শোকাবহ বুদ্ধিজীবী দিবস
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ ডিসেম্বর ২০২২, ৮:০৪:২০ অপরাহ্ন

আজ ঐতিহাসিক ১৪ ডিসেম্বর; শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। বাঙালির স্বধীনতার ইতিহাসে একটি মর্মবিদারক ঘটনার জন্ম হয় এই দিনে। ১৯৭১ সালে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ জন্মের পূর্ব মুহূর্তে আজকের এই দিনে ঘটে যায় নারকীয় ঘটনা। যা অনেক ক্ষেত্রে স্বাধীনতা যুদ্ধের নয় মাসের মর্মান্তিক হত্যাকান্ডকেও হার মানায়। এই দিনে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় এদেশের বুদ্ধিজীবীদের। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয় লাভের মাত্র দু’দিন আগে এ দেশের প্রথিতযশা অধ্যাপক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, চিকিৎসক, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, সংগঠক তথা বুদ্ধিজীবীদের অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে হত্যা করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এবং তাদের দোসর রাজাকার আলবদর, আল শামস বাহিনী। তাই স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ইতিহাসে এই দিনটি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। যতো দিন বাংলাদেশ থাকবে, যতোদিন বাঙালি জাতি থাকবে, থাকবে লাল সবুজের পতাকা, ততোদিন চিরজাগরুক থাকবে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের চেতনা। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের আত্মত্যাগের মহিমায় ভাস্বর এই দিনটি আমাদের অস্তিত্বে-চেতনায় নাড়া দিয়ে যায় প্রতিনিয়ত। আজকের এই দিনে আমরা শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি জানাচ্ছি গভীর শ্রদ্ধা; তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।
একটি দেশ বা জাতির এগিয়ে যাওয়ার পেছনে বুদ্ধিজীবীদের অবদান গুরুত্বপূর্ণ। বুদ্ধিজীবীরা জাতি ও সমাজকে পথ নির্দেশনা দান করেন। একটি জাতির টিকে থাকার জন্য সমৃদ্ধির জন্য বুদ্ধিজীবীরা তাদের মেধা ও শ্রম বিনিয়োগ করেন। তারা কাজ করেন ‘জাতির মগজ’ হিসেবে। এটা জেনেই একাত্তরে পরাজিত শক্তি এদেশের বুদ্ধিজীবীদের হত্যার নৃশংসতায় মেতে ওঠে। হানাদারদের পরাজয় যখন সুনিশ্চিত, তখনই তারা অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে বাঙালি জাতিকে মুক্ত বিবেক, মেধা ও প্রজ্ঞাশূন্য করার নীলনক্সা বাস্তবায়নে মেতে ওঠে। আজ সেই বীর শহীদদের রক্তে ভেজা ১৪ই ডিসেম্বর। জাতি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের। একই সঙ্গে চরম ঘৃণায় ধিক্কার জানাচ্ছে বাঙালি জাতিসত্ত্বার দুশমন, মানবতার শত্রু, হানাদার, ঘাতক এবং তাদের এদেশীয় দোসর আলবদর, রাজাকার, আলশামস বাহিনীর সদস্য নরপিশাচদের। আমাদের বিজয় অর্জনের সংগ্রামের পরিধি দীর্ঘ। বায়ান্নো থেকে একাত্তর। সুদীর্ঘ পথ পরিক্রমায় এ জাতি পশ্চিমা হানাদারদের কাছ থেকে ছিনিয়ে আনে স্বাধীনতার রক্তলাল সূর্য। স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যূদয়ের পেছনে রয়েছে লাখো বাঙালির আত্মত্যাগ আর সুদীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের ইতিহাস। মুক্তিপাগল জাতি নয় মাসের জীবনপণ যুদ্ধে অর্জন করলো চূড়ান্ত সাফল্য। এলো মহান স্বাধীনতা। রক্তের অক্ষরে রচিত হলো বাঙালির বীরত্বগাঁথার অমলিন ইতিহাস। এই ইতিহাসের পাতার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হচ্ছে ১৪ই ডিসেম্বরের রক্তাক্ত অধ্যায়।
আজ অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে যে, স্বাধীনতার অর্ধ শতাব্দি পরও এখানে গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়নি; শুধু তা-ই নয়, একাত্তরের ঘাতক, বুদ্ধিজীবীদের হত্যাকারী অশুভশক্তির উত্থান হচ্ছে এখনও বিভিন্নভাবে বিভিন্নরূপে। মুক্তবুদ্ধিচর্চার পথ জাগরণের বিবেকী শক্তি এখন সংকুচিত-শংকিত। এই ব্যর্থতা কুরে কুরে খাচ্ছে জাতিকে। তারপরেও আমাদের বসে থাকলে চলবে না। বাঙালি অন্যায় অবিচার মাথা পেতে মেনে নেয়ার জাতি নয়। এটা অতীতে প্রমাণিত হয়েছে বার বার। লাখো শহীদের স্বপ্ন একদিন বাস্তবায়িত হবেই। তার জন্য আমাদের সামনে এগোতে হবে দৃপ্ত পায়ে। আর এই এগিয়ে চলার শক্তি প্রেরণা হচ্ছে একাত্তর। দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে সকল সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে ওঠে দেশপ্রেমে বলীয়ান হয়ে দেশের কল্যাণেই আত্মনিয়োগ করতে হবে সকলকে। প্রতিহত করতে হবে দেশের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীদের। বাঙালিদের বজ্রমুষ্টি হাতে আজ এই শপথটুকুই নিতে হবে। লাখো শহীদের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর জন্য এর চেয়ে ভালো কোনো উপায় নেই।