী, বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাবমূর্তি শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা বিশ্বেই উজ্জ্বল হয়েছে। এতে কোনই সন্দেহ নেই। এখন প্রশ্ন হলো, বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা তথা বাংলাদেশের যে ভাবমূর্তি সারা বিশ্ববাসী দেখছে এই ভাবমূর্তিতে কালিমা লেপন করলে সেটা কি এই দেশের কোন মানুষ সহ্য করতে পারেন? যারা এসব কুকর্ম করে বেড়াচ্ছেন এবং যারা এর প্রতিবাদ করছেন না তারা কি আসলে দেশের মিত্র হতে পারেন? পারেন না। কিন্তু এমন কুকাজ অনেকেই করে যাচ্ছেন। এর কটার বিচার হচ্ছে জনগণ তা জানে না। এরই মধ্যে দেশবাসী জানতে পারলো এস. আলম গ্রুপ নাকি তিরিশ হাজার কোটি টাকা নিয়ে গিয়েছে। কোন ব্যাংক থেকে নিল? সেটা নাকি ইসলামী ব্যাংক। এস. আলমের এই টাকার পরিমাণ নাকি প্রায় পদ্মা সেতু নির্মাণের খরচের সমান। পদ্মা সেতু চালু হবার পর আমরা দেশবাসী, সরকার এবং আ’লীগের নেতাকর্মী সমর্থক এবং পদ্মাসেতুর উপকারভোগীদের সাথে আনন্দ উল্লাস করেছিলাম। গর্বে দেশবাসীর বুক ভরে গিয়েছিলো। কিন্তু এস. আলম গ্রুপ, পি.কে হালদার ইত্যাদির কারণে কিছুটা হলেও ভাবমূর্তিতে কালিমা লেপন করেছে। শুধু তাই নয়, নিন্দুকেরা নিন্দা করার সুযোগ পেয়েছে। ঐ ব্যাংক লুটেরা গ্রুপগুলোর সাথে সরকারি দলের কোন সম্পর্ক যদি থাকে তাহলে তো কোন কথাই নেই। বিরোধীরা সেটা ফলাও করে প্রচার করবে এটাই তো স্বাভাবিক। ঐ ঋণ খেলাপী গোষ্ঠী নিজের ব্যক্তিগত স্বার্থ তথা অর্থ আত্মসাতের উদ্দেশ্যে বাইরে নৌকার যাত্রী সাজে কিন্তু নৌকা ডুবাতে তারা পিছপা হয় না। জননেত্রী শেখ হাসিনা কখনো কখনো বিশ্বাস করে তাদেরকে রাজনীতির নদীতে হয়তো সাঁতার শিখিয়ে ছিলেন কিন্তু তারা বিশ্বাস ভঙ্গে পটু। বঙ্গবন্ধুর কন্যার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা বিশ্বাস নিয়ে বলতে চাই একটু সাবধানে থাকবেন। আপনার নৌকা ডুবিয়ে দেওয়ার জন্য এমন কিছু লোক আছে যাদেরকে সাঁতারটা আপনিই শিখিয়েছিলেন। যেমনিভাবে বঙ্গবন্ধু সাঁতার শিখিয়েছিলেন বেঈমান মীরজাফর খন্দকার মোস্তাককে।
এদিকে আমাদের ব্যাংকিং ব্যবস্থায় অপ্রিয় হলেও এমনি অবস্থা বিরাজ করছে যে, এখানে অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে- ১০০ টাকার চোরকে আমরা গাছে বেঁধে মারছি আর ১০০ কোটি টাকার চোরকে স্যার ডাকছি। এই এস. আলম গ্রুপ যখন ৩০ হাজার কোটি টাকা ঋণের নামে ব্যাংক থেকে লুট করে নিয়ে যাবার খবর দেশবাসী জানছে তখন পত্র পত্রিকায় খবর আসে ২০/৩০ হাজার টাকা কৃষিঋণের জন্য কৃষককে জেলে যেতে হচ্ছে। অথচ কে না জানে শেখ হাসিনা সরকার সত্যিকারভাবেই কৃষকবান্ধব সরকার। এই কৃষকবান্ধব সরকারের আমলেও কিন্তু সামাজিক মূল্যবাধের ক্ষেত্রে কৃষক সম্প্রদায় তথাকথিত ‘চাষা’ বলেই পরিচিত। তাঁদেরকে ‘স্যার’ বলাতো স্বপ্ন দর্শনের মতোই।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান সাহেবের আমলে এদেশের কৃষকদেরকে ‘জাতীয় বীর’ বলে বলা হতো। কিন্তু সামাজিকভাবে তা গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠেনি। শত কোটি টাকা চুরি করা চোরকে যদি ‘স্যার’ বলা হয় তাহলে ৩০ হাজার কোটি চুরি করা চোরকে কি বলা হবে কত নম্বর ‘স্যার’ বলতে হবে তা কি কল্পনা করা যায়?
এখন প্রশ্ন হলো ব্যাংকের এই লাখ কোটি টাকা খেলাপি হচ্ছে; নিয়ম বহির্ভূতভাবে ঋণ দেয়া হচ্ছে এর জন্য আসলে দায়ী কারা। ব্যাংকের অফিসার, ম্যানেজার, এজিএম, ডিজিএম বা জি.এম.ই বলি তাদের ক্ষমতা তো সীমিত। বিশেষ করে গ্রাহককে ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে। যেকোন ব্যাংকের এমডি, ডাইরেক্টর ইত্যাদি বড় বড় কর্তা ব্যক্তি ছাড়া তো তা কখনো সম্ভব নয়। যেকোন ব্যাংকের যাকে ‘মাথা’ বলা হয় তাদের অগোচরে তো কোন কিছুই করা সম্ভব নয়। কথায় বলে অনেক দামী মাছেরও মাথায় যদি পচন ধরে তখন তো সেই মাছ আর খাওয়ার যোগ্য থাকে না। যে কোন ব্যাংকের ক্ষেত্রেও তো এটাই প্রযোজ্য। মাথা পচে গেলে যেকোন ব্যাংকের অন্যান্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গ পচতে শুরু করবে সেটাই স্বাভাবিক। ‘মাথা’ ঠিক থাকলে হাতের ‘ডান হাত বাম হাত’ এর কুকর্ম করা সম্ভব হবে না। এক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর নৌকার আদর্শে বিশ্বাসী যাত্রীদের প্রত্যাশা ঐ পচা মাথাগুলো যেন কখনো নৌকার ধারে কাছেও ভিড়তে না পারে। কারণ ওরা সাঁতার শিখে ফেলেছে। ওদের কারণে নৌকা ডুবলে তাদের কিছু যায় আসে না। ওরা সাঁতরিয়ে তীরে ঠিকই উঠে যায়। জল ওদের গায়ে লাগে না। তাই নৌকা বাঁচাতে ঐ পচা মাথাগুলোর ব্যাপারে নৌকার কাণ্ডারীকে সাবধান তো হতেই হবে। শুধু সাবধানতাই এখানে যথেষ্ট নয়, ওদের বিরুদ্ধে কঠোর থেকে কঠোরতর হতে হবে। প্রয়োজনে কঠোরতম হলেই জাতি এগিয়ে যাবে। পদ্মাসেতু ‘মাথা চায়’ আর ব্যাংকে টাকা নেই এমন গুজব সৃষ্টিকারীরাও আর হালে পানি পাবে না। তবে সব কথার শেষ কথা হলো- কাণ্ডারী হুশিয়ার। জয় বাংলা।
লেখক : মুক্তিযোদ্ধা, সাবেক ব্যাংকার।