জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান পদে ফেরা উপলক্ষে সংবর্ধনা
দুঃসময়ে যারা পাশে ছিলেন তাদের ভুলিনি, ভুলব না: দানবীর ড. রাগীব আলী
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ ডিসেম্বর ২০২২, ৫:৪৬:৪৯ অপরাহ্ন
শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নে রাগীব-রাবেয়া দম্পতির নাম
ইতিহাসের পাতা থেকে মুছে ফেলা যাবে না: মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ
স্টাফ রিপোর্টার : সিলেটের প্রথম বেসরকারি মেডিকেল কলেজ জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান পদে ফিরেছেন প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান উপমহাদেশের প্রখ্যাত দানবীর ড. রাগীব আলী। গভর্নিং বডির চেয়ারম্যানের স্বপদে ফেরা উপলক্ষে গতকাল শনিবার প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীর ভালোবাসায় সিক্ত হন তিনি। এ উপলক্ষে আয়োজিত বিশাল সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তাঁকে নিয়ে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
জবাবে উপমহাদেশের প্রখ্যাত দানবীর ড. রাগীব আলী বলেন, ‘ষড়যন্ত্রকারীরা কারাগারে পাঠিয়ে যতই কষ্ট দিক না কেন, রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভালোবাসা সব কষ্ট ভুলিয়ে দিয়েছে। স্বপ্নের এই কলেজটি ছিনিয়ে নেয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, বাইরের (বিদেশের) পরিবেশে বেড়ে উঠা একমাত্র পুত্রকে নিয়ে কারাবরণ করতে হয়েছে, তবুও হাল ছাড়িনি। এই দুঃসময়ে যারা পাশে ছিলেন তাদের ভুলিনি, কখনো ভুলবও না’-যোগ করেন তিনি।
ষড়যন্ত্রকারীদের চক্রান্তে জমি-জমা সংক্রান্ত আইনি জটিলতা সৃষ্টি করে দীর্ঘ প্রায় ৬ বছর নিজের প্রতিষ্ঠিত জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ থেকে কাগজপত্রে দূরে রাখা হয় সিলেট অঞ্চল তথা দেশের বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য শিক্ষা ও সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা দানবীর ড. রাগীব আলীকে। তবে দানবীর ড. রাগীব আলী অনড় ছিলেন তার সিদ্ধান্তে। তিনি মনে করেন, সামগ্রিক অর্থে এই প্রতিষ্ঠানের মালিক এই অঞ্চলের সাধারণ মানুষ। যারা স্বল্প খরচে চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন। দক্ষ চিকিৎসক তৈরিতে দেশের মাটি ছাড়িয়ে বিদেশেও সুনাম কুড়িয়েছে যে কলেজ, সেটি কোন দুর্বৃত্তদের হাতে ছেড়ে দেয়া যায় না।
কলেজের লেকচার গ্যালারিতে আয়োজিত সংবর্ধনা সভায় দানবীর ড. রাগীব আলী বলেন, ‘ষড়যন্ত্রকারীরা একের পর এক চাপ দিয়ে যাচ্ছিলো। কারাগারে রেখে প্রাণে মারার হুমকিও দিয়েছিলো, তারপরও তিনি তাদের কাছে মাথানত করেননি।’ দানবীর ড. রাগীব আলী আরো বলেন, ‘সব সময় মনে হতো আমার সম্পত্তি চলে যাক, কিন্তু এই সাধারণ মানুষের চিকিৎসা সেবার পথ যেন বন্ধ না হয়। তিনি বলেন, আমি কাজের মানুষ, আজীবন কাজ করে যেতে চাই। আজ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সর্বস্তরের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভালোবাসা দেখে মুগ্ধ হয়েছি। এই ভালোবাসা হাসপাতালের উন্নয়নে আরো কাজ করার অনুপ্রেরণা যোগাবে।’
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ নিজের প্রতিষ্ঠিত জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজের গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান পদে ফেরাকে দানবীর ড. রাগীব আলীর বিজয়ের মাসে আরেক বিজয় বলে আখ্যা দেন। তিনি বলেন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে রাগীব-রাবেয়া দম্পতির নাম ইতিহাসের পাতা থেকে মুছে ফেলা যাবে না। দানবীর ড. রাগীব আলী আমাদের সম্পদ। তার প্রতিষ্ঠিত একেকটি প্রতিষ্ঠান মানবসম্পদ তৈরির কারখানা। জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজের দুঃসময়ে মেডিকেল কলেজের পক্ষে তার ভূমিকা সোচ্চার ছিলো বলেও মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন। তিনি দানবীর ড. রাগীব আলীর দীর্ঘায়ু কামনা করেন।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন রাগীব-রাবেয়া ফাউন্ডেশনের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান বনমালী ভৌমিক, জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা: এ. কে. এম. দাউদ, হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা: মোঃ তারেক আজাদ, রাগীব-রাবেয়া ফাউন্ডেশনের ট্রেজারার ও জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজের গভর্নিং বডির সদস্য আব্দুল হাই, জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজের গভর্নিং বডির সদস্য সাদিকা জান্নাত চৌধুরী, দৈনিক সিলেটের ডাক-এর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ও সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য ওয়াহিদুর রহমান ওয়াহিদ। সমগ্র অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ২৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আব্দুর রাজ্জাক আল মাসুম ও নিশাত আনজুম।
রাগীব-রাবেয়া ফাউন্ডেশনের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান বনমালী ভৌমিক বলেন, জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে কেবল দানবীর ড. রাগীব আলীর পরিবার নয়, মেডিকেল কলেজটিও ঝুঁকির মধ্যে পড়েছিলো। এই দুঃসময়ে যারা সঠিক নেতৃত্ব দিয়ে কলেজটি রক্ষা করেছেন রাগীব-রাবেয়া ফাউন্ডেশন কখনো তাদের অবদান ভুলবে না।
এদিকে, অনুষ্ঠানে সবচেয়ে আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয় জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজের গভর্নিং বডির সদস্য ও ড. রাগীব আলীর পুত্রবধূ সাদিকা জান্নাত চৌধুরীর বক্তব্যের মুহূর্তে। তিনি তার দীর্ঘ বক্তব্যে দানবীর ড. রাগীব আলীর কাছ থেকে তার স্বপ্নের মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল ছিনিয়ে নেয়ার নানা ষড়যন্ত্রের কথা তুলে ধরেন। সাদিকা জান্নাত বলেন, ‘ষড়যন্ত্রকারীরা দানবীর রাগীব আলীর কাছ থেকে পুরো মেডিকেল লিখে নিতে চেয়েছিলো, এক পর্যায়ে নাম পরিবর্তন কাগজে সই নিয়ে যেতে চেয়েছিলো, কিন্তু তিনি তাতে রাজি হননি। চরম দুঃসময়েও দানবীর রাগীব আলী তার মনোবল শক্ত রেখেছিলেন বলেই ষড়যন্ত্রকারীরা সফল হতে পারেনি। সাদিকা জান্নাত বলেন, জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজের গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান হিসেবে মনোনীত হওয়ায় কলেজের সর্বস্তরের শিক্ষক-কর্মচারীদের সংবর্ধনা দেয়ায় তিনি পরিবারের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক এ. কে. এম. দাউদ বলেন, ‘একজন রাগীব আলী ছিলেন বলেই জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ আজকের এই পর্যায়ে। রাগীব আলী আমৃত্যু-এই কলেজের মাথার উপর ছায়া হয়ে থাকুন।’
জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা: মোঃ তারেক আজাদ বলেন, জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এই অঞ্চলের মানুষের পাশে আছে। যারা পুনরায় সম্মান দিয়ে দানবীর ড. রাগীব আলীকে স্বপদে বসার সুযোগ করে দিয়েছেন; তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। দানবীর ড. রাগীব আলীর অবদান কেউ ভুলবে না।
দৈনিক সিলেটের ডাক এর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ওয়াহিদুর রহমান ওয়াহিদ বলেন, জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিদেশেও সুনাম কুড়িয়েছে। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে এই কলেজের শিক্ষার্থীরা কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখছে। কিন্তু, একটি দুষ্কৃতকারী চক্র ষড়যন্ত্র করে স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানটিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গিয়েছিলো। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সেটি হতে দেননি। দানবীর ড. রাগীব আলীর শক্ত মনোবল তাকে সম্মানজনক স্থানে অধিষ্ঠিত করেছে। তিনি বলেন, আজকের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান প্রমাণ করেছে দানবীর ড. রাগীব আলী এই কলেজ হাসপাতালের আপামর শিক্ষক-শিক্ষার্থী তথা কর্মকর্তা-কর্মচারীর কতটা মনের গভীরে রয়েছেন।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা: আবেদ হোসেন বলেন, এই মেডিকেল কলেজ ধ্বংসের নীল নকশা এঁকে ফেলেছিলো ষড়যন্ত্রকারীরা। কোথায় শিক্ষার্থী ও রোগী স্থানান্তর করবে-সব আয়োজন সম্পন্ন করেছিলো তারা। আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কৃপায় তারা সফল হতে পারেনি। অধ্যক্ষ তার নিজের কথা তুলে ধরে বলেন, একটি দুঃসময়ে তিনি মেডিকেল কলেজের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। যখন অনেকেই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন। চরম দুঃসময়ে থেকেও একমাত্র দানবীর ড. রাগীব আলী সঠিক দিকনির্দেশনা দিয়ে গিয়েছিলেন। যার জন্য কলেজটি এতো ষড়যন্ত্রের পরও স্বমহিমায় মর্যাদায় মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
আবেদ হোসেন আরো বলেন, অনিশ্চিত পথচলা দেখেও এই কলেজ ও হাসপাতালের একজন শিক্ষক, কর্মকর্তা কর্মচারী আমাদের ছেড়ে যাননি। সবাই দানবীর ড. রাগীব আলীর প্রতি শ্রদ্ধা ও সাধারণ শিক্ষার্থী ও রোগীদের প্রতি ভালোবাসায় আটকা পড়েছিলো। তিনি এই মেডিকেল কলেজের দুঃসময়ে যারা পাশে ছিলেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
অনুষ্ঠানে গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান পদে মনোনীত হওয়ায় দানবীর ড. রাগীব আলীকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান, জালালাবাদ মেডিকেল কলেজের পক্ষে অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা: আবেদ হোসেন, হাসপাতালের পক্ষে পরিচালক অধ্যাপক ডা: তারেক আজাদ, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ ও তার স্ত্রী ফারজানা মিসবাহ, রাগীব-রাবেয়া ফাউন্ডেশনের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান বনমালী ভৌমিক, লিডিং ইউনিভার্সিটির ডেপুটি রেজিস্ট্রার লুৎফুর রহমান, দৈনিক সিলেটের ডাক-এর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ওয়াহিদুর রহমান ওয়াহিদ, রাগীব রাবেয়া স্পোর্টস একাডেমির পরিচালক মো: জমিরুল হক তালুকদার, মেডিকেল কলেজের এনাটমি বিভাগ, ফিজিওলজি বিভাগ, বায়োকেমেস্ট্রি বিভাগ, প্যাথলজি বিভাগ, মাইক্রোবায়োলজি বিভাগ, ফার্মাকোলজি বিভাগ, কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগ, ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগ, সার্জারি বিভাগ, মেডিসিন বিভাগ, অবস এন্ড গাইনি বিভাগ, চক্ষু বিভাগ, নাক কান গলা বিভাগ, সন্ধানী, অফিস স্টাফ, ইঞ্জিনিয়ারিং সেকশন, সিনিয়র স্টাফ নার্সসহ সর্বস্তরের কর্মচারীরা দানবীর ড. রাগীব আলীকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। এর আগে একটি বড় কেক কাটা হয়।